বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সম্মতিতে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2022/09/hasina-modi-1-20220908131939.webp)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে ঢাকা ও নয়াদিল্লি যৌথ সম্মতিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে উভয়পক্ষ এসব সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে।
গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপাক্ষিক ও একান্ত বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আঞ্চলিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বন্ধুত্ব ও অংশীদারত্বের চেতনায় বৃহত্তর সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো-
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রেলসংযোগ উন্নয়ন সম্পর্কিত
>> টঙ্গী-আখাউড়া লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর
>> বাংলাদেশ রেলওয়েতে রেলওয়ে রোলিং স্টক সরবরাহ
>> ভারতীয় রেলওয়ের স্বনামধন্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ
>> বাংলাদেশ রেলওয়ের সেবার উন্নতি নিশ্চিতে আইটি-সংক্রান্ত সহযোগিতা প্রদান।
বাংলাদেশ-ভারত রেলসংযোগের উন্নয়নে গৃহীত নতুন উদ্যোগ
>> কাউনিয়া-লালমনিরহাট-মোগলঘাট-নিউ গীতালদহ রেল সংযোগ
>> হিলি ও বিরামপুরের মধ্যে রেলসংযোগ স্থাপন
>> বেনাপোল-যশোর রেলপথ ও সিগন্যালিং ব্যবস্থা এবং রেলস্টেশনের মানোন্নয়ন
>> বুড়িমারী ও চ্যাংড়াবান্ধার মধ্যে রেলসংযোগ পুনঃস্থাপন
>> সিরাজগঞ্জে একটি কনটেইনার ডিপো নির্মাণ।
এসব অগ্রগামী প্রকল্পের জন্যে বাংলাদেশ ও ভারত দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগিতার অধীনে একাধিক আর্থিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে প্রকল্পসমূহের অর্থায়ন নিশ্চিতকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশের অনুরোধে অনুদানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২০টি ব্রডগেজ ডিজেল লোকোমোটিভ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ধাক্কা থেকে রক্ষায় পদক্ষেপ
ভারত থেকে বাংলাদেশে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের মতো প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের কাঙ্ক্ষিত সরবরাহ নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থায় দুদেশের মধ্যে পণ্য সরবরাহের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়।
মানুষ ও পণ্যের স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ চলাচলের সুবিধা নিশ্চিতকরণ, আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে চলমান উন্নয়নমূলক কাজগুলো দ্রুত সম্পন্নকরণ, যার মধ্যে চার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের বিভিন্ন সীমান্ত ক্রসিংগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অভিবাসন এবং বাণিজ্য-সম্পর্কিত অবকাঠামো রয়েছে।
# সীমান্ত নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা
>> একটি শান্ত ও অপরাধমুক্ত সীমান্ত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ত্রিপুরা সেক্টর থেকে শুরু করে সমগ্র সীমান্তের কাঁটাতারবিহীন অংশগুলোতে কাঁটাতার নির্মাণের কাজ শেষ করার বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত একমত হয়।
>> সীমান্ত রক্ষাবাহিনী কর্তৃক পদক্ষেপের মাধ্যমে সীমান্তে মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাসকরণ। অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকার চোরাচালান এবং পাচার রোধে বিশেষত নারী ও শিশুপাচার রোধে পারস্পরিক সহযোগিতাও প্রশংসিত হয়েছে।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াইয়ে প্রতিশ্রুতি
>> উভয়পক্ষই সন্ত্রাসবাদের সব রূপ ও অভিব্যক্তি নির্মূলে তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
>> এ অঞ্চল ও এর বাইরে সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা এবং মৌলবাদের বিস্তার প্রতিরোধে ও সে সম্পর্কিত পদক্ষেপে সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে ঢাকা-নয়াদিল্লি।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা
>> বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য যানবাহন সংগ্রহের পরিকল্পনাসহ ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা লাইন অব ক্রেডিটের অধীনে প্রকল্পগুলোর প্রাথমিক চূড়ান্তকরণে সম্মত হয়েছে দুই দেশ;
>> বর্ধিত সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২০১৯ সালে স্বাক্ষরিত উপকূলীয় রাডার সিস্টেম সমঝোতা স্মারকের প্রাথমিক কার্যকারিতা চূড়ান্তকরণের সিদ্ধান্তও হয়েছে।
নদীর পানি-সংক্রান্ত সহযোগিতা
>> এক দশকেরও বেশি সময় পর যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রীপর্যায়ের সভা আহ্বান করা, যেখানে সমস্ত অভিন্ন নদীর ব্যাপারে সহযোগিতার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়, যা প্রশংসিত হয়েছে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে।
>> আসাম রাজ্য সরকারসহ ভারতের সব অংশীদারদের সহযোগিতায় কুশিয়ারা সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এটি শুষ্ক মৌসুমে উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের জমিতে সেচ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কৃষকদের সাহায্য করবে। একইভাবে দক্ষিণ আসামও এর দ্বারা উপকৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
>> ফেনী নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের অনুরোধের বিষয়টি দ্বিপাক্ষিক সভায় উল্লেখ করা হয়েছে।
>> ত্রিপুরার জনগণের জন্য পানীয় জল প্রকল্পটির মাধ্যমে শিগগির ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কর্তৃক প্রদত্ত অনুমোদন এবং ছাড়পত্রের ভিত্তিতে ২০১৯-এ স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক কার্যকর হবে।
>> তথ্য বিনিময় ও অন্তর্বর্তীকালীন পানি বণ্টন চুক্তির কাঠামো প্রণয়নের জন্য এখন আরও অন্যান্য নদীগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
>> গঙ্গার জলের সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য একটি সমীক্ষা পরিচালনা করতে যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনে উভয়পক্ষই সম্মত হয়।
>> ২০১১ সালে চূড়ান্ত হওয়া তিস্তা চুক্তি শেষ করার জন্য বাংলাদেশ পুনরায় অনুরোধ জানায়।
>> নদী দূষণ মোকাবিলা, নদীর পরিবেশ ও নাব্যতা উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়াতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা
>> সিঙ্ক্রোনাস গ্রিড কানেকটিভিটির মাধ্যমে কাটিহার (বিহার) থেকে পার্বতীপুর (বাংলাদেশ) হয়ে বোরনগর (আসাম) পর্যন্ত একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৭৬৫ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনে ‘স্পেশ্যাল পারপাজ ভেহিকল’ বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ। এ সংযোগের মাধ্যমে মৌসুমি চাহিদামাফিক বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি ও রপ্তানি উভয়ই সহজতর করবে
এসব অগ্রগামী প্রকল্পের জন্যে বাংলাদেশ ও ভারত দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগিতার অধীনে একাধিক আর্থিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে প্রকল্পসমূহের অর্থায়ন নিশ্চিতকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন