ফারজানার প্রথমবারেই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প
নৌবাহিনী কর্মকর্তা বাবার হাত ধরে ১৯৯৫ সালে প্রথম স্কুলে যান উম্মে হাবিবা ফারজানা। ভর্তি হন চট্টগ্রামের বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল ও কলেজে। সেখান থেকে বেরিয়েছেন ১২ বছর পর, ২০০৭ সালে। তবে তার এই এক যুগের শিক্ষা জীবনে শিক্ষক হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেখেছেন তার বাবা।
পড়াশোনা আর জানার প্রতি আগ্রহ তৈরিতে বাবার অবদান বেশি। এটিই ছিল ফারজানার সাফল্যের মূলমন্ত্র, যে কারণে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়েও তিনি ৩৭তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
এস এম মাহবুবুর রহমান ও বিলকিস খানম দম্পতির বড় সন্তান ফারজানা। বরিশালের পিরোজপুরে পৈত্রিক বাড়ি হলেও বাবার চাকরিসূত্রে বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে।
পরিবারের স্বপ্ন ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকের পর ফারজানা তেমন পড়াশোনাই করেননি। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়া হলো না। যেহেতু সাধারণ জ্ঞান ও বাংলা-ইংরেজি ভালোই পারতেন, তাই সুযোগ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঘ’ ইউনিটে। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় মাত্র ১৯ বছর বয়সেই হুট করে বিয়ে হয়ে গেল। শুরুতে এ নিয়ে অনেকরকম জল্পনা-কল্পনা থাকলেও বাস্তবে সংসার সামলানোর পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন—এটা উপলব্ধি করলেন।
মাঝে মাঝে বিষণ্নতা অনুভব করলেও তা কাটিয়ে উঠে নিজেই নিজেকে অনুপ্রেরণা দিতেন। মাস্টার্স ফাইনালের সময় সন্তান গর্ভে। আসল সংগ্রাম শুরু হলো তখন থেকে। পারিবারিক ব্যস্ততায় মাও সময় দিতে পারেননি। পুরোটা সময় নিজেই নিজেকে সামলেছেন। মেয়ের জন্মের পর দু’বছর পোস্ট-ন্যাটাল ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন, তবে এর প্রভাব মেয়ের ওপর পড়তে দেননি। এভাবেই চার বছর কাটল, মেয়ে কিছুটা বড় হলো। এই চার বছরে ফারজানা কোনো পড়াশোনা করেননি। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছিলেন, কিন্তু সংগ্রাম করে বিসিএস ক্যাডার হওয়া অন্যদের গল্প পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের মনে শক্তি সঞ্চার করলেন। নতুন করে পড়াশোনা শুরু করলেন। সারাদিন বিরামহীনভাবে সংসার সামলে বই ধরার ফুসরত মিলত যখন, তখন অন্যরা ঘুমের রাজ্যে।
ফারজানা ভাবলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জনগণের করের টাকায় পড়াশোনা করে তিনি ঋণী হয়েছেন, সেই ঋণ তাকে শোধ করতে হবে। সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা আছে। ৩৭তম বিসিএসে আবেদন করার পর যখন প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি শুরু করলেন, তখন পরীক্ষার মাত্র ২ মাস বাকি। পরীক্ষার আগে হঠাৎ জলবসন্ত হল, এ অবস্থাতেই পরীক্ষা দিলেন। উত্তীর্ণ হলেন এই ধাপে। পরে দেড়মাস দিনরাত পড়াশোনা করে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। এসময় তার স্বামী, মা ও বোন সহযোগিতা করেছেন। এই ধাপেও উত্তীর্ণ হলেন ফারজানা। রাতে মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে পড়তে বসতেন। এভাবেই পরিক্ষার ভাইভা’র সময় এসে গেল। অবশেষে ফলাফল প্রকাশের পর ফারজানা দেখলেন তিনি প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এটি যে তার প্রথম বিসিএস ছিল তাই নয়, এটি ছিল প্রথম চাকরির পরীক্ষাও!
ফারজানা বললেন, ‘আমি নিজের স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছি। শুরুতে আমাকে নিয়ে কেউ তেমন আশাবাদী ছিলেন না। কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর আমার বাবা-মা, স্বামী, শ্বশুরসহ সবাই সহযোগিতা করেছেন, উত্সাহ দিয়েছেন, আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’
তিনি বলেন, ‘সফলতার জন্য নারীদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস। আমি মানুষ, আমি একটা আলাদা সত্ত্বা। আমাকে আমার লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। আর এজন্য যা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো পরিশ্রম। সে বিষয়ে কখনোই পিছপা হওয়া যাবে না।’
বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ফারজানা বলেন, ‘থেমে গেলে চলবে না। ধৈর্য্য ধরে এগিয়ে যেতে হবে, বিশ্বাস রাখতে হবে। যে সময়টা পাওয়া যায় তার পুরোটা সঠিক ব্যবহার করতে হবে। কাজে লাগাতে হবে। আর পড়াশোনা চলাকালে সব রকম ডিভাইস থেকে দূরে থেকে একাগ্রচিত্তে যতটুকু সময় পড়ার, সে সময়টা পুরোপুরি পড়লে সফলতা আসবেই। সূত্র – বাংলাদেশ জার্নাল
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন