৩০ দেশ পেরিয়ে পায়ে হেঁটে হজে গিয়েছিলেন মহিউদ্দিন

দিনাজপুর রামসাগর জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করে রাস্তা দিয়ে পশ্চিম দিকে গিয়ে বামে ঘুরে কিছুদুর যেতেই চোখে পড়বে রামসাগরের পাষাণ বাঁধা ঘাট আর পশ্চিম দিকে দেখা যাবে একটি মসজিদ। সেখানেই চোখে পড়বে অতিকায় বৃদ্ধ একজন মানুষ। যিনি রামসাগরে আগত সকল পর্যটকদেরকে আহবান যানাচ্ছেন রামসাগর দীঘিপাড়া হাফেজিয়া ক্বারিয়ানা মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করার জন্য। এই মানুষটি বাংলাদেশ থেকে পাঁয় হেঁটে সৌদি আরব গিয়ে পবিত্র হজ পালন করেছেন ।
তিনি হচ্ছেন দিনাজপুর সদর উপজেলার রামসাগর দিঘীপাড়া গ্রামের মৃত ইজার পন্ডিত ও মমিরন নেছার ছেলে জাতীয় উদ্যানের বায়তুল আকসা জামে মসজিদের সাবেক ইমাম হাজি মোঃ মহিউদ্দিন।
পায়ে হেঁটে হজ করতে যেতে তার সময় লেগেছিলো আঠারো মাস। এ আঠারো মাসে তিনি পাড়ি দিয়েছেন কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ। এ সময় তিনি সফর করেছেন ৩০টি দেশ। যে দেশ গুলি তিনি সফর করেছেন সে দেশ গুলির নাম এখনও মুখস্ত বলতে পারেন।
১৯১৩ সালে জন্ম নেওয়া এই অদম্য মানুষটি বয়স এখন ১০৬। হাজি মহিউদ্দিন দীর্ঘদিন রামসাগরে অবস্থিত বায়তুল আকসা মসজিদের ইমাম ছিলেন।
বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) বাদ আছর কথা হয় হাজি মোঃ মহিউদ্দিনের সঙ্গে পায়ে হেঁটে হজপালন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৬৮ সালে হজ করার উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে দিনাজপুর থেকে রওনা দেন৷দিনাজপুর থেকে রংপুর হয়ে প্রথমে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে যান। সেখানে গিয়ে পায়ে হেঁটে হজ পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে, তৎকালীন কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা আলী আকবর পায়ে হেঁটে যেতে ইচ্ছুক অন্য এগারো জন হাজীর সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন। শুরু হয় বারো জনের হজযাত্রা। চট্টগ্রাম দিয়ে ভারত হয়ে পাকিস্তানের করাচি মক্কি মসজিদে গিয়ে অবস্থান করে সৌদি আরবের ভিসার জন্য আবেদন করেন। আট দিন পর সৌদি ভিসা পান। পাসপোর্ট ও ভিসা করতে খরচ হয় ১ হজার ২০০ টাকা। ভিসা পেয়ে পাকিস্তানের নোকঠি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইরানের তেহরান হয়ে ইরাকের বাগদাদ ও কারবালা দিয়ে মিসর পাড়ি দিয়ে সৌদি আরব পৌঁছান। পথে ফেরাউনের লাশ দেখার ইচ্ছাও পূরণ হয় তাদের।
সৌদি আরবে গিয়ে হজ পালন শেষে আল্লাহর রাস্তার ধুলো পায়ে লাগিয়ে হেঁটে হেঁটেই ফিরে আসেন নিজ পরিবারের কাছে। এ সময় তিনি ৩০টি দেশ পাড়ি দেন।
এমন কষ্ট করে হজ পালন প্রসঙ্গে তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র স্থান থেকে ঘুরে আসার অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যাবেনা। তবে নিজেকে ধন্য মনে করি । কেমন কষ্ট হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি কোনো কষ্ট করেছেন বলে মনে করেন না। তিনি বলেন কষ্ট করেছেন আমার সহধর্মিনি আবেদা বেগম। অভাব অনটনের মধ্যে আমার ইচ্ছার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আমাকে উৎসাহীত করেছেন। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি বেশ ভাল আছেন বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন চার মেয়ে দুই ছেলেন সবার বিয়ে হয়ে গেছে। অভাব বলে কিছু নেই।
হাজী মোঃ মহিউদ্দিন বয়সের কারণে মসজিদের ইমামতি ছেড়ে দিয়েছেন। মেয়েদের সহযোগীতায় বেশ চলে যায় তার সংসার। সময় কাঁটে রামসাগর দীঘিপাড়া হাফেজিয়া ক্বারিয়ানা মাদ্রাসা ও এতিমখানার জন্য মানুষের কাছে সহায়তা চেয়ে।
হজ পালন করতে সে সময় কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাসপোর্ট ও ভিসা করতে খরচ হয় ১ হজার ২০০ টাকা আর ১ হাজার ৮০০ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে রওয়ানা দেন। কিন্তু পথে ১২ জনের হাজির দল দেখে যেখানে কেতে গেছেন, কেউ টাকা নেননি। ফিরে আসার সময়ও একই অবস্থা হয়। এ কারণে কোন টাকা খরচ হয়নি । পুরো টাকাই তার ফেরত এসেছিল।
বয়সের কারণে মুড়িয়ে যাওয়া হাজি মোঃ মহিউদ্দিনের দৃষ্টি শক্তি ও শ্রবণ শক্তি কিছুটা কমে গেছে। লাঠি ছাড়া ঠিকমত হাঁটতে পারেননা। কিন্তু সে সময়ের কোন স্মৃতিই তিনি ভূলে যাননি। কেউ জিজ্ঞাসা করতেই মুখ থেকে ঝড়তে থাকে কথার ফুলঝুরি। সকলের কাছে বলতে চান সেই সব দিনের কথা। সর্বপরি তিনি সবাইকে একবার হলেও আল্লাহর ঘর তওয়া করার আহবান যানান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন




















