বশেমুরবিপ্রবিতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে শিক্ষার্থী বহিষ্কারের অভিযোগ
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-শৃঙ্খলার সকল নিয়ম ভেঙে দুই শিক্ষার্থীকে এক সেমিস্টার বহিষ্কারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মাস্টার্স ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এম সাদিদ ও আব্দুল্লাহ মোল্লা। এ বিষয়ে উপাচার্য বরাবর বহিষ্কার আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য একটি আবেদন পত্র দিয়েছে তারা। পাশাপাশি উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে আইন অনুষদের ডিন ড. মোঃ রাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশে সব নিয়ম ভেঙে বহিষ্কার করার সুপারিশ করার জন্য বহিষ্কার হতে হয়েছে জানিয়ে অভিযোগ জানান ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী। এ সময় উপাচার্যের কক্ষে অবস্থান করা বিভিন্ন অনুষদের ডিন,বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রক্টর বহিষ্কার নিয়মসম্মত হয়নি বলে জানান।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করার অভিযোগে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এসএম গোলাম হায়দার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ঐ দুই শিক্ষার্থীকে এক সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষা চলাকালীন নকল, প্রক্সি, শিক্ষকের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, অসদুপায় ইত্যাদি অবলম্বন করলে বাকি পরীক্ষা বাতিল বা এক সেমিস্টারের জন্য বা আজীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু, আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম মানা হয়নি বলে জানা যায়। তাদের সব পরীক্ষা শেষ হলেও কোনো পরীক্ষাতেই তাদের অসদুপায়ের বিষয়টি জানানো হয়নি। প্রায় অর্ধ বছর পর দুই শিক্ষার্থীর খাতা হুবহু মিল পাওয়া গেছে জানিয়ে তাদের বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন এর ক্ষেত্রে পরীক্ষারত অবস্থা ব্যতীত কয়েক মাস পরে সিদ্ধান্ত জানানোর কোনো নিয়ম নেই।
বহিস্কৃত শিক্ষার্থী এম সাদিদ ও আব্দুল্লাহ মোল্লা তাদের আবেদন পত্রে জানায় যে, গত ৭ ফেব্রুয়ারী মাস্টার্স দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা সম্পন্ন হয় এবং গত ১লা সেপ্টেম্বর উক্ত পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়। কিন্তু, ফলাফল শিটে তাদেরকে অকৃতকার্য দেখানো হয়। এ বিষয়ে বিভাগে যোগাযোগ করলে বিভাগ থেকে অফিসিয়ালি কোনো উত্তর দেয়নি। পরে, ২৮ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের আদেশ আসে। বহিষ্কার হওয়ার পূর্বেই ফলাফল না দেয়াতেও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী।
এদিকে আবেদন পত্রে তারা অসদুপায় অবলম্বন করেন নি জানিয়ে বহিষ্কার আদেশ পুনর্বিবেচনার দাবি জানান। তারা বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন রুমের বাইরে বের হননি, নকল করেননি, নির্ধারিত আসনে বসেই পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে, পরীক্ষক কোনো অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখেন নি, পরীক্ষার রুমে বহিষ্কারের মত কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তারা আরও উল্লেখ করেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারী পরীক্ষা শেষ ও ১ সেপ্টেম্বর ফলাফল প্রকাশের পর দীর্ঘ ৭ মাস অতিবাহিত হলে এমতবস্থায় পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে বহিষ্কার আইনসিদ্ধ নয় এবং সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। যা নিজের এবং পরিবারের প্রতি মানসিক এবং পারিবারিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
এদিকে এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ফলাফল প্রকাশে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে অভিযোগ জানানোর সময় পূর্ব থেকেই উপাচার্যের কক্ষে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও প্রক্টর ড. মোঃ কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ,বানিজ্য অনুষদের ডিন মোঃ রোকনুজ্জামান, কলা অনুষদের ডিন আতিকুজ্জামান ভূঁইয়া, মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান তাপস বালা, ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান সানজীদা পারভিন, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফায়েকুজ্জামান মিয়া, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর সাদ্দাম হোসেন, একাডেমিক শাখা প্রধান ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম হিরা, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি তুহিন মাহমুদ, সহকারী রেজিস্ট্রার (স্টোর) সাইফুল্লাহ রাজু প্রমুখ। উপস্থিত শিক্ষক-কর্মকর্তাবৃন্দ এ বিষয়ে বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এ ঘটনায় উপস্থিত একাধিক শিক্ষক, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বললে বিষয়টি দেখভালের জন্য প্রক্টরকে দায়িত্ব দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব।
এদিকে ঘটনাটির দায় নিতে চায়নি বিভাগ ও শৃঙ্খলা বোর্ডের কেউ। আইন বিভাগের চেয়ারম্যান মানসুরা খানম বলেন, আমরা বিভাগ থেকে সুপারিশ করেছি।বহিষ্কার করেছে শৃঙ্খলা বোর্ড।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন আইন মেনে তাদের বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, তিনি শৃঙ্খলা বিধিতে পরীক্ষায় অসদুপায়ের ধারা সম্পর্কে জানেন না। যদিও তিনি এক সময় শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্য ছিলেন বলে জানান।
আইন অনুষদের ডিন ড. মোঃ রাজিউর রহমান বলেন, বিষয়টি ফোরামে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অন্যদিকে শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্য সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এসএম হায়দার আলি বলেন, আইন অনুষদের ডিন ড. মোঃ রাজিউর রহমানের বিভাগের শিক্ষার্থী বলে উপাচার্যের কথায় তিনি নিজেই বিষয়টি ব্রিফ করেন এবং তার ব্রিফ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বহিষ্কারের। সেখানে রেজুলেশন হয়ে আসলে আমি সদস্য সচিব হিসেবে শুধু স্বাক্ষর করেছি।
এ বিষয়ে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিকাইল ইসলাম বলেন, দুই সেমিস্টার বহিষ্কারের সুপারিশ করা হলেও তাদের পরবর্তীতে আর এক সেমিস্টার ছিলো। আমরা সেটি প্রত্যাহারের জন্য বললেও আইন অনুষদের ডিন ড. মোঃ রাজিউর রহমান দুই সেমিস্টারই বহিষ্কার রাখতে বলেন। পরবর্তীতে উপাচার্যের সাথে কথা বলে আমরা এক সেমিস্টার বহিষ্কার কমিয়ে আনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা প্রধান ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম হিরা বলেন, একাডেমিক শাখা প্রধান হিসেবে আমার কাছে ফলাফল পুনর্বিবেচনা আবেদনের একটা অনুলিপি দেয়া হয়েছে। এভাবে বহিষ্কারের নূন্যতম কোনো সুযোগই নেই।
দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ হয়েছে কিনা এই বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো: আবু সালেহ বলেন, আমাদের কাছে অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।দেখে মনে হয়েছে বহিষ্কারের যে বিধান রয়েছে এখানে সেই বিধানগুলি পাওয়া যায়নি। নীতিমালা দেখে এই সিদ্ধান্ত আমার কাছে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয় নি। আমার কাছে মনে হয় বিষয়টা অধিকতর তদন্ত হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টা জানি।আমি পোল্যান্ড যাচ্ছি। আগামী সপ্তাহে এসে দেখবো বিষয়টা
এদিকে এ ঘটনায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শিক্ষা জীবন হুমকিতে আছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ ও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন