বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্যসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রুল জারি
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) উপ-রেজিস্ট্রার পদে একাধিক নিয়ম ভেঙ্গে নিয়োগের অভিযোগ তুলে হাইকোর্ট রিট করার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে হাইকোর্ট কর্তৃক ‘উপ-রেজিস্ট্রার’ পদে এক মাসের স্থগিতাদেশের পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে বিষয়টি সম্পর্কে আদালকে জানাতে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ কাজী ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই স্থগিতাদেশ ও রুল জারি করে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, রিজেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান, বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও স্থগিত উপ-রেজিস্ট্রার পদে পদায়নকৃত ফারজানা ইসলাম’কে এক মাসের মধ্যে নিয়োগ বাছাই বোর্ডের ক্রম ভঙ্গ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-২০০১ এর ৩২(৩) অমান্য করার বিষয়ে এক মাসের মধ্যে জানাতে রুল জারি করেছে। একই সাথে উপ-রেজিস্ট্রার পদটিতে এই সময়টিতে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, রিজেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব।
বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ১০ আগস্ট ২০২১ তারিখে উপ-রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।এতে একাধিক প্রার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ নভেম্বর ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত বাছাই বোর্ড কাওসার হাওলাদারকে সরাসরি নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেন এবং এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে দু’জন প্রার্থী নজরুল ইসলাম ও ফারজানা ইসলামকে আপগ্রেডেশনের জন্য সুপারিশ করা হয়। ২৮ তম রিজেন্ট বোর্ড শূন্য পদের বিপরীতে কাওসার হাওলাদের নিয়োগ অনুমোদন করেন। কিন্তু দেখা যায় আপগ্রেডেশন প্রাপ্ত দু’জন প্রার্থীর ক্রম নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সুপারিশের ক্রম সংখ্যা পরিবর্তন করে ১ নং এর জায়গায় ২ নং এবং ২নং এর জায়গায় ১নং দিয়ে অনুমোদন করা হয়। এই ক্রম ভঙ্গের বিষয়টি আমলে নিয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
একই সাথে, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩২ (৩) নং ধারায় উল্লেখ আছে, “বাছাই বোর্ডের সুপারিশের সহিত রিজেন্ট বোর্ড একমত না হইলে বিষয়টি চ্যান্সেলরের নিকট প্রেরণ করিতে হইবে এবং এই ব্যাপারে তাহার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হইবে”।
পরবর্তীতে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত ২৯ তম রিজেন্ট বোর্ড কাওসার হাওলাদার এর নিয়োগ বাতিল করে অভ্যন্তরীণ প্রার্থী ফারজানা ইসলামকে শূন্য পদের বিপরীতে সরাসরি নিয়োগ প্রদান করা হয়। অথচ শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ প্রদান করতে হলে একটি নিয়োগ বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠিত হতে হবে এবং উক্ত বাছাই বোর্ডকে প্রার্থীর নাম সুপারিশ করতে হবে। একই সাথে এ বিষয়ে রিজেন্ট বোর্ড ও নিয়োগ বাছাইবোর্ড ঐক্যমতে না পৌঁছালে বিষয়টি চ্যান্সেলর তথা রাষ্ট্রপতির কাছে চলে যাবে। তবে এ বিষয়টি সম্পূর্ণ অমান্য করার অভিযোগে রিট করা হলে আদালত আমলে নিয়ে রুল জারি করে।
এদিকে ফারজানা ইসলামের নিয়োগপত্রে দেখা যায় ২৮ তম রিজেন্ট বোর্ডের সভায় ৬ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে। তবে ৬ নং সিদ্ধান্তে ফারজানা ইসলামের পরিবর্তে কাওসার হাওলাদারের নাম পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে রিটকারী বশেমুরবিপ্রবির সহকারী রেজিস্ট্রার (আদালত কর্তৃক স্থগিত হওয়া উপ-রেজিস্ট্রার) নজরুল ইসলাম বলেন,ক্রম ভঙ্গ করার বিষয়টি কাউন্সিল দপ্তর থেকে করা হয়েছে। কাউন্সিলিং দপ্তর থেকে ক্রম ভঙ্গ করে রিজেন্ট বোর্ডে ভুলভাবে উপস্থাপন করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে ফারজানা ইসলাম বলেন,আমি ইন্টারভিউ দিয়ে নিয়োগ পত্র পেয়েছি। মাঝের কি ঘটনা এটা তো আমার পক্ষে জানা সম্ভব না। কর্তৃপক্ষ আমাকে নিয়োগ দেওয়ায় আমি যোগদান করেছি।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মো: দলিলুর রহমান মুঠোফোনে বলেন,আমার সামনে মানুষ বসে আছে। এ বিষয়ে সামনাসামনি এসে কথা বলতে হবে। পরবর্তীতে রেজিস্ট্রারের কক্ষে গেলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হন নি।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ. কিউ এম মাহবুব’কে ফোন করা হলে তিনিও এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন