প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন তারকারা
রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার ঘটনায় যখন ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন সাধারণ মানুষ, রাজপথ উত্তাল শিক্ষার্থীদের স্লোগানে। তখন নড়েচড়ে বসেছেন তারকারাও। মৃত্যু, নিরাপত্তাহীন সড়ক ও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার খবরে টনক নড়ে তাদেরও।
বর্তমান সময়ের নির্মম ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন তারা। তারকাদের মধ্যে কেউ কেউ ফেসবুক লাইভ ভিডিওতে এসে নিজেদের মতামতও প্রকাশ করছেন। অনেকেই আবার ফেসবুক স্ট্যাটাস কিংবা পোস্টের মাধ্যমে নিজেদের মতামত জানাচ্ছেন। তাদের সেই সব পোস্টের কিছু অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হল।
চলচ্চিত্র অভিনেতা ওমর সানি ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় তার এক পোস্টে লিখেন, ‘দয়া করে বাচ্চাদের গায়ে হাত দেবেন না। তারা কোনো আসনের নমিনেশন পাবার জন্য পথে নামে নাই, তাদের দাবি কেবল পথের নিরাপত্তা। এ দেশের পরবর্তী কর্ণধার এই বাচ্চারাই। এখনো অনেক বাচ্চা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা নড়ছে। বাচ্চাদের মাথায় লাঠির আঘাত নয়, ভরসার হাত রাখুন। মা-বাবাদের পথে নামতে বাধ্য করবেন না দয়া করে। ওরা আমাদের সন্তান। নাড়ি ছেঁড়া ধন! জারজ নয়!’
অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন ৩০ জুলাই সন্ধ্যায় তার এক পোস্টে লিখেন, ‘আমার মাঝে মাঝে মনে হয় বাংলাদেশের সচেতন মানুষগুলোর সবাইকে নিয়ে শক্তভাবে হাতে হাত মুঠোবন্দী করে দাঁড়িয়ে পড়ি রাজপথের বাসগুলোর সামনে। দ্রুতগতিতে বাসগুলো পার হয়ে যাক আমাদের রক্তাক্ত করে। কারণ রক্তাক্ত তো হচ্ছিই প্রতিনিয়ত ভেতরে-বাইরে।’
অভিনেতা আদনান ফারুক হিল্লোল ৩০ জুলাই বাংলাদেশের একটি পাবলিক বাসের ছবি পোস্ট করে তার ক্যাপশনে লিখেন, ‘এই হচ্ছে রাজধানী ঢাকার সিটি সার্ভিসের চেহারা। বিদেশী বন্ধুদের সামনে লজ্জায় মাথা নুয়ে যায় আমাদের। রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধন চলছে সমানে, এই সুন্দর রাস্তায় কি চলবে সেটা কখনো ভেবে দেখছেন? আর এইগুলোর ড্রাইভার-হেলপারগুলোতো চিড়িয়াখানায় রাখার মতো জিনিস এক একটা।’
অভিনেত্রী বন্যা মির্জা ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় তার এক পোস্টে লিখেন, ’কাল ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যামে থেমে পড়েছিল ঢাকা। তবু পথচলতি মানুষেরা কেউ বিরক্ত হননি একটুও। যেন বা আজকের ট্রাফিক জ্যাম ও কয়েক ঘণ্টা থেমে থাকা ঢাকা নগরী আমাদের জন্য খুব জরুরি ছিল।’
অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা ৩০ জুলাই তার পোস্টে লিখেন, ‘গতকাল থেকে ভীষণ এলোমেলো হয়ে আছে মন। ছোট ছোট ঐ ছেলে মেয়েদের কথা মাথা থেকে সরাতে পারছি না। আমাদের সোজা কথা, রাজপথ নিরাপদ করা হোক। প্রয়োজনে নতুন আইন করা হোক, ক্যামেরার সাহায্য নিয়ে বেপরোয়া গাড়ি চালকদের মনিটর করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা হোক। মোট কথা এই বিষয়টাকে আর এইভাবে ছাড় দেওয়া উচিত নয়। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। কিন্তু নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটার ব্যবস্থা করে রাখার নাম খুন।’
সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু ৩০ জুলাই এক পোস্টে লিখেন, ‘যার যায় শুধু সেই জানে জীবনে কি হারায়। অন্য কারো বোঝার কোনো উপায় নাই।’
ইউটিউব ও ফেসবুক তারকা সালমান মুক্তাদির ৩০ জুলাই তার ফেসবুকে লাইভ ভিডিও-এর ক্যাপশনে লিখেন, ‘একদিকে ৯ বছরের শিশু ধর্ষণ অন্যদিকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় আরেক শিশুর মৃত্যু। নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের মৃত্যু, যা ছিল খুন। বাসের চাপায় পিষে ফেলা হয়েছে দুই শিক্ষার্থীকে। কিন্তু কেউই কিছু করছে না।’
অভিনেত্রী বিজরী বরকতউল্লাহ ৩০ জুলাই তার এক পোস্টে লিখেন, ‘শুধু ভালোবেসে, আদর দিয়ে, সম্মান দিয়ে মাথায় উঠাতে হয় কীভাবে সেটা জানলে চলবে না। এর সাথে জানতে হবে কীভাবে দরকার হলে মাথা থেকে সোজা নামিয়ে আছার মেরে তার আসল স্থানটা বোঝানো।’
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ৩০ জুলাই কালো ব্যানারে তার এক পোস্টে লিখেন, ‘হোক প্রতিবাদ,বিচার চাই।’
উপস্থাপক আব্দুন নূর তুষার ৩১ জুলাই তার এক পোস্টে ১০টি পয়েন্ট যোগ করে লিখেন,
‘সকল ভাড়ায় চালিত যানবাহনের চালককে গাড়ির প্রকারভেদে ভিন্ন রঙের পোশাক পরতে হবে। রং হবে লাল, হলুদ, কমলা। যাতে সে দুর্ঘটনার পর ভিড়ে মিশে পালাতে না পারে।
সকল যানবাহনে ড্যাশবোর্ডে ক্যামেরা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
বাস নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া অন্য কোথাও বাস থামলে বিরাট অংকের জরিমানা করতে হবে। এলোমেলো বাস রেখে যাত্রী তোলা বন্ধ করতে হবে।
কোন স্টপে ৩ মিনিটের বেশি বাস দাঁড়াতে পারবে না।
যত্রতত্র রাস্তা পারাপার, জেব্রা ক্রসিং ও ওভার ব্রিজ ছাড়া রাস্তা পার হলে পথচারীদের বিরাট অংকের জরিমানা করতে হবে। বাসে ঝুলতে দেখলে জরিমানা করতে হবে। বাসস্টপ ছাড়া ওঠানো-নামানো হলে শাস্তি দিতে হবে।
ভাড়া প্রদান করতে হবে কার্ডের মাধ্যমে। হেলপার প্রথা বাতিল করতে হবে।
চালকের লাইসেন্সের বৃহৎ ল্যামিনেটেড কপি সামনের কাঁচের বামদিকে নীচের অংশে প্রদর্শন করতে হবে।
৬ মাস পর পর চালকের মাদক টেস্ট করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রতিবছর তার চোখ,কান ও সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
বাস লেন নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। সব বাসে জিপিএস ট্র্যাকার লাগাতে হবে। কেবল বাস স্টপে থামা ছাড়া লেন পরিবর্তনের জন্য জরিমানা করতে হবে।
ফিটনেস ছাড়া যানবাহন রাস্তায় থাকলে গাড়ি দেখা গেলে সেই এলাকার পুলিশকে জবাবদিহি করতে হবে। প্রতি বছর ফিটনেসের সময় বিআরটিএ-তে গাড়িটির ভিডিও চিত্র সংরক্ষণ করতে হবে। সকল গ্যাস সিলিন্ডার নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।
আর যদি এসব করা না যায়, তাহলে। মাঝে মাঝে মরতে হবে। আরও মৃত্যু বাড়বে।’
এ ছাড়া টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ফারহানা নিশো, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, সংগীতশিল্পী প্রীতম হাসান, অভিনেত্রী মুমতাহিতা টয়া, জিনাত শানু স্বাগতাসহ অসংখ্য তারকারা সড়কের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে তাদের বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করতে থাকেন ফেসবুকে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন