বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতিতে উৎফুল্ল প্রধানমন্ত্রী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনেই মিলল অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বৈশ্বিক স্বীকৃতি। এখন আর স্বল্প আয়ের নয়, উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে সেই কথাটি তুলে ধরেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় শিশু দিবসে শনিবার বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টু্ঙ্গিগপাড়াতেই শিশু সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি শিশু কিশোরদের মধ্যে চিত্রাঙ্কনসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। শিশুদের অংশগ্রহণে উপভোগ করেন সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া খোকা একদিন হয়ে উঠেন বাঙালির আশা আকাঙ্ক্ষার ধারক, বাহক। তার নেতৃত্বে সংগ্রামের পথ ধরেই ১৯৭১ সাল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের কবল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। আর সেই খোকা পরে পরিচিত হয়ে উঠেন ‘বাংলার বন্ধু’ বা বঙ্গবন্ধু নামে, পান জাতির জনকের উপাধি।
বাংলাদেশের মানুষ পরাধীন, গরিব বলে জাতির জনক কখনও তার জন্মদিন উদযাপন করতেন না। কিন্তু এই দিনটিকে এখন আনন্দ, উল্লাসের সঙ্গে পালিত হয় বাংলাদেশে। শিশুদের জন্য দিবসটি উৎসর্গ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমাদের জন্য একটা সুখের সংবাদ। জাতির পিতার জন্মদিনেই এই সংবাদটা আমরা পেলাম, এতদিনের প্রচেষ্টার ফলে আজকের বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশ স্বল্প আয়ের দেশ ছিল, আজকে সে বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে।’
‘অর্থাৎ আমাদের আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা এমনকি পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ উন্নয়নশীল দেশ। আমরা এক ধাপ পিছিয়ে পড়েছিলাম। আজকেই খবরটা পেয়েছি আমরা পিছিয়ে পড়ে নেই। এই অঞ্চলের সব দেশের সঙ্গে সমানতালে তাল মিলিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারব, আমরা চলতে পারব।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘জাতির পিতার যে স্বপ্ন, যে আকাঙ্ক্ষা, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার, তাতে এক ধাপ অগ্রযাত্রা আমরা অগ্রযাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। জাতির পিতার জন্মদিনে এই সুখবরটা বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট অর্জন বলে আমরা মনে করি। এ জন্য সকলকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।’
এই অর্জনের ফলে বাংলাদেশে মর্যাদা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মর্যাদা নিয়ে চলবে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। এই শিশুরা, তাদের ভবিষ্যত যেন সুন্দর হয়, তাদের ভবিষ্যত যাতে উন্নত হয়, সেদিনে লক্ষ্য রেখেই আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করেছি।’
শিশুদেরকে মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আজকের শিশুরা আগামী দিনের যারা ভবিষ্যত কর্ণধার এ দেশের। তাদের কেউ প্রাইম মিনিস্টর হবে আমার মতো, কেউ বড় বড় চাকরি করবে, কেউ বিভিন্ন জায়গায় যাবে, উন্নত হবে, এ দেশকে গড়ে তুলবে।’
‘আজকে যেটুকু করার আমরা করে যাচ্ছি, আজকের শিশুরাই আগামী দিনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এটাই আমাদের আশা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সারা জীবন কাজ করে গেছেন এই বাংলাদেশের মানুষ অর্থনৈতিক উন্নতি পাবে, তারা নতুন জীবন পাবে। সেই লক্ষ্যটা বাস্তবায়নের জন্যই আমি কাজ করে যাচ্ছি, চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের একটি শিশুও পথশিশু থাকবে না। প্রত্যেকটা শিশ লেখাপড়া শিখবে, মানুষের মতো মানুষ হবে, বিশ্বসভায় তাল মিলিয়ে চলার উযুক্ত হবে।’
‘এই দেশের প্রতিটি দরিদ্র মানুষ ঘর পাবে, খাদ্য পাবে, চিকিৎসা পাবে, সুন্দর জীবন পাবে, এই দেশের প্রতিটি মানুষ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলবে।’
১৯৭৫ সালের পর ২১টা দেশ এগিয়ে যেতে না পারার আক্ষেপের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘২১টা বছর এই দেশের মানুষ পিছিয়ে পড়েছিল। ৯৬ সালে প্রথম সরকার গঠন করে আমরা কতগুলো পদক্ষেপ নেই। এরপর আবার সাত বছর হারিয়ে যায়। তারপর যখন ২০০৯ এ আমরা সরকার গঠন করি, তখন থেকে আমরা চেষ্টা চালিয়ে গেছি, দেশকে কীভাবে আমরা উন্নত করব। তারই সুফল আজ আমরা পেয়েছি।’
সরকার আমরা শিশুদের মন মানসিকতা, শরীর, স্বাস্থ্য সব কিছু উন্নত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খেলাধূলা, সংস্কৃতি চর্চার দিকে বিশেষভাবে নজর দিয়েছি। বিভিন্ন ধরনের খেলা, এমনকি গ্রামের হারিয়ে যাওয়া খেলাধূলাগুলোও এখন যাতে প্রতিযোগিতা হয় তারও পদক্ষেপ নিয়েছি।’
কোনো ছেলে মেয়ে যেন বিপথে না যায়, সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে অভিভাবক, শিক্ষক এবং ধর্মীয় নেতাদের প্রতি অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এগিয়ে যাব। …এই বাংলাদেশকে আমরা একটা উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।২০২১ সালে …স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আগেই আমরা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আমি বিশ্বাস করি, আমরা তা পারব অর্জন করতে।’
প্রত্যেকটা জেলা যেন ভিক্ষুকমুক্ত হয় এবং গৃহহীনরা যেন গৃহ পায় তার ব্যবস্থা সরকার করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা দেশকে, সমাজকে একেবারে গ্রাম থেকে যেন আমরা গড়ে তুলতে পারি সেই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
পরে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে তিন দিন ব্যাপী বই মেলার উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন