পাবনার ঈশ্বরদীতে শিক্ষা অফিসে কাজ করেন শিক্ষক: ১০ মাস অনুপস্থিত!
পাবনার ঈশ্বরদীতে গত ১০ মাস ধরে বিদ্যালয়ে পাঠদান না করিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে (টিইও) অফিসে কাজ করছেন সহকারী শিক্ষক মোঃ রেজাউল হক। পাঠদান ব্যহৃত হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বারবার বলেও শিক্ষককে বিদ্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ। তবে বিষয়টি নিয়ে নিয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা শিক্ষা অফিসরা (টিইও) মোঃ আসাদুজ্জামান বলেছেন, আমার শিক্ষককে দিয়ে কি করাবো সেটা আমার বিষয়। আর পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) সিদ্দীক মোঃ ইউসুফ রেজা বলেছেন, শিক্ষককে দিয়ে টিইও অফিসে কাজ করানো অবৈধ। এটা কোনভাবেই করানো যাবে না।
এমনই চিত্র পাবনা ঈশ্বরদীর সলিমপুর ইউনিয়নের ৪২ নং মিরকামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। গত (বুধবার) দুপুরে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সলিমপুর ইউনিয়নের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ২৭৮ জন। শিক্ষক ৯ জন। শিক্ষকদের মধ্যে রেজাউল হক নামের এক সহকারী শিক্ষক বিগত ১০ মাস ধরে বিদ্যালয়ে পাঠদান করান না। তিনি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিইও) অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। আর সপ্তাহে এক দুইবার এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে যান। এই কারণে পাঠদান প্রদানে অন্যান্য শিক্ষকগণ হাফিয়ে উঠেছেন। শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ্ট দেখা দিয়েছে।
অপর শিক্ষকগণ বলেন, শিক্ষক রেজাউল হক উপজেলায় শিক্ষা অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। একজন শিক্ষক হয়ে অফিসে ক্লার্কের কাজ করেন। তিনি কাজ করে শিক্ষকদের নিকট থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহন করেন। এই কারণে তিনি এখন অফিসের ক্লার্ক হিসেবে কাজ করতেই বেশি পছন্দ করছেন। উপজেলার সকল শিক্ষকদের মধ্যেই অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। চলছে তীব্র সমালোচনা। তবে টিইও’র বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করছেন না বলে দাবী করেন এসব শিক্ষকগণ।
বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থী মায়েশা, মেঘলা, তাসনুভা ও তিথিসহ অন্তত ৩৫জন শিক্ষার্থী বলেন, রেজাউল হক স্যার মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ে আসেন। কিন্তু তিনি ক্লাস নেন না। চলে যান।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ বলেন, ৯ জন শিক্ষকের মধ্যে একজন ক্লাস না নেন না। তার ক্লাসগুলো তাদের নিতে হয়। এতে তারা রোবট হয়ে পড়েছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, আমরা টিইও স্যারের অধীনে চাকরি করি। তিনি একজন শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে নিয়ে গিয়ে অফিসিয়াল কাজ করালে আমার কিছু করার নেই। তবে শিক্ষক রেজাউল হকের অনুপস্থিতিতে পাঠদানের কোন অসুবিধা হচ্ছে না। তিনি মাঝে মধ্যে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে উপজেলা শিক্ষা অফিসে চলে যান।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ রিয়াজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষককে দিয়ে শিক্ষা অফিসে ক্লার্কেও কাজ করানোটা খারাপ। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ব্যবস্থাপনা খারাপ বলেই এই ধরণের কাজ করানো হচ্ছে। বিষয়টি খুবই লজ্জার ও দুঃখজনক। তাই বিষয়টি নিয়ে টিইও সাহেবকে কিছু বলেনি।
সহকারী শিক্ষক মোঃ রেজাউল হক বলেন, আমার কোন বক্তব্য নেই। টিইও স্যার যেটা বলেছেন সেটাই ঠিক।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিইও) মোঃ জহুরুল ইসলাম বলেন, আমি বিগত ৩ মাস ধরে বিদ্যালয়টিতে পরিদর্শন করে শিক্ষক রেজাউল হককে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত পেয়েছি। বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তা (টিইও) স্যারকে জানানো হয়েছে। এখন সঙ্গে সহকারী শিক্ষক রেজাউল হককে বিদ্যালয়ে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও) মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, শিক্ষকরা আমার অধীনে চাকরি করে। তাদের দিয়ে আমি কি কাজ করাবো সেটা আমার বিষয়। শিক্ষককে দিয়ে নিজের অফিসে ক্লার্কেও কাজ করানোটা চাকরীবিধিতে আছে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, নেই। মৌখিক নির্দেশে তাকে কম্পিউটারে কিছু কাজ করানোর জন্য আনা হয়েছে। কারণ তিনি কম্পিউটারের কাজ ভাল বোঝেন। তবে কাজ করে দিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের নিকট থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।
পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) সিদ্দীক মোঃ ইউসুফ রেজা বলেন, শিক্ষককে দিয়ে টিইও অফিসে কাজ করানোর কোন নিয়ম বা সুযোগ নেই। বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি আমি দেখছি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন