পুরুষ তুমি অন্তরে বাহিরে || নাজমীন মর্তুজা
মনে আছে ছোট বেলায় যখন পড়ার যত ছেলে মেয়ে জুটে হাডুডু বা চোর পুলিশ, গোল্লাছুট খেলতে মেতে উঠতাম, তখন সমবয়সী ছেলেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমার মন খুব খারাপ লাগতো। ভাবতাম আহা! বেচারিদের অনন্দের দিন শেষ হয়ে গেল। বড় হয়ে তো চাকরী করতেই হবে , ভাল লাগুক চাই না লাগুক। আর আমাদের বেশ মজা, ইচ্ছে হলে চাকরী বাকরী করবো ইচ্ছে হলে ঘর – সংসার করবো।
বড় হয়ে অবশ্য এ ধারণা কিছুটা পাল্টালো, তবে পুরোটা নয় । দেখলাম মেয়েদের যতটা স্বাধীনতা আছে বলে ভাবতাম, আসলে তার এক শতাংশ নেই। ছোট বেলায় বর বউ বা রান্নাবাটি খেলার সঙ্গে সত্যি কারের ঘর কন্নার অনেক তফাত। তবে পুরুষ দের যতটা স্বাধীন বলে প্রচার করা হয় ততটা স্বাধীন কিন্তু তারা আদতে নয়। বহুযুগ ধরে গড়ে ওঠা একটা ভাবমূর্তির মধ্যে তারাও বন্দী, মেয়েদের মত। পুরুষ মানে তাকে কৃতী হতে হবে, হতে হবে বলশালী ও নির্ভিক। আর মেয়েরা? একেবারে অসহায়, একটু ভিতু খানিকটা দূর্বল তবেই না মেয়ে। মেয়েদের যেখানে চোখের জল ফেলার অবাধ স্বাধীনতা, পুরুষের সেখানে দাঁতে দাঁত চেপে সমস্ত যন্ত্রনা নীরবে সহ্য করা চাই। তাদের কঁাদতে নেই। ভূতের ভয় পেতে নেই, পাউডার মাখতে নেই, জোড়ে গাড়ি চালাতে আছে, কথায় কথায় আস্তিন গুটিয়ে লড়ে যেতে আছে। সিগারেট খেতে তো আছেই, আসলে পুরুষ নামক জীবটি – যাকে নিয়ে আমাদের একদিকে ঘর করতে হয় আবার অন্যদিকে সহকর্মী হিসেবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। আপাত দৃষ্টাতে এই উন্নত স্বাস্হ্য সম্মত, অতীব বলশালী, নির্ভিক প্রাণীটি কি এবং কে? দেহ মনে স্বভাবে, মানসিকতায় সে কেমন? তার কত ভাগ পুরুষ কত ভাগ মেয়ে? কি কি উপাদানে সে গঠিত? কতটা আলাদা সে তার অর্ধাঙ্গিনী নারীর চেয়ে। এই জীবটিকে আবেগ বা আশ্লেষের মাইক্রোস্কোপের তলায় ফেলে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তার চুল চেরা বিচার আমরা কি করি কখনো? না, তাকে আবিষ্কার করতে তাকে বুঝতে, তার কাছে পৌঁছুতে তাকে ভালোবাসতে ক জনেই বা মনোযোগী? এ যুগের বেশীর ভাগ নারী পুরুষের মধ্যে কেন জানি না গড়ে উঠেছে বৈরীভাব। অনেক অধুনিকাই “ফেমিজম’ এর আধিক্যে বিভ্রান্ত হয়ে ধরে নিয়েছেন যে পুরুষ মাত্রই অত্যাচারী। আবার পুরুষদের মনেও জন্মেছে নব যুগের ব্যক্তিত্ব সম্পন্না নারীর সম্পর্কে একটা ভয়, একটা সন্দেহ একটা অবিশ্বাস। পরস্পর কে চেনার সময় আমাদের কই! যদি পরস্পর কে চেনা যায় তবে নারী পুরুষ হতে পারে একে অপরের পরিপূরক।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন