পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিতের সিদ্ধান্তে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের উদ্বেগ

খাগড়াছড়ি রাংগামাটি বান্দরবান পার্বত্য জেলার পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিতের সিদ্ধান্তে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসিত হওয়া বাঙালিদের ছাত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ(পিসিসিপি) এর হরতালের হুমকিতে ১৯ অক্টোবর ২০২৫ রাঙ্গামাটিতে আহুত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন।
গত শুক্রবার (১৭ই অক্টোবর) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের প্রচার বিভাগের সদস্য মুর্শিদা আক্তার ডেইজী স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ জানান সংগঠনটির দুই যুগ্ম আহ্বায়ক মানবাধিকার কর্মী জাকির হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।
নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন, ২০২৪সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তরবর্তীকালীন সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনসহ বিভিন্ন পক্ষের জোর দাবির প্রেক্ষিতে সরকার গত ১২ই জানুয়ারি ২০২৫পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি গঠন করে।
এরপর গত ১৯শে জুলাই ২০২৫এই কমিটির সভা রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত হয় এবং এ সভায় পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানানো হয়-যা আমাদেরকে আশান্বিত করেছে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য গঠিত পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কার্যকর করা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১৯শে অক্টোবর ২০২৫, এই কমিশনের একটি সভা আহ্বানের পরপরই আমরা লক্ষ্য করলাম একটি পক্ষ এই সভা ভন্ডুল করতে এবং চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করার জন্য সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।
বাঙালিদের ছাত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ এর ডাকা হরতালের হুমকিতে গতকাল বৃহস্পতিবার(১৬ই অক্টোবর) পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিষ্পত্তি বিরোধ কমিশন সচিব(যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সভাটি স্থগিত করা হয়। এই রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কার্যালয়ে স্থাপিত ভূমি কমিশনের অফিসে এই সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
ভূমি কমিশনের সভা স্থগিত করায় আমরা গভীর উদ্বিগ্ন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এহেন অনভিপ্রেত হুশিয়ারিতে যদি বারংবার সভা ডেকে স্থগিত করা হয় তবে তাতে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া হুমকির মুখে পড়বে। পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য রাষ্ট্রীয় সমস্ত শক্তিকে সংহত করে এই চুক্তি বাস্তবায়নে দ্রæুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য আমরা পুনর্বার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে সকল হুশিয়ারী উপেক্ষা করে দ্রæুততম সময়ের মধ্যে ভূমি কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত করার জোর দাবি রাখছি।
এইদিকে সেনামদদপুষ্ট সেটেলার বাঙালিদের ছাত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ(পিসিসিপি) এর হরতালের হুমকিতে ১৯শে অক্টোবর ২০২৫ রাঙ্গামাটিতে আহুত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার(১৬ই অক্টোবর) পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিষ্পত্তি বিরোধ কমিশন সচিব(যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সভাটি স্থগিত করা হয়। পার্বত্য জেলা পরিষদ কার্যালয়ে স্থাপিত ভূমি কমিশনের অফিসে এই সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার(১৬ই অক্টোবর) ৮দফা দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পিসিসিপি। এই সময় পিসিসিপি নেতারা বলেন, পিসিসিপি আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না করে ভূমি কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হলে তা ভূমি কমিশনের সভা কঠোরভাবে প্রতিহিত করা হবে। বাহ্যত সেটেলারদের সাম্প্রদায়িক সংগঠন পিসিসিপির এই হুঁশিয়ারিতেই ভূমি কমিশন উক্ত সভা স্থগিত করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
পার্বত্য ভূমি কমিশন কর্তৃক সভা আহ্বান করা হলে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও উগ্র জাতীয়তাবাদী সেটেলার সংগঠন কর্তৃক প্রতিহতের হুমকি দেয়া এবারে প্রথম নয়। এর আগেও সেটেলারদের সাম্প্রদায়িক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের হুমকিতে ভূমি কমিশনের সভা তিনবার স্থগিত করতে হযেছে।
২০১৯সালের ডিসেম্বর গঠিত হওয়ার সাথে সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ পার্বত্য ভূমি কমিশনের ২৩শে ডিসেম্বর ২০১৯তারিখে বান্দরবানে আহুত বৈঠকের বিরুদ্ধে সড়ক অবরোধ ডাক দেয়। ফলে ভূমি কমিশনের বৈঠক যথাযথভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।
এরপর ২০২০ সালের ফেব্রæুয়ারিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের পূর্ব-নির্ধারিত বৈঠক ভন্ডুল করার লক্ষ্যে রাঙ্গামাটিতে আহুত ভূমি কমিশনের সভা ঘেরাও করে এই পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। এ সময়ে নাগরিক পরিষদের প্রতিবাদকারীদের প্রতিরোধ না করে আইন-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনী তাদের প্রতি প্রকারান্তরে সমর্থন ও মদদ দেয়।
এরপর পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন ৭ই সেপ্টেম্বর ২০২২তারিখে বৈঠক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিলে উক্ত সভা প্রতিহত করাসহ ৭দফা দাবিতে ৬ই সেপ্টেম্বর(মঙ্গলবার) সকাল ৬টা থেকে ৭ই সেপ্টেম্বর(বুধবার) দুপুর ২টা পর্যন্ত রাঙ্গামাটি শহর এলাকায় টানা ৩২ঘন্টা হরতালের ডাক দেয় সেটেলারদের এই সন্ত্রাসী সংগঠন। ফলে ভূমি কমিশনের উক্ত বৈঠকও স্থগিত করা হয়।
তিন পার্বত্য জেলা গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হল। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রাম উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকামার পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান ভূমি সমস্যা সকলকে সাথে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বলা হলেও ১৯অক্টোবরের গুরুত্বপুর্ন সভাটি ভুন্ডল হয়ে যায়। সভাটি কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হবে তা জানানো হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার(১৬ই অক্টোবর) পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিষ্পত্তি বিরোধ কমিশন সচিবের সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। পার্বত্য জেলা পরিষদ কার্যালয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো।
সভা স্থগিতের বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখা না দিলেও ধারণা করা হচ্ছে সেটেলার বাংগালীদের সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের হুঁশিয়ারিতেই সভা স্থগিত করেছে ভূমি বিরোধ কমিশন।
উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার (১৬ই অক্টোবর) ৮দফা দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ। এই সময় তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের (পিসিসিপি) আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না করে ভূমি কমিশনের বৈঠক করার চেষ্টা করা হলে তা রাঙামাটির শান্তিপ্রিয় জনতাকে নিয়ে কঠোর ভাবে প্রতিহিত করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন




















