বৃষ্টি-বাদলা উপেক্ষা করে পূজামণ্ডপে আ.লীগ নেতাদের ব্যস্ততা
বৃষ্টি-বাদলা উপেক্ষা করে আনন্দমুখর পরিবেশে সারা দেশে উদযাপিত হচ্ছে সনাতনী হিন্দুধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। ইতিমধ্যে পূজামণ্ডপগুলো নানা বয়সী মানুষের সমাগমে সরগরম হয়ে উঠেছে। তাতে যোগ দিচ্ছেন সব ধর্মের মানুষ। তাদের মধ্যে আছেন রাজনৈতিক নেতারাও।
তারা মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরছেন, পূজারিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। মুসলমানদের বড় দুটি উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো দুর্গাপূজার সময় তারা প্রতি বছর কুশল বিনিময় করেন। তবে সামনের বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন বলে এবার মণ্ডপে তাদের ব্যস্ততা তুলনামূলক বেশি। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ঢুঁ মারছেন মণ্ডপে।
এই প্রতিবেদনে থাকছে আওয়ামী লীগের নেতাদের পূজার ব্যস্ততার খবর। তাদের অনেকে দুঃস্থ হিন্দুদেদের মধ্যে কাপড়, নগদ অর্থ বিতরণ করছেন।
গত মঙ্গলবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় দূর্গাপূজা। কাল শনিবার মহাদশমীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে দেবী বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে সনাতন ধর্মালম্বীদের এ ধর্মীয় উৎসব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, দেশে এবার মোট ৩০ হাজার ৭৭টি পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব উদযাপন হচ্ছে। তার মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে আছে ২৩১টি। গত বছর সারা দেশে ২৯ হাজার ৩০০টি মণ্ডপে হয় দুর্গাপূজা।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার একটি দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান রয়েছে। সব উৎসবেই সব জাতি-ধর্মের মানুষ অংশ নেন।
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তবে এবার তিনি জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে দেশের বাইরে থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, মুসলিমরা যেমন ঈদের সময় বেশির ভাগ মানুষই গ্রামে ফিরে যায়, তেমনি হিন্দু ধর্মালম্বীরাও দুর্গাপূর্জার সময় নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেন। এ সময় পূজামণ্ডপে গেলে তাদের সঙ্গে দেখা হয়। এ ছাড়া এ উৎসবে শুধু হিন্দু নয়, সব ধর্মের মানুষই উপস্থিত থাকে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন পূজামণ্ডপে যাচ্ছেন। রাজধানীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ছাড়াও তিনি গত সোমবার কক্সবাজারের ইন্দ্রসেন দুর্গাবাড়ি পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি হিন্দুসম্প্রদায়ের সঙ্গে শারদীয় শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বৃহস্পতি ও শুক্রবার ফরিদপুরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে নগদ অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ করেন।
মন্ত্রী জানান, ফরিদপুর জেলায় এবার ৭৩৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। এই দেশে সব ধর্মের মানুষ সমানভাবে তাদের ধর্মীয় কাজ পরিচালনা করছে।’
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বৃহস্পতিবার থেকেই ফরিদপুরে রয়েছেন। শনিবার পর্যন্ত তার সেখানে থাকার কথা রয়েছে। তার নির্বাচনী এলাকা ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসনের ১৫০টি পূজামণ্ডপের মধ্যে শতাধিক পরিদর্শন করার কথা রয়েছে তার। এসব পূজামণ্ডপে তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আর্থিক অনুদান দিচ্ছেন।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। সেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নেন।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য পূজা উপলক্ষে যশোরেই অবস্থান করছেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পূজায় খুব ব্যস্ত সময় পার করছি। এলাকার প্রায় সব মণ্ডপ ঘুরে দেখার চেষ্টা করছি।’
রমেশ চন্দ্র সেন ঠাকুরগাঁও আছেন পূজার শুরু থেকে। থাকবেন শেষ পর্যন্ত। তিনি বলেন, ‘উৎসব উদযাপনের পাশাপাশি আমরা পূজারিদের নিরাপত্তার বিষয়েও কাজ করছি। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই আমাদের উৎসব চলছে। নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে আমরা এখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বুধবার তার নির্বাচনী এলাকা কুষ্টিয়ার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখেন। সেখানে সবার সঙ্গে শারদীয় শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
হানিফ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি আমাদের দেশের সব ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় উৎসব উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করবে। আর ধর্ম যার যার, উৎসব সবার- এই কনসেপ্টটা আমরা বিশ্বাস করি। শারদীয় উৎসবে সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতেই আমরা সব সময় চেষ্টা করি।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি দলীয় সফরে চীন অবস্থান করছেন। শুক্রবার তার দেশে আসার কথা রয়েছে। তবে তার পক্ষে চাঁদপুরে বিভিন্ন মণ্ডপে অনুদান দিচ্ছেন অনুসারীরা।
আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকও নিয়মিত ঢাকার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখছেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের শুক্রবার মাদারীপুরে তার নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন পূজামণ্ডপে যাওয়ার কথা রয়েছে। আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বৃহস্পতিবার শরীয়তপুরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী পূজার শুরুতে দিনাজপুরের বিরলে পূজা উদযাপন কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকেন। এরপর গত বুধবার থেকে তার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি অনুদান দেন এবং দুঃস্থদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করেন।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সারা দেশের ৩০ হাজারের বেশি পূজামণ্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় পূজা উদযাপন প্রমাণ করে বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এই চেতনার বীজ বপন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর তা বাস্তবায়ন করছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা।’
তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন চীন সফর থেকে এসেই বৃহস্পতিবার সকালে পটুয়াখালী সফরে যান। তিনি সেখানে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং মতবিনিময় করেন।
দলের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস পূজার শুরু থেকে মুন্সিগঞ্জের নির্বাচনী এলাকায় রয়েছেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এলাকার মানুষের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য পূজার শুরু থেকেই এলাকায় আছি। থাকব শেষ পর্যন্ত।’
সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের চীন সফরে ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় ফিরে শুক্রবার চলে গেছেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া-আটপাড়ায়। এর আগে তার পক্ষ থেকে সহধর্মিণী এবং আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল গত ২৩ সেপ্টেম্বর কেন্দুয়া-আটপাড়া ঘুরে আসেন। তখন সরকারি তহবিল থেকে ২৮টি পূজামণ্ডপে সরকারি অনুদান দেন। এ ছাড়া অসীম-অপু দম্পতি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অনুদান দেন ৭৫টি মণ্ডপে।
দলটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী শুরু থেকে নিয়মিত ঢাকার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘোরেন। পূজা অর্চনার পাশাপাশি সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। মহানবমী ও দশমী উদযাপনে আজ শুক্রবার নিজ এলাকা চাঁদপুরে গেছেন তিনি। সেখানে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করবেন।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতা বিভিন্ন মণ্ডপ পরিদর্শন করছেন। তারা পূজারিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনছেন এবং তার সমাধানের চেষ্টা করছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন