প্রবাসী স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে উৎকণ্ঠায় যশোরের রাজগঞ্জের মানুষ
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের এক গৃহবধুর স্বামী জাকির হোসেন থাকেন মালয়েশিয়ায়। মোবাইল ডাটা ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গত ৬/৭ দিন স্বামীর সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলতে পারেননি সেই গৃহবধু। তিনি বললেন- গত ৩ বছর ধরে আমার স্বামী, আমার সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারের ভিডিও কলে কথা বলে। কিন্তু এখন ইন্টারনেট সংযোগ নাই। আমার স্বামী গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকবার মোবাইল নম্বরে আইএসডি কল দিয়েছেন। কল রিসিভ করলেও কিচ্ছু শোনা যায় না। আমাদের সাত বছরের একটি মেয়ে সন্তান আছে। মেয়ে তার বাবার সঙ্গে প্রতিদিন ম্যাসেঞ্জারে কথা বলত। এখন কথা বলতে না পেরে অনেক কান্নাকাটি করছে। কিছুতেই তাকে বোঝানো যাচ্ছে না। এই গৃহবধু একা নন, তার মতো রাজগঞ্জের শত শত মানুষ তাদের প্রবাসী স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। রাজগঞ্জের হানুয়ার গ্রামের একজন কৃষক কামাল হোসেন। তার এক ভাই থাকেন সৌদি আরবে। কয়েক দিন ধরে তাদের দুই ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। কামাল বলেন- চলমান পরিস্থিতিতে আমরা যত দুশ্চিন্তায় আছি আমার মনে আমার চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় আছে আমার প্রবাসী ভাই। আমরা যে ভালো আছি, এই খবরও তাদের দিতে পারছি না। জানাগেছে- কর্মসংস্থানের জন্য রাজগঞ্জ এলাকার শত শত মানুষ ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। অধিকাংশ গ্রামে ওয়াই ফাই ইন্টারনেট নেই। গ্রামের মানুষেরা বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির মোবাইল ইন্টারনেট (ডাটা) কিনে ব্যবহার করেন। সেই ডাটা ইন্টারনেট দেশের চলমান পরিস্থিতির কারনে বন্ধ রয়েছে। যে কারনে প্রবাসিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না স্বজনেরা। রাজগঞ্জের মোবারকপুর গ্রামের সুইটি খাতুন। তার স্বামী হাবিবুর রহমান মালয়েশিয়া প্রবাসী। সুইটি খাতুন বলেন- আমি গ্রামে বসবাস করি। ইন্টারনেট না থাকার কারণে আমার স্বামীর সঙ্গে ৬/৭ দিন ধরে যোগাযোগ করতে পারছি না। মোবাইল ফোনে সরাসরি কল দিলে কল রিসিভ হয় টাকা কাটে কিন্তু অপরপ্রান্ত থেকে কোনো শব্দ আসে না। হানুয়ার গ্রামের একবৃদ্ধা বিলকিস বেগম। তার ছেলে ফরহাদ আহমেদ মালয়েশিয়ায় থাকেন। বিলকিস বলেন- আমার ছেলে প্রতিদিন দুইবার ভিডিও কল দিত। কয়েক দিন ধরে আমার ছেলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তাই খুব দুশ্চিন্তায় আছি। ছেলেটা কেমন আছে বা আমরা কেমন আছি কিছুই জানাতে পারছি না। তাই অনেক দুশ্চিন্তায় আছি। রাজগঞ্জ বাজার এলাকার বাসিন্দা মফিজুর রহমান, আলতাপ হোসেনসহ অনেকেই জানিয়েন ইন্টারনেট সমস্যার কারনে প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে স্বজনদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বেড়েছে। সেই সাথে রেমিট্যান্স না আসায় অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ছে। উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সহিংস রূপ নিলে ১৮ জুলাই থেকে সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গত বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে ওয়াইফাই ইন্টারনেট চালু হয়। কিন্তু মোবাইল সিম কোম্পানির ডাটা ইন্টারনেট এখনো চালু না হওয়ায় যোগাযোগ করতে পারছে না। এতে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় রয়েছে প্রবাসি ও তাদের গ্রামে থাকা স্বজনেরা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন