বলিউডের নারী প্রধান ১০ চলচ্চিত্র

নারীর স্বাধীনতা, অধিকার ও মানুষ হয়ে বাঁচার লড়াই নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ বিশ্ব চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছে। যুগে যুগে নারীরা তাদের ত্যাগ ও পরিশ্রম দিয়ে বিশ্বকে করেছেন শৈল্পিক। ব্যক্তিগত এক সাক্ষাৎকারে বলিউড বাদশা শাহরুখ খান একবার বলেছিলেন ‘আজকের বলিউড যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার সবটাই সম্ভব হয়েছে বলিউডের হিরোইনদের জন্য, আমরা এখানে নগণ্য।’ নারীদের সেই সংগ্রাম ও সফলতার গল্প নিয়ে নির্মিত ১০টি ব্যবসা সফল হিন্দি ছবির তালিকা নিচে দেয়া হলো-

মাদার ইন্ডিয়া
নারীকেন্দ্রিক চরিত্র নিয়ে বলিউডের ছবির কথা বলতে গেলে সবার প্রথমেই যে ছবিটি মনে আসে তা হলো ‘মাদার ইন্ডিয়া’। মাদার ইন্ডিয়া এতটাই সাড়া ফেলেছিল যে, প্রথম বলিউডের ছবি হিসেবে মনোয়ন পেয়েছে অস্কারেও। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের সামাজিক অবস্থা পূনর্গঠনে এ ছবিটি একটি নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছিল। মেহবুব খান পরিচালিত ছবিটিরে নাম চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন খ্যাতিমান অভিনেত্রী নার্গিস খান।

মির্চি মাসালা
১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয় কেতন মেহতা পরিচালিত মির্চি মাসালা ছবিটিতে। ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন বলিউডের জনপ্রিয় ও আলোচিত অভিনেত্রী স্মিতা পাতিল। যিনি কিনা পরবর্তীতে সিল্ক স্মিতা হিসেবেও পরিচিতি পান। ছবিটিতে গ্রামের একজন অধিকার বঞ্চিত নারীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।

লজ্জা
নারীকেন্দ্রীক চরিত্র নিয়ে নির্মিত আরও একটি উল্লেখযোগ্য বলিউডের ছবি বলা যেতে পারে ‘লজ্জা’কে। একঝাক নারী তারকাকে নিয়ে নির্মিত ছবিটিতে মূলত ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল ভারতীয় সমাজে নারীর উপর পুরুষের অযাচিত আগ্রাসনকে। ছবিটিতে অভিনয় করে রেখা, মহিমা চৌধুরী, মাধুরী দিক্ষীত ও মনিষা কৈরালা।

গোলাব গ্যাং
ছবিটি দিয়ে বাজিমাতে করেছিলেন বলিউড ডিভা মাধুরী দীক্ষিত। এখানে তিনি একটি বিদ্রোহী নারী দলের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। আর জুহি চাওলাকে দেখা যায় ক্ষমতাধর এক নেত্রীর চরিত্রে। নিজেদের রক্ষা করতে ও আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়েই শুরু হয় নারীদের নিজস্ব বাহিনী তৈরির ভাবনা। সমাজ, সংসার সর্বত্রই তীব্র অত্যাচার আর মর্যাদাহানির অবসান ঘটিয়ে পাঁচ সখী মিলে প্রতিবাদ জানায় নিজেদের অধিকার সচেতনতার মাধ্যমে। সে থেকেই ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল বুন্ডলখান্ডে নারী অধিকার নিয়ে যাত্রা শুরু করে গুলাবি গ্যাং নামে এ বাহিনী।

যেকোনো নিপীড়িত বা অত্যাচারিত মানুষ, বিশেষত নারীদের পাশে এসে দাঁড়ানো এ বাহিনীকে নিয়েই নির্মিত হয়েছে ‘গুলাবি গ্যাং’ নামের এই ছবিটি। যদিও ছবির পরিচালক সৌমিক সেনের দাবি, ছবিটি কোনো কিছু থেকে অনুপ্রাণীত নয়। তবে এর গল্প ও চরিত্ররা সেই বাহিনীরই প্রতিনিধিত্ব করেছে বলে মনে করেন সমালোচকরা।

দ্য ডার্টি পিকচার
ভারতীয় অভিনেত্রী সিল্ক স্মিতার জীবনী নিয়ে নির্মিত হয় ছবিটি। এতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন বিদ্যা বালান। একজন নারীর শূন্য থেকে তারকা হয়ে ওঠা। খ্যাতির চূঁড়ায় পৌছে গিয়ে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা নিয়ে মৃত্যুবরণ- এই ছবিটির গল্প। তবে এর ভেতরে ফুটে ওঠেছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসহায়ত্ব, শরীর ও মনের উপর অত্যাচার, একজন নারীকে তারকা হয়ে ওঠতে গিয়ে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা ও আপোষের নানা করুণ চিত্র।

ছবিটি পরিচালনা করেন মিলন লোথরিয়া। এতে বিদ্যার পাশাপাশি আরও অভিনয় করেন নাসিরউদ্দিন শাহ, তুষার কাপুর ও ইমরান হাশমির মতো অভিনেতারা।

কুইন
একজন সাধারণ ভারতীয় তরুণী থেকে আধুনিক ও চলমান সমাজ উপোযোগী তরুণী হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে কঙ্গনা রানাওয়াত অভিনীত ‘কুইন’ ছবিটি। ছবিটিতে রানী মেহরা নামক এক ভারতীয় তরুণীর ভূমিকায় দেখা যায় কঙ্গনাকে। ‘কুইন’ ছবিটি বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল সমালোচকদের। বক্স অফিসেও ছিল ব্যবসা সফল।

পিংক
২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া বলিউডের সেরা কয়েকটি ছবির মধ্যে ‘পিংক’ অন্যতম। কোনো সমাজে নারীদের একা বসবাস করাটা কতটা গুরুতর অপরাধ হিসেবে ভাবা হয় সেই নির্মম সত্যগুলোই পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী তার পিংক ছবিটির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন।

ছবিটিতে বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনের সাথে ছিলেন তাপসী পান্নু, কীর্তি কুলহারি ও আংগাদ বেদী। ছবিটির একটি উল্লেখযোগ্য ডায়ালগ ছিল ‘না মানে না, নায়ের পর কোনো কিন্তু হয় না।’

নীরজা
সোনম কাপুরের বলিউড ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ধরা হয় ‘নীরজা’ ছবিটিকে। রাম মাধবনের বায়োগ্রাফিক্যাল থ্রিলার ধর্মী ছবিটির গল্প তৈরি হয়েছে একটি বিমান ছিনতাইর ঘটনা নিয়ে। যেখানে নীরজা বানোট নামক এক ভারতীয় কেবিন ক্রু ছিনতাইয়ের হাত থেকে বিমানটিকে রক্ষা করেন এবং পরবর্তীতে ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত হন। ছবিটির কেন্দ্রীয় ‘নীরজা’ চরিত্রে অভিনয় করেন সোনম কাপুর।

পার্চেড
রাজস্থানের মরু অঞ্চলের এক গ্রামের চার নারীর গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। সমাজে তাদের দুঃখ দুর্দশা এবং শারীরিক মানসিক অত্যাচার সহ্যের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল ছবিটিতে। পরবর্তীতে জীবন সংগ্রামের তাগিদে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় তারা। এই ছবিটিতে চার নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাধিকা আপ্তে, সুরভিন চাওলা, তানিস্থা চ্যাটার্জী ও লেহার খান।

ফ্যাশন
মাধুর ভান্ডরকারের ফ্যাশন সিনেমাটি তোলপাড় তুলেছিল বলিউড জগতে। শোবিজ জগতে নারী তারকাদের কত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় এ নিয়েই ছিল ছবিটির মূল গল্প। ছবিটি বক্স অফিসেও ছিল বেশ সফল। জিতে নিয়েছিল ফিল্ম ফেয়ারের বেশ কয়েকটি পুরস্কারও। ছবিটির মূল দুইটি চরিত্রে কাজ করেন প্রিয়াংকা চোপড়া ও কঙ্গনা রানাওয়াত।