পুড়ে যাওয়া দোকানের ভেতরে পড়ে ছিল মালিকের অগ্নিদগ্ধ মরদেহ
বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে ছেলে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি
মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জে কালিপদ বিশ্বাস(৪৫) নামে এক ব্যক্তির আগুনে পোড়া লাশ উদ্ধার হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারী শনিবার ভোরে মনিরামপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঝাঁপা বাঁওড়ের বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতুর পূর্বগেটের একটি দোকান থেকে তাঁর দগ্ধ লাশ উদ্ধার করেছেন। কালিপদ দাস সেতুর পূর্বগেটের মোবারকপুর গ্রামের মৃত বাঞ্ছারাম বিশ্বাসের ছেলে।
বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতুর পূর্বগেটের মুদি দোকান রয়েছে কালিপদ দাসের। প্রতিদিনের ন্যায়ে রাতে সেই দোকানে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। তাঁর সাথে দোকানটিও পুড়ে ছাই হয়েছে। এদিকে শরিবার ভোরে দোকানে আগুন জ্বলতে দেখে বাবাকে বাঁচাতে এসে দগ্ধ হয়েছেন কালিপদ বিশ্বাসের ছেলে অমিত বিশ্বাস (১৯)। তাঁকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মনিরামপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাফায়াত হোসেন বলেন, ভোর ৬টা ২৩ মিনিটে সরকারি জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আমরা পৌঁছানোর আগে টিনের দোকানের ৮০ ভাগ পুড়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে আমরা দোকানের ভিতরে থাকা মালিক কালিপদ বিশ্বাসের পোড়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশে হস্তান্তর করেছি।
সাফায়াত হোসেন বলেন, দোকানদার রাতে ভিতরে ঘুমানোর সময় মশা তাড়ানোর কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমান। এমনটি আমরা জানতে পেরেছি। তাছাড়া দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এই দুইটার কোন একটি হতে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। কালিপদ দাসের প্রতিবেশী ভাই সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, অনেক বছর আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ডান পা হারান কালিপদ। পরিবারে তাঁর স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে আছেন।
২০১৭ সালের দিকে ঝাঁপা বাঁওড়ের উপরে দ্বিতীয় ভাসমান সেতু নির্মিত হওয়ার পর আমরা পাড়ার সবাই সেঁতুর পূর্বপাড়ে কালিপদ বিশ্বাসকে একটি দোকান ধরিয়ে দিয়েছিলাম। সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, কালিপদর দোকানে ফ্রিজসহ প্রায় দেড় লাখ টাকার মালামাল ছিল। দোকানে তিনি মুদির মাল ও চা বিক্রি করতেন।
রাতে নিয়মিত তিনি দোকানে ঘুমাতেন। এই দোকানের উপর তার সংসার চলত। দোকানদারি করে তিনি মেয়েকে অনার্সে ও ছেলেকে সরকারি পলিটেকনিকে পড়াচ্ছিলেন। সঞ্জয় চৌধুরী আরও বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাঁর দোকানে চা পান করে আমরা গ্রামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাই। আমাদের সাথে কালিপদও গিয়েছিলেন।
রাত ৩টার দিকে তিনি দোকানে ফেরেন। এরপর ভোর পাঁচটার দিকে তাঁর দোকানে আগুন জ্বলতে দেখে আমরা দৌঁড়ে এসে ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়েছি। এরপর ফায়ার সার্ভিসের লোক আসে। সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, ভোরে বাবাকে ভিতরে পুড়তে দেখে তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন ছেলে অমিত বিশ্বাস। এখন সে হাসপাতালে ভর্তি। তার অবস্থা খুবই খারাপ।
মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বলেন, লাশ আমাদের হেফাজতে আছে। এই ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন