পুঁটির চেয়েও সস্তা ইলিশ!
যেন চারদিকে ইলিশ উৎসব চলছে। পাড়ায় পাড়ায় সাইনবোর্ড লাগিয়ে উৎসবের কারণ একটাই। বাজারে পুঁটির চেয়েও ইলিশ মাছ সস্তা যে!
আর সে জন্যই লম্বা লাইন দিয়ে বাজারে বাঙালি গৃহকর্তাদের এমন ভিড়। ইলিশ চাই তাদের। এখনই, ইলিশ দিয়ে হেঁসেলে প্রতিদিন ম্যানুর বদল চান তারা।
কলকাতার অদূরে সোদপুরের নাটাগড় বাজার। রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সপ্তাহের ছুটির দিন। ওই বাজারে ইলিশ মিলছে দেড়শো রুপি কেজিতে। ওজন একটু বেশি হলে অবশ্য বেড়ে দুইশো থেকে আড়াইশো রুপি পর্যন্ত উঠছে।
মাছ বিক্রেতাদের সামনে ঝোলানো বাল্বের আলো যেন রুপলি রঙের ইলিশের শরীরে প্রতিবিম্ব হয়ে ফিরছে ক্রেতাদের চোখে-মুখে। ঝিকমিক করছে চারদিক।
বাজারে মাছ বিক্রেতাদের স্লোগান দিয়ে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘দেড়শোয় ইলিশ খান। ইলিশ মাছ দেড়শোয়। ইলিশ খান, সস্তায় ইলিশ।’
মাছ পাত্রে অসহায় চোখ বুঝে পড়ে রয়েছে কাতলা, বোয়াল, রুই, ভেটকি, চিংড়ি, পুঁটিসহ নানান রকমের মাছ।
শুধু শহরতলিই নয়, খোদ কলকাতার মানিকতলা বাজার, দমদম নাগেরবাজার, বেহালা চৌরাস্তার বাজার, নিউমার্কেট বাজার, পার্ক সার্কাস বাজার, খিদিরপুর, লেকমার্কেট, যাদপুর এইট-বি বাজার, বাজারগুলোয় ইলিশের গড় দাম পাওয়া যাচ্ছে ‘দেড়শো থেকে তিনশো’।
কেন এতো সস্তায় বিকাচ্ছে বাঙালির প্রিয় জল-শস্য? উত্তর দিলেন নাটাগড়ের মাছ বিক্রেতার রঞ্জিত মন্ডল। তিনি বলেন, নামখানা, বকখালি, রায়দীঘি, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, মেদেনীপুর ও দিঘায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে রোজ।
টনকে টন ইলিশ ছড়িয়ে পড়ছে গোটা রাজ্যে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও যে ইলিশের দাম ছিল পাঁচশো থেকে সাতশো রুপি সেই ইলিশ এখন মাত্র দেড়শো থেকে তিনশোয় বিক্রি হচ্ছে।
সোদপুরের বাসিন্দা অশেষ সাহা বলেন, গত তিন দিন ধরেই রোজই বাজারে আসছি, প্রথম দিন ইলিশ পাঁতুরি, দ্বিতীয় দিন দই ইলিশ এবং আজ (রোববার) শর্ষে ইলিশ চলবে। এতো সস্তায় ইলিশ খেতে পারছি সেটি ভাবলে অবাক লাগছে।
গত এক দশকেও এতো সস্তায় ইলিশ বিক্রি হয়নি বলে স্বীকার করলেন রাজ্যের অন্যতম ইলিশ ব্যবসায়ী অতুল চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ইলিশ মাছকে বংশ বিস্তার করতে দিলে আগামীতে রাজ্যের মানুষ আরও বেশি বেশি ইলিশ মাছ খেতে পারবেন।
অতুল চন্দ্র দাস আরও বলেন, পুঁটি মাছ যেখানে বিক্রি হচ্ছে চারশো থেকে পাঁচশো রুপিতে সেখানে ইলিশ পাচ্ছেন মাত্র দেড় থেকে তিনশোয়, এটি নজিরবিহীন বটে!
দিঘা থেকে ১৭০-১৮০ কিলোটিমার দূরে সমুদ্রে একটি জায়গায় ইলিশের চারণ ভূমির সন্ধান মিলেছে বলে দাবি করছেন পশ্চিমবঙ্গের ইলিশ ধরেন এমন জেলেরা।
রাজ্যের ইউনাইটেড ফিশারম্যান অ্যাসোশিয়েনের চেয়ারম্যান জয়কৃষ্ণ হালদার জানান, আগস্টে হঠাৎ ইলিশের যোগান বেড়ে গেছে। পূর্ব দিকের ঝড়ের কারণে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে ব্যাপক সংখ্যক ইলিশ এদিকটায় আসছে এবং ধরা পড়ছে। যদি আগামী অমাবশ্যার কটাল পর্যন্ত এই অবস্থা চলে তবে ইলিশ আরও উঠবে, তাতে রাজ্যের মানুষ আরও সস্তায় ইলিশ খেতে পারবেন।
দীঘার মাছ ব্যবসায়ী শুভাশিস সুইম সাংবাদিকদের জানান, দীঘা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে পূর্ব বালেশ্বরের সূর্বণরেখা মোহনায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে আড়াই থেকে পাঁচশো গ্রামের ইলিশ। আর সেই ইলিশের এতো স্বাদ; ভাবা যাচ্ছে না।
পশ্চিমবঙ্গের ২৩ রাজ্যের প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ ইলিশের মৌসুমে বাংলাদেশি ইলিশের দিকেই তাকিয়ে থাকতেন। এখনও তাদের সেই পিপাসা রয়েছে। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসা বন্ধ হওয়ার কারণে পদ্মার ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত রাজ্যের মানুষ।
পদ্মার ইলিশ খেতে না পারলেও এবার কিন্তু নিজেদের রাজ্যের ইলিশ পাতে পেয়ে স্বাভাবিকভাবে অনেক খুশি পশ্চিমবঙ্গের রসনা প্রিয় বাঙালি। যারা নিজেরাও ভাবেন, ইলিশ আর বাঙালি দুটিই তাদের কাছে সমার্থক শব্দ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন