বেশি নম্বর পাওয়ায় বন্ধুর পানিতে বিষ

ছোটবেলা থেকেই মা-বাবা এমনকি শিক্ষকরাও শিখিয়ে থাকেন পড়াশোনায় অপরকে হিংসা করা বৈধ। কিন্তু তাই বলে সেই হিংসাটা কোনোভাবেই অপরের প্রাণ নাশ করে?

এরকমই এক ঘটনা ঘটেছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের সাতনার একটি বেসরকারি স্কুলে। পরীক্ষায় নম্বর বেশি পাওয়ায় সহপাঠীকে বিষ খাইয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে।

তবে জোর করে বিষ খাওয়ানো হয়নি। কৌশলে একই শ্রেণির এক ছাত্রীর পানির বোতলে বিষ মিশিয়েছেন আরেক ছাত্রী। শিক্ষক তখন পড়াচ্ছিলেন। এমন সময় নিজের বোতল থেকে পানি খাওয়ার পর ভিন্ন কিছুর গন্ধ পায় ওই ছাত্রী।

তাৎক্ষণিকভাবে পাশে বসে থাকা বান্ধবীকে বিষয়টি জানায় সে। সন্দেহ হয়, বোতলে কেউ কিছু মিশিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শারীরিক অবনতি হলে স্কুল থেকে ওই ছাত্রীর বাড়িতে খবর পাঠানো হয়। তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, বোতলে মশা মারার ওষুধ মেশানো হয়েছিল।

পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এ ঘটনার পেছনের তথ্য। আরেক শিক্ষার্থী ওই বিষ তার বোতলে মিশিয়েছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আক্রান্ত ছাত্রীও তার সহপাঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। তার দাবি, পরীক্ষায় তার চেয়ে বেশি নম্বর পাওয়ার কারণে সে এ পরিস্থিতির শিকার হয়েছে।

তাকে খুনের পরিকল্পনা করতেই পানির বোতলে মশা মারার ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছে আরেকজন। স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখেছে পুলিশ। সেখানেও ধরা পড়েছে আক্রান্ত ছাত্রীর বোতলে কিছু একটা মেশাচ্ছে আরেক ছাত্রী। পরে তার ব্যাগে বোতলটি ঢুকিয়ে রাখতে দেখা যায়।

এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর অভিযুক্ত ছাত্রী পরের দিন মশার ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তার অবস্থা বর্তমানে আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ভারতের মনস্তাত্তিকরা বলছেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন আমরা ‘ইঁদুর দৌড়ে’ আছি। সেই দৌড়ে সামিল হয়ে ধীরে ধীরে জড়িয়ে ফেলছি আমাদের সন্তানদেরও। ‘তোমাকে ভাল ফল করতেই হবে’, ‘তোমাকে ফার্স্ট হতেই হবে’- এ ধরনের শব্দগুলো শিশুমনে ঢুকিয়ে দিয়ে প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকরা।

পরিবারের লোকজনের কারণে অনেকের মধ্যেই এই ধারণা চলে আসে যে, জয়ী তাকে হতেই হবে; জয়ী না হলে চলবে না। এমনকি গণমাধ্যমেও সে ধরনের কথাই উঠে আসে। বিভিন্ন পণ্যের স্লোগানের সঙ্গেও তেমন কথাই ফলাও করে প্রচার করা হয়।

পরিবারের লোকজনরা কখনও তুলনা করছেন পাশের বাড়ির ছেলে বা মেয়ের ভাল রেজাল্টের উদাহরণ দিয়ে! কিন্তু কখনও ভেবে দেখার ফুসরত হয় না, প্রতিযোগিতায় যদি কোনো ভাবে বিফল হয় সেই অপরিণত মনটি, তার ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে! মধ্যপ্রদেশের এই ঘটনা সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। আনন্দবাজার।