বিশাল কারাগারে একমাত্র বন্দি খালেদা জিয়া
রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে স্থানান্তরের পর সাত হাজার বন্দি ধারণক্ষমতার কারাগারটি সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে যায়। একসময় বন্দি, জেলখানার কর্মকর্তা-কর্মচারী, দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর কারাগার ও আশপাশের এলাকা এখন অনেকটাই নির্জন, সুনসান।
যদিও দুইশ বছরের পুরোনো এই কারগারকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। সেখানে এখনো দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড চালায় কারা কর্তৃপক্ষ। আর মোগল আমলের তৈরি এ কারাগারটির ভেতরে রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু কারা স্মৃতি জাদুঘর’ এবং ‘জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর’।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার বিশেষ আদালতে সাজা ঘোষণার পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ১৭ একর জমির ওপর নির্মিত এই কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতের অনুমতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হলে তাঁকে কোথায় রাখা হবে—এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে চলছিল আলোচনা। প্রথমে তাঁকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখার কথা ভাবা হলেও আদালতে আনা-নেওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তা বাতিল করা হয়। তার পরেই ভাবা হয় নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারটির কথা। এর পরে কারাগারটি ধোয়ামোছার কাজ শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ।
কারাগারের ফটকের পরেই যে ভবনের নিচতলার কক্ষে খালেদা জিয়ার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেই কক্ষটি ব্যবহার করতেন কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক। বড় এই কক্ষে বাথরুমসহ তাঁর থাকার জন্য অন্যান্য জিনিসিপত্র ও খাট একদিন আগেই নিয়ে আসা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কারা প্রশাসনের ঢাকা বিভাগের উপমহাপরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম।
শুক্রবার সকালে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জেল কোড অনুসারে খাবার-দাবার থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণির বন্দি হিসেবে সব সুবিধা পাবেন খালেদা জিয়া।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কারা কর্মকর্তা জানান, খালেদা জিয়াকে বিশাল একটি কক্ষ দেওয়া হয়েছে। ওই কক্ষটি আগে জেল সুপারের দপ্তর হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কক্ষটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। সেখানে এসি লাগানো হয়েছে, দেওয়া হয়েছে টিভির সংযোগ। এ ছাড়া বিছানা, মশারি, চেয়ার-টেবিল, একটি দৈনিক পত্রিকা ও একজন কাজের মানুষ, রান্নাঘর, স্বাস্থ্যসম্মত প্রসাধন কক্ষ ও আরামদায়ক বিছানার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কয়েকবারের প্রধানমন্ত্রী। তিনি একটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান। তাঁর সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করেই তাঁকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারের বিশেষ একটি সেলে রাখা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান রায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়া, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সলিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।
এ মামলায় মোট আসামি ছয়জন। তাঁদের মধ্যে তিনজন পলাতক। এই তিনজন হলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
রায়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বাকি আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর পরই কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে পুরান ঢাকার পুরোনো কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন