বিলকিসের প্রেমের পাতা ফাঁদে পড়ে বিপাকে বিত্তবানরা
প্রথমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে বিত্তবানদের মোবাইল ফোন নম্বর জোগাড় করতো খোকন আকন্দ। পরের দায়িত্বে থাকতো তার সহযোগী বিলকিসের উপর। জোগাড় করা সেই সব ফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে জানানো হতো বন্ধুত্বের আহবান। আর তারপর প্রেমের ফাঁদ।
এই ফাঁদে পা দেয়া বিত্তবান ব্যক্তিদের সুকৌশলে ডেকে নেয়া হতো সুবিধাজনক স্থানে। সেখানে অন্তরঙ্গ হতেই খোকন সাংবাদিক বা পুলিশ পরিচয়ে হাজির হয়ে তাদের ছবি তুলত। সেই ছবি পরিবারের কাছে পাঠানো বা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হতো টাকা।
এভাবে বেশ ভালোই চলছিলো খোকন-বিলকিসের প্রতারণার কারবার। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। বৃহস্পতিবার ঢাকার সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় এই দুজনকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় তিনটি মোবাইল ফোন, চেক বইয়ের পাতা ও স্ট্যাম্প।
পরের দিন শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল হক এই বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
নাজমুল হক জানান, খোকন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে বিত্তবানদের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করত। এরপর বিলকিস বিভিন্ন পরিচয়ে কল বা এসএমএস দিয়ে ‘বন্ধুত্ব’ গড়ে কৌশলে প্রলুদ্ধ করে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হত।
এ সময় খোকন সাংবাদিক কিংবা পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাদের ছবি তুলে পরে পরিবারের কাছে পাঠানো বা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি বা ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত। কখনো কখনো ভুক্তভোগী ইচ্ছা প্রকাশ না করলে জোরপূর্বক এসব কাজ করানো হতো।
এই ভাবে প্রায় শতাধিক বিত্তবানকে নগ্ন ভিডিওর ফাঁদে ফেলে পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিলকিস ও তার সিন্ডিকেট। শুধু ডেরায় নিয়ে টাকা হাতানোই নয়, বাইরে দেখা করার কথা বলে অপহরণ এবং যাকে যেভাবে ফাঁদে ফেলে যায় সেভাবে ফাঁদে ফেলে জিম্মি করতেন বিলকিস।
ভুক্তভোগীর সঙ্গে এটিএম কার্ড থাকলে সেগুলোর পিন নম্বর নিয়ে অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে চোখ বেঁধে নির্জন স্থানে ফেলে রাখা হতো। আর যারা প্রেমের ফাঁদে পা না দিতেন তাদের পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত কাজের কথা বলে সুবিধাজনক স্থানে আসতে বলা হতো।
পরে রেস্টুরেন্টে গিয়ে কথা বলবেন জানিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে চোখ বেঁধে নিজের ডেরায় নেওয়া হতো। সেখানে বিলকিসের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে বাধ্য করা হতো। পরে তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হতো।
এভাবে ফাঁদে পড়েন একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা। পরিবারের বেশ কয়েকজন ইনস্যুরেন্স করবেন জানিয়ে ওই কর্মকর্তাকে ডাকা হয়। পরে সিএনজিতে তুলে নির্জন এলাকায় নিয়ে পকেটে থাকা ৩৫ হাজার এবং এটিএম কার্ড থেকে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
এখানেই শেষ নয়, চারটি চেকে ও বেশ কয়েকটি স্ট্যাম্পে সই রাখা হয়। বেধড়ক মারধর করে জোরপূর্বক নগ্ন ভিডিও করা হয়। পরে ওই ভিডিও পাঠিয়ে দাবি করা হয় ২০ লাখ টাকা। এরপর ওই ভুক্তভোগী ২৬ অক্টোবর ডিএমপির দারুসসালাম থানায় মামলা করেন।
সেই মামলার তদন্তে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করে সাভার থানা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, ২০১৮ সাল থেকে শতাধিক ভুক্তভোগীকে ফাঁদে ফেলে তারা কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ চক্রে আরও দু-তিন জন সদস্য রয়েছেন।
এ ধরনের অপরাধের ফাঁদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে অনলাইনে পরিচিত ব্যক্তি ছাড়া বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ না করা, অল্পদিনের সম্পর্কে কারো প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে একান্তে মিলিত না হওয়া, যাচাই-বাছাই ছাড়া কারো সঙ্গে সম্পর্কে না জড়ানো; অপরিচিত বা অল্প পরিচিত কারো কথায় কোনো অজ্ঞাত স্থানে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাইবার পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন