বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান ডেথ ভ্যালি!
বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানের মধ্যে অন্যতম হলো ডেথ ভ্যালি। নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, স্থানটি কতটা ভয়ংকর। তবে জানলে অবাক হবেন, এমন বিপজ্জনক স্থানেও আছে মানুষের বাস।
ডেথ ভ্যালি ক্যালিফোর্নিয়া এবং নেভাদা সীমান্তে অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে তাপমাত্রা বিরাজ করে ডেথ ভ্যালির মরুভূমিতে। এটি বিশ্বের অন্যতম উষ্ণ স্থান হিসেবে পরিচিত। মধ্য প্রাচ্য এবং আফ্রিকাতে কেবলমাত্র কয়েকটি মরুভূমি আছে। যেখানে গ্রীষ্মে তাপমাত্রায় শীর্ষে পৌঁছায়।
জুলাই ২০১৮ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম স্থানের তকমা অর্জন করে ডেথ ভ্যালি। সবচেয়ে উষ্ণতম মাসের রেকর্ড হিসেবে, ওই বছরের একটানা চার দিন ১২৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রা ধরা পড়ে। যা তাপমাত্রার সর্বোচ্চ রেকর্ড।
এই রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যায় অতীতের পরিসংখ্যান। ১৯১৩ সালের ১০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া ব্যুরো ডেথ ভ্যালির উচ্চ তাপমাত্রা ১৩৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট রেকর্ড করে। যা পৃথিবীর পৃষ্ঠে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, সেখানকার বাসিন্দারা কীভাবে প্রকৃতির সঙ্গে টিকে আছে!
১৮৪৯-১৮৫০ সালে শীতের সময় এখানে বসতি স্থাপন করে একদল মানুষ। তারাই ডেথ ভ্যালির নাম দেয়। শীতকালেও সেখানে প্রচণ্ড গরম থাকে। এ কারণে ওই দলের মধ্যে বেশ কয়েকজন মারাও যান। তারা ভেবেছিলেন, এই উপত্যকাই হয়তো তাদের কবরস্থান হবে।
তবে দু’জন যুবক, উইলিয়াম লুইস ম্যানলি এবং জন রজার্স তাদেরকে রক্ষা করেছিল। ওই দলের কয়েকজন যখন হেলিকপ্টারে করে উড়ি যাচ্ছিলেন; তখনই তারা বলেন, ‘বিদায়, ডেথ ভ্যালি’। এরপর থেকেই স্থানটির নাম রটে যায় ডেথ ভ্যালি।
বিভিন্ন রহস্যে ঘেরা এই ডেথ ভ্যালি। এর সৌন্দর্য যেমন মানুষকে মুগ্ধ করে; ঠিক তেমনিই এর আবহাওয়া মানুষকে মারার জন্যই যথেষ্ট। প্রকৃতির এক অপার বিস্ময় লুকিয়ে আছে ডেথ ভ্যালিতে। আপনি জানলে অবাক হবেন, এই মরুভূমিতে বিশালাকার সব পাথর একাই চলাচল করে। বিষয়টি অবিশ্বাস্য হলো সত্যিই।
এসব পাথরে স্লাইডিং, রকিং বা ওয়াকিং স্ট্রোন বলা হয়। এই পাথরগুলো নিজেরাই চলাচল করতে পারে! যেন মনে হয়, তাদেরও প্রাণ আছে! একেকটা পাথরের ওজন কয়েকশ কেজিরও বেশি। বিষয়টি প্রথম ১৯১৫ সালে লক্ষ্য করেন নেভাডার পর্যবেক্ষক জোসেফ ক্রক।
তবে বিজ্ঞান বলছে, তীব্র বাতাস ও তাপমাত্রা তারতম্যের কারণে পাথরগুলো দিক পরিবর্তন করে। তবে যা-ই হোক না কেন বিষয়টি কিন্তু খুবই রহস্যময়। এ পাথরগুলো কিন্তু সবসময় সোজা পথ পাড়ি দেয় না।
সোজা চলার পথে কিছুটা আঁকাবাঁকা হয়ে অনেক দূর পর্যন্ত অতিক্রম করে পাথরগুলো। এককটি পাথর ২-৩ বছরে একবার করে পথ পাড়ি দেয়। আর চলার সময় তাদের গায়ের ছাপ পড়ে যায় মরুভূমির বালুতে।
ডেথ ভ্যালি ভয়ঙ্কর সুন্দর রূপ চাইলেই কিন্তু আপনি দেখতে পারেন। প্রতিবছর লাখো পর্যটকের আনাগোনা দেখা যায় সেখানে। ১৯৩৩ সালে ডেথ ভ্যালিকে জাতীয় স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৯৪ সালে ডেথ ভ্যালিকে ন্যাশনাল পার্কে রূপান্তরিত করা হয়।
মে মাসে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেথ ভ্যালির প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রতিকূলে চলে যায়। আবার নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত পরিবেশ ভালো থাকে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসই উত্তম ডেথ ভ্যালি ঘুরতে যাওয়ার জন্য।
ডেথ ভ্যালিতে গেলে আরও দেখতে পারবেন ডেভিলস হোল, যা ৫০ হাজার বছর আগে লবণের কঠিন আস্তরণে গঠিত। এ ছাড়াও ডেথ ভ্যালির সর্বোচ্চ চূড়া টেলেস্কোপ পিক (উচ্চতা ৩ হাজার ৩৩৬ মিটার) দেখতে পারবেন। এ ছাড়াও রংবেরঙের পাথরের পর্তমালার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন ডেথ ভ্যালিতে।
সূত্র: বিবিসি/ট্রাভেল ট্রায়েঙ্গেল
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন