বিএনপিকে ভয়-ডর দেখিয়ে লাভ নাই, পদত্যাগেই সমস্যার সমাধান : গয়েশ্বর

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছে দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ব‌লে‌ছেন, ২০১৮ সালের মতো বিএনপিকে নির্বাচনে নিবেন, কাউকে ভাগিয়ে নিবেন তা হবে না। মানুষ আর ভাঙা নৌকায় উঠবে না।

রোববার (৫ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে ওই মানববন্ধনের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম ৭১।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের নেতা রিজভী, সরাফত আলী সপুসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি চাই। আমাদের দাবি একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। ’৯৬ সালে জামায়াতের সঙ্গে সেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেছে আওয়ামী লীগ। সেদিন তারা আদমজীতে বিএনপির সমাবেশে বোমা হামলা করে বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল।

আওয়ামী লী‌গের উদ্দেশে তি‌নি ব‌লেন, আপনারা ৩২ নম্বর বাসভবনে জামায়াতের নেতা মতিউর রহমান নিজামীকে নিয়ে বৈঠক করেছেন সেই ছবি আছে। আপনারা জনগণের আস্থা অর্জনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। ’৭১ সালের পরে লুটপাট ও কম্বল চুরি করার রেকর্ড আপনাদের আছে। ক্ষমতায় থাকতেই হবে- এই ধারণা থাকলে তাদের গণতন্ত্রমনা বলা যায় না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশে তিনি ব‌লেন, আপনি গণভবনে বসে আসন ভাগাভাগি করবেন, তা হতে পারে না। ’৯১ সালে আপনি গোপালগঞ্জ ছাড়া বাকি আসনে পরাজিত হয়েছিলেন, আর খালেদা জিয়া ৫টি আসনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। রাজত্ব যার নেশা, তার জন্য গণতন্ত্র নয়। আপনাকে ক্ষমতায় রেখে সাধারণ মানুষ ভোটের অধিকার কোনোদিনই ফিরে পাবে না। শুঁটকি মাছ পাহারার জন্য যেমন বিড়াল রাখা যাবে না, তেমনি ভোট পাহারা জন্য আপনাকে রাখা যাবে না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে এত জ্বালানি সংকট কেন? আসলে টাকা নাই। বিএনপির দাবি মানবেন কি মানবেন না- তা আপনাদের বিষয়, কিন্তু জনগণের দাবি মেনে দিনের ভোট দিনে নিতে হবে। মানুষ আর রাতের ভোট চায় না। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা ছাড়ুন, না হলে আপনাদের কি হবে তা কেউ জানে না।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অচিরেই আপনাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে, কোথায় যাবেন সেটা খুঁজুন। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, মানুষ বাঁচতে চায়। দেশটা কিন্তু ভাষণে মুক্ত হয় নাই, যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে।

গয়েশ্বর বলেন, আবারও ’৭৪ এর দুর্ভিক্ষ কড়া নাড়ছে। কাফনের কাপড় ছাড়া মানুষের দাফন হবার দিন ঘনিয়ে আসছে। মামলা আর রিজভীদের জেলে রেখে নির্বাচন দেবেন সেটা ভুলে যান। ২০১৮ সালের মতো বিএনপিকে নির্বাচন এ নিবেন, কাউকে ভাগিয়ে নিবেন তা হবে না। মানুষ আর ভাঙ্গা নৌকায় উঠবে না।

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের আজ ফুঁসে উঠেছে এই সরকারের বিরুদ্ধে। রিজভী, সরাফতকে আন্দোলন দমিয়ে রাখতে বন্দি করে রেখেছে এই ‘অবৈধ’ সরকার। কিন্তু আমরা বলতে চাই- কোনো কিছুই আমাদের আন্দোলন দমিয়ে রাখতে পারবে না।

বিএনপির এই নেতা ব‌লেন, অচিরেই এক দফা কর্মসূচি দিয়ে এই সরকারের পতন আন্দোলন শুরু করব আমরা। আগামী নির্বাচন কোনোভাবেই এই সরকারের অধীনে হবে না।

এছাড়া সভাপতির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম ৭১ এর সভাপতি ঢালী আমিনুল ইসলাম রিপন বলেন, অবিলম্বে আমাদের নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে হবে। গ্রেফতার করে আমাদের আন্দোলন কোনোভাবেই শেষ করা যাবে না। আমি আগামীর আন্দোলন-সংগ্রামে আপনাদের সবাইকে রাজপথে থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি।

জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম ৭১ এর সভাপতি ঢালী আমিনুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই মানববন্ধনে ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু না‌সের মো. রহমতুল্লাহ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, কৃষক দলের খলিলুর রহমান ভিপি ইব্রাহিম, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ উপস্থিত ছি‌লেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে গয়েশ্বর বলেন, মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, মানুষ বাঁচতে চায়। আর এই কারণে অ‌‌চিরেই আপনাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে, আপনার পতন নিক‌টে, আপ‌নি কোথায় যাবেন সেটা খুঁজুন।

গয়েশ্বর বলেন, সকল দুর্নীতির আড়তদার বর্তমান সরকার। লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) কোনো ব্যবস্থা নেননি। ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে আবারও চুক্তি করেছে অথচ ভারতেই তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হোক, না হোক ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। বিশ্ববাজারে কয়লার দাম ২০০ ডলার আর আদানির সঙ্গে ৪০০ ডলারে চুক্তি করেছে। আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি সরকারে সঙ্গে সরকারে নয়, একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে না, কোনো দল নির্বাচনে যাবে না, যারা যাবে তারা বেইমান হবেন। খাদ্য রেখে খান, বেলা থাকতে ঘরে ফিরুন। বিএনপিকে ভয়-ডর দেখিয়ে লাভ নাই, বিএনপি কাউকে ভয় পায় না। আপনি পদত্যাগ করুন, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন, তাহলেই সকল সমস্যার সমাধান হবে।