প্রধানমন্ত্রীকে অবিলম্বে সরে দাঁড়ানোর আহবান মির্জা ফখরুলের
ছাত্র-জনতার দাবি মেনে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে অবিলম্বে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (৪ আগস্ট) এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান। একই সঙ্গে আজ গণ-আন্দোলনে গুলি, হত্যা ও দমন-নির্যাতনের অভিযোগ এনে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণহত্যাকারী স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে আজ রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। এখন পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রায় একশ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন আরও সহস্রাধিক মানুষ।’
তিনি বলেন, ‘শনিবার আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়ে আজ সমগ্র দেশে তারা পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র নেতাকর্মী জমায়েত করে গণতন্ত্রকামী ছাত্র-জনতার ওপর লেলিয়ে দেয়। ঢাকার ধানমন্ডি, সায়েন্সল্যাব, মিরপুর, উত্তরা, তোপখানা রোডসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গুলিবর্ষণ করে। সমগ্র দেশকেই আজ রণক্ষেত্রে পরিণত করে হত্য, নির্যাতন ও বল প্রয়োগ করে আন্দোলন দমানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। আলোচনার কথা বলে নির্বিচারে গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করছে স্বৈরাচারী সরকার।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ দুপুর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য ইন্টারনেট, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ সহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়। আন্দোলন দমন ও ভায়ভীতি প্রদর্শন করতে আজ সন্ধ্যা থেকে আবারও সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে।’
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বরাবরের মতো আজও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএসএমএমইউসহ বিভিন্ন স্থাপনায় পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। এর দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানোর ষড়যন্ত্র করছে তারা। শনিবারের মতো আজও দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের বাসা বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম কর। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নড়াইলের বাসভবন ও ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলুর ময়মনসিংহের বাসভবন, যশোরে বিএনপি কার্যালয়, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সিএনজি স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।’
সরকারের এই নির্মম হামলা, দমন-নিপীড়নের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশব্যাপী গণজাগরণের মধ্য দিয়ে জনগণ গণঅভ্যুত্থানের পথে যে যাত্রা শুরু করেছে- হত্যা, দমন, নিপীড়ন চালিয়ে তা আর ব্যর্থ করা যাবে না। সরকার পরিকল্পিতভাবে সংঘাত, সংঘর্ষ উসকিয়ে দিয়ে আন্দোলনের বিজয় নস্যাৎ করতে চায়। অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে আন্দোলনরত জনগণ সরকারের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত ব্যর্থ করে বিজয় ছিনিয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ।’
অসহযোগ আন্দোলনসহ চলমান আন্দোলনে ছাত্র জনতাকে হত্যাকারীদের বিচার অবশ্যই বাংলাদেশের মাটিতে হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব নিহত সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানান। পাশাপাশি আহত সবার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব দেশবাসীসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি সব রাজনৈতিক দলের প্রতি ছাত্র-জনতার চলমান গণআন্দোলনে তাদের পাশে থাকার আহ্বান জানান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন