বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকায় শতাধিক ঋণখেলাপি প্রার্থী
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ঋণ সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে এমন দুই শতাধিক প্রার্থী চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সেল ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি)। এর মধ্যে ১৩৪ জন রয়েছেন ঋণখেলাপি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ঋণখেলাপি প্রার্থীদের চিহ্নিত করতে ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) সেল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই সেল গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন থেকে পাঠানো প্রার্থীদের ঋণ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে ঋণ নিয়ে জটিলতা রয়েছে এমন ২৩০ জন প্রার্থীকে সনাক্ত করে।
যাদের মধ্যে ১৩৪ রয়েছে ঋণখেলাপি। এছাড়া অন্যদেরও ঋণ সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। প্রার্থীদের ওই তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মোটামুটি ২৩০ জনকে সনাক্ত করতে পেরেছি। তবে এদের সবাইকে সরাসরি ঋণখেলাপি বলা যাবে না।
‘‘কারণ আমরা টাকা দেয়ার জন্য নির্ধারিত তারিখ ঠিক করেছি ২১ নভেম্বর এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর তারিখ ছিল ২৭ নভেম্বর। কিন্তু কেউ হয়তো ২২ তারিখে আবার কেউ ২৮ তারিখে দিয়েছে। এই তথ্য আমাদের কাছে এসেছে।’’
তিনি বলেন, গ্রাহকদের কত তারিখে অর্থ পরিশোধের কথা ছিল আর কোন তারিখে তা পরিশোধ করেছে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো তালিকায় এ বিষয়ে নোট লিখে দেয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিয়েছে। পর পর দুইবার প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রার্থীদের ঋণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে।
তবে এসব উদ্যোগ নিলেও আগেই ঋণখেলাপিদের ছাড় দিয়ে নিয়মিত করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। প্রভাবশালী প্রার্থীরা নানা কৌশলে নির্ধারিত সময়ে খেলাপি ঋণ নবায়ন করে নিয়েছেন। কেউ কেউ নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়ন করেছেন। নিয়ম ভেঙ্গে একই ঋণ বার বার নবায়ন করে নিয়েছেন এমন প্রার্থীও রয়েছেন তালিকায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী একই ঋণ ৩ বার নবায়ন করা যায়। কিন্তু কোনো কেনো গ্রাহক তা কয়েকবার নবায়ন করছে। ব্যাংকগুলোও গ্রাহকদের এই অনৈতিক সুবিধা দিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে এই বিষয়ে আরো সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু করার নাই।
সূত্র জানায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগ পর্যন্ত দুইশতাধিক ঋণখেলাপি ও কিস্তি খেলাপিদের আবেদন গ্রহণ করে তা অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের মধ্যে কোনো কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে অতি সামান্য ডাউনপেমেন্ট নিয়ে পুনঃতফসিল সুবিধা অনুমোদন দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটি।
তবে খেলাপি ঋণ নবায়ন করা প্রার্থীদের বেশিরভাগই সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকগুলোর খেলাপি প্রাথী। তাদের সংখ্যা ১০০ জন আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ৩৪ জন বলে জানা গেছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে সর্বোচ্চ ৩ বার যে কোনো গ্রাহক পুনঃতফসিল সুবিধা নিতে পারেন। এজন্য নীতিমালা রয়েছে। ন্যূনতম পরিমাণ অর্থ নগদ (ডাউনপেমেন্ট) পরিশোধ করতে হয়।
ওই নীতিমালা অনুসারে প্রথমবার পুনঃতফসিলের জন্য বকেয়া কিস্তির ১৫ শতাংশ বা মোট পাওনা ১০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম সেই পরিমাণ নগদ অর্থ জমা দিতে হয়।
দ্বিতীয়বার করতে হলে বকেয়া কিস্তির ৩০ শতাংশ বা মোট পাওনার ২০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, তৃতীয়বার পুনঃতফসিলের জন্য বকেয়া কিস্তির ৫০ শতাংশ বা মোট পাওনার ৩০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম সেই পরিমাণ নগদ অর্থ জমা দিতে হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন