‘বিএনপি ধ্বংস ছাড়া মানুষের কল্যাণ করতে পারে না’
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি ধ্বংস ছাড়া মানুষের কল্যাণ করতে পারে না। জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই তাদের নানা ধরনের অজুহাত শুরু হয়েছে।’
বুধবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ ও উত্তর যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপট এবং দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের রায় কার্যকর করার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন, এ অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের দৃষ্টিতে সব থেকে যোগ্য ব্যক্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। তখন বাংলাদেশে যারা বিবেকবান ছিলেন, যারা বুদ্ধিজীবী ছিলেন, তাদের হাতেগোনা কয়েকজন হয়ত প্রতিবাদ করেছিলেন, কিন্তু বাকিরা কিছু বলেনি। এই খুনিদের কেন বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হলো?’
পৃথিবীর বহু দেশ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের গ্রহণ করেনি, এ কথা উল্লেখ করে এ ব্যাপারে পোল্যান্ডের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশিদের যে বিবেক ছিল, সেই বিবেক আমাদের দেশে কয়জন দেখিয়েছিল? এখন তো অনেক বিষয়ে আমরা দেখি কত রিট হয়, সুয়োমোটো অর্ডার হয়। এতো বড় অন্যায় যখন হলো তখন উচ্চ আদালতের বিবেক, সেটাও কি বন্দি ছিল? আমাদের দেশে এত বড় নামিদামি আইনজীবী থেকে শুরু করে এতো বিবেকবান ছিলেন, এখন একটু উনিশ থেকে বিশ হলে এতো কথা বলেন, কই তারা তো সেভাবে কোনোদিন তার প্রতিবাদ করেনি। হ্যাঁ, সবাই যে করেনি তা নয়, হাতেগোনা কয়েকজন করেছেন। যারা করেছেন তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।’
পঁচাত্তর সালের পরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর বিভিন্ন নির্যাতনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে দলটির সভাপতি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান নিজেকে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করত। কিন্তু সেই যুদ্ধাপরাধীদের প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা, মন্ত্রী বানিয়েছে। পাকিস্তানি পাসপোর্ট ধারীদের দেশে ফিরিয়ে এনেছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, ৭৫ থেকে ৯৬ পর্যন্ত, এই ২১ বছর যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই খুনিদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে। জেনারেল এরশাদও তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে। খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে এককভাবে নির্বাচন করে খুনি রশিদ, হুদাকে সংসদ সদস্য করেছিল, পার্লামেন্টে বিরোধী দলের চেয়ারে বসিয়েছিল।
পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা কোনো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেনি, এ দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদের লক্ষ্যই ছিল অর্থ-সম্পদ বানানো এবং বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। আমরা যে স্বাধীন দেশ, আমরা বিজয়ী জাতি, সেটাই তারা ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল। বাবার মতো এমন একজন মানুষ, যিনি তার জীবনের সবকিছু দেশের মানুষের জন্য ত্যাগ করেছিলেন, তার বিরুদ্ধেও অপপ্রচার করেছিল। এমনকি তার নামটা পর্যন্তও নিষিদ্ধ ছিল।’
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে দেশে ফিরে আসার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনির কাছ থেকে কোনো সুবিধা নিতে কখনো প্রস্তুত ছিলাম না। আমার থাকার জায়গা ছিল না। কখনো ছোট ফুফুর বাড়িতে, কখনো মেজো ফুফুর বাড়িতে, কখনো ভাড়া করা বাড়িতে থাকতাম, কিন্তু খুনির হাত থেকে কিছু নেব, এই প্রবৃত্তি কখনো আমার ছিল না।’
জিয়া পরিবারের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সম্পদ পাচার করা, জনগণের সম্পদ পাচার করা, খুনিদের মদদ দেওয়া, যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দিয়ে মন্ত্রী বানিয়ে বাংলাদেশকে একেবারে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র তারা বারবার করেছে। দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলেছে। মানুষের সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে। ৭৫ সালের পর যারাই এসেছে, তারাই বাংলাদেশকে নিয়ে এইভাবে ছিনিমিনি খেলেছে। দেশের মানুষের কোনো উপকার-উন্নতি তারা করে নাই। কারণ, এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না।’
বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে তিনি (খালেদা জিয়া) যান নাই। এটা তার সিদ্ধান্ত। আমি তো চেষ্টা করেছিলাম। আমি ফোন করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, আসেন সংসদে, আমরা সবাই মিলে সরকার গঠন করি, যে মন্ত্রণালয় চাইবেন সেই মন্ত্রণালয় দেব। কিন্তু নির্বাচনটা হোক। তিনি আসলেন না, নির্বাচন করলেন না। তারপর নির্বাচন ঠেকানোর নামে জ্বালাও-পোড়াও। জনগণ তাদেরকে প্রতিহত করেছে। এখনো সেই পোড়া মানুষগুলোর অনেকে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। অনেকের জীবন-জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আমি আমার সাধ্যমতো তাদেরকে সাহায্য করে যাচ্ছি। এটাই তাদের রাজনীতি। এটাই তাদের কাজ। তারা মানুষের কল্যাণ করতে পারে না, কিন্তু মানুষকে ধ্বংস করতে পারে। মানুষের ওপর অত্যাচার করতে পারে। মানুষকে নির্মমভাবে তারা খুন করে। যখন জনগণ প্রতিরোধ করেছে তখন খালেদা জিয়া ঘরে ফিরে গেছে। এখন আবার নির্বাচন সামনে যত আসছে, ততই তাদের নানা ধরনের অজুহাত।
তিনি আরো বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে সরকার গঠন করেছি বলেই জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করতে পেরেছি। দশ ট্রাক অস্ত্র পাচার মামলা করেছি। তার ছেলে মানি লন্ডারিং মামলায় শাস্তি পেয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা আছে বলেই সারা বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা সকল প্রতিবেশী দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে, প্রতিটি সমস্যার সমাধান করেছি। আজকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিস্ময়। এটা আমরা করতে পেরেছি জাতির পিতার আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করে, তার প্রদর্শিত পথে দেশ পরিচালনা করে।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আকতার হোসেন এবং উত্তরের সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুল ইসলাম রানা যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন