বিরোধীদলীয় প্রার্থীরা ভোটের প্রচারণায় দাঁড়াতেই পারেননি

একতরফা নির্বাচনী প্রচারণা শেষে রোববার ভোটদানের অপেক্ষা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে।

গত আড়াই সপ্তাহ ধরে প্রচারণায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের প্রার্থীরাই ছিলেন সরব।

অন্যদিকে, অনেক আসনে বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রচারণা চোখে পড়েনি।

প্রধান বিরোধীদল বিএনপির অভিযোগ, তাদের প্রচারণায় বাধা দেয়া হয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগও তাদের কর্মীদের উপর হামলার পাল্টা অভিযোগ করেছে।

কিন্তু ভোটের মাঠে সবাই সমান সুযোগ পেয়েছে এই দাবি করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আশা করছেন, উৎসবমুখর পরিবেশেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রচারণার সময়ে যে এলাকাগুলোতে উত্তেজনা ছিল, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দাপটের মুখে সেখানে বিরোধী দল বিএনপি দাঁড়াতে পারেনি।

এমন এলাকাগুলোর মধ্যে বরিশাল অন্যতম। সেখানে সবক’টি আসনেই ছিলো আওয়ামী লীগ এবং তার শরিকদের একতরফা প্রচারণা। তাদের পাশে ইসলামী আন্দোলনেরও সংগঠিত প্রচারণা ছিল।

কিন্তু বিএনপি সেভাবে প্রচারণায় নামতে পারেনি।

বরিশাল থেকে সাংবাদিক শাহীনা আজমীন বলছিলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বড় সমস্যা ছিল পুলিশী হয়রানি এবং গ্রেফতারের ভয়।

“বরিশালে প্রচারণায় বিএনপির অনেক অভিযোগ ছিল। তারা প্রচারণা করতে পারছিল না। তাদেরকে বাধা দিচ্ছিল। আওয়ামী লীগ পোস্টার লাগাতে দেয়নি। মাইকিং করতে দেয়নি, মাইক ভেঙ্গে ফেলেছে।”

“বিএনপির সবচেয়ে বড় ভয় ছিল গ্রেফতারের। বরিশাল সদরে ধানের শীষের প্রার্থীর গণসংযোগের সময় যে দু’একজন কর্মী ছিল, তাদেরও পুলিশ গ্রেফতার করে। উল্টোদিকে, আওয়ামী লীগ নির্বিঘ্নেই প্রচারণা চালিয়ে গেছে।”

সাংবাদিক শাহীনা আজমীন আরও জানান, “বরিশালে আরও পাঁচটি আসন আছে। সেখানে এক নম্বর আসনে বিএনপি প্রার্থী জহিরউদ্দিন স্বপন প্রচারণার শুরু থেকে তাঁর নিজের ইউনিয়নে অনেকটা অবরুদ্ধ আছেন। তিনি প্রচারণা চালাতে পারেননি।”

একই চিত্র ছিল অনেক নির্বাচনী এলাকাতে।

এমনকি রাজধানী ঢাকার আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ এবং তাদের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের সরব প্রচারণা ছিল। তাদের পোস্টারেই ছেয়ে রয়েছে ঢাকার রাস্তাগুলো।

এই আসনগুলোতে বিএনপির যে কোন প্রার্থী আছে, সেটাই বোঝার কোন উপায় নাই।

ঢাকার বেশির ভাগ আসনে বিএনপি প্রার্থীদের প্রচারণা খুব একটা দৃশ্যমান ছিল না।

বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য শামসুজ্জামান দুদু বিবিসিকে বলছিলেন, কিছু এলাকায় তাদের প্রার্থী বা সংগঠনের দুর্বলতা থাকতে পারে। কিন্তু প্রচারণার প্রশ্নে তারা আওয়ামী লীগের চেয়ে প্রশাসনের বাধার কারণে বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন।

“আসলে এক্ষেত্রে পুলিশ এবং প্রশাসন একটা পক্ষ নিয়ে ফেলেছে। তারা আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়েছে। সেকারণে ধানের শীষের পক্ষের লোকের ওপর হামলা করেছে বা হামলার উস্কানি দিয়েছে। বিএনপির ৩১জন প্রার্থীর ওপর আক্রমণ হয়েছে। পুলিশ অথবা সন্ত্রাসী অথবা আওয়ামী লীগ এই হামলাগুলো করেছে।”

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া শুক্রবার সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, পুলিশের আচরণ পক্ষপাতমূলক নয়।

পুলিশ যা কিছু করছে নিরপেক্ষতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে করছে বলে তিনি বলেন।

প্রচারণায় ভিন্ন চিত্রও ছিল কিছু এলাকায়। রাজশাহী নগরী মুখর ছিল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিসহ সব দলের প্রার্থীদের প্রচারণায়।

রাজশাহী থেকে সাংবাদিক আনোয়ার আলী বলছিলেন, রাজশাহীর অন্য আসনগুলোতে অনেক অভিযোগ থাকলেও নগরীতে কারও প্রচারণায় বাধা ছিল না।

“রাজশাহী শহরের আসনে প্রচারণায় ভিন্নমাত্রা ছিল। যেখানে নৌকা প্রতীক এবং ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী-দু’জনই সমানতালে প্রচারণা চালিয়েছেন,” বলছেন তিনি।

“রাজশাহী শহরের বাইরে অন্য আসনগুলো থেকে বিএনপি প্রার্থীরা তাদের প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলেছিল। সেখানে নির্বাচনী অফিস কোথাও কোথাও ভেঙ্গে দিয়েছে। কোথাও কোথাও পুড়িয়ে দিয়েছে। কোন কোন আওয়ামী লীগ প্রার্থীও অভিযোগ করেছেন যে, কোথাও কোথাও তাদের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে।”

যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, বিএনপি আন্তর্জাতিক মহল এবং গণমাধ্যমের সহানুভূতি পেতে অনেক বেশি অভিযোগ করেছিল।

কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, তাদের দল মাঠ নিজেদের দখলে রাখার কৌশল নিয়ে প্রচারণায় নেমেছিল।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দুর রহমান বলছিলেন, মাঠে সরব থাকার বিষয়টি দলগুলোর সাংগঠনিক শক্তির ওপর নির্ভর করে বলে তারা মনে করেন।

“আওয়ামী লীগ মনে করে, সব দলই যার যার সামর্থ্য বা শক্তি অনুযায়ী প্রচারণা চালিয়েছে। যার সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে, সেখানে তার প্রচারণা কম হয়েছে। যার সংগঠন যেখানে ভাল, সেখানে তার প্রচারণা বেশি হয়েছে।”

প্রচারণা শেষে সব দলই ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দেয়ার বিষয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বিএনপি এবং তাদের জোট সারাদেশে এজেন্ট নিয়োগ করতে পারবে কিনা, সেটিই এখন তাদের বড় চিন্তার বিষয় বলে দলটির নেতারা বলছেন।