বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ত্রাণের ৩০০০ বোতল পানি ট্রাকে তুললেন দুই ম্যাজিস্ট্রেট

শ্রমিক না পেয়ে সেন্টমার্টিনে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাঠানো ত্রাণের ৩০০০ পানির বোতল নিজেরাই ট্রাকে তুলেছিলেন দুই ম্যাজিস্ট্রেট। প্রায় একমাস পর তার পুরস্কার পেলেন তারা। তারা আবদুস সামাদ শিকদার ও সৈয়দ মোরাদ আলী ।বিসিএসের ৩৪ তম ব্যাচের এই দুই কর্মকর্তা বর্তমানে কর্মরত আছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনে।

কি হয়েছিল সেদিন? বলা যাক এবার সেটি। ঘটনাটি প্রায় একমাস আগের। সেদিন ৩০ মে। ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাত হানার পরের দিন।

মোরার কারণে রাতভর দায়িত্ব পালন শেষে অফিস থেকে সকাল ১১টায় বাসায় ফেরেন আবদুস সামাদ শিকদার ও সৈয়দ মোরাদ আলী। কিন্তু দুপুর ১২টা বাজতেই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান সিকদারের ফোন।

ফোনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তাদের দুজনকে নির্দেশ দিলেন এভাবে, ‘ত্রাণ নিয়ে সেন্টমার্টিন যাবে নৌবাহিনীর জাহাজ সমুদ্রযাত্রা।দুই ঘন্টার মধ্যে এক ট্রাক শুকনা খাবার আর এক ট্রাক পানি নিয়ে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাটিতে পৌঁছাতে হবে তোমাদের।’

তখন আকাশ ভেঙে পড়েছিল মুষলধারে বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি মাড়িয়ে নির্দেশ পাওয়ার পর দুজনই ছুটলেন নগরীর বকশীরহাট বাজারে। সেখানে গিয়ে শুকনা খাবার ট্রাকে ভরতে ভরতেই এক ঘণ্টা শেষ।কিন্তু বিপত্তিটা বাধলো এরপরেই।পানির বোতল নিতে গিয়ে দুজনেই আবিষ্কার করলেন ট্রাক নেই। খোঁজাখুজির পর অনেক অনুনয়ে একটি ট্রাক ম্যানেজ করা গেল। কিন্তু কোনো শ্রমিক নেই সেখানে।

ওদিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান সিকদার ফোনে তাড়া দিচ্ছিলেন দ্রুত যেতে।

কি আর করা দুজনেই নেমে পড়লেন পানির বোতল ট্রাকে তোলার দায়িত্বে। বৃষ্টিতে ভিজে জবুথবু হয়ে ৩০০০ বোতল পানি ট্রাকে তুলে ছুটলেন ঈশা খাঁ ঘাটির উদ্দেশ্যে। যথাসময়েই তাদের ট্রাক দুটি পৌঁছলো সেখানে।

এর দুদিন পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া চট্টগ্রাম সফরে এলেন। তখন মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান সিকদার দুই ম্যাজিস্ট্রেটকে দিখিয়ে মন্ত্রীকে বলেছিলেন, আমার এই দুই অফিসার নিজ হাতেই এক ট্রাক ত্রাণের পানি লোড করেছিলেন। মন্ত্রী তখন বাহবা দিয়েছিলেন দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে।

তারও এক মাস আগের সেই ‘ত্যাগের’ আরও একটা পুরস্কার পেলেন এই ম্যাজিস্ট্রেট। সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান সিকদার নিজের কার্যালয়ে ডেকে পাঠান দুই ম্যাজিস্ট্রেটকে। পরে তাদের হাতে তুলে দেন আর্থিক পুরস্কার। বলেন এটা তোমাদের সেই সেদিনের কষ্টের পুরস্কার।

এই প্রণোদনা পেয়ে দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটই খুশি।

জানতে চাইলে সৈয়দ মোরাদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুরস্কারের আশায় করিনি। দূর্যোগ আক্রান্ত মানুষের জন্য কিছু না করতে পারলে কিসের পাবলিক সার্ভেন্ট?সেই মানুষগুলোর জন্য এতটুকু কষ্ট করতে পেরে তাই আমরা দুজনেই খুশি। আর স্যারের কাছ থেকে এমন প্রণোদনা পেয়ে আরও খুশি লাগছে।’

আবদুস সামাদ শিকদারের কণ্ঠেও একই সুর।