ব্যবসার পরিবেশে পিছিয়েছে বাংলাদেশ : ফোর্বস
ব্যবসা করার পরিবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আদর্শ স্থান নয় বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী বাণিজ্য সাময়িকী ফোর্বস। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘দ্য বেস্ট কান্ট্রিজ ফর বিজনেস-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে ম্যাগাজিনটি।
এতে বলা হয়েছে, ব্যবসার পরিবেশের দিক থেকে বিশ্বের ১৫৩ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৭তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে।
বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে শুধু আফগানিস্তান। যদিও বৈশ্বিকভাবে গত বছর ১৩৯ দেশের মধ্যে ১১৭তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। অর্থাত্ এতে ১৪ নতুন দেশ যুক্ত হলেও বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি হয়নি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবসার পরিবেশে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে আফগানিস্তান। দেশটির অবস্থা ১৫৩ দেশের মধ্যে ১৫০।
এরপর রয়েছে বাংলাদেশ ১১৭তম। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে নেপাল ১০৯তম, ভুটান ১০৩তম, পাকিস্তান ১০২তম, শ্রীলংকা ৭৭তম ও ভারত ৬২তম অবস্থানে রয়েছে।
প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে ১৫টি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি দেশের ব্যবসার পরিবেশ বিশে্লষণ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- সম্পত্তি অর্জনের অধিকার, উদ্ভাবন, করের বোঝা, প্রযুক্তি, দুর্নীতি, অবকাঠামোগত অবস্থা, অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার, রাজনৈতিক ঝুঁকি, জীবনযাত্রার মান, কাজের পরিবেশ, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, বাণিজ্য স্বাধীনতা, আর্থিক স্বাধীনতা, আমলাতানি্ত্রক জটিলতা ও বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা।
এর মধ্যে কমপক্ষে ১১টি তথ্য থাকলে ক্যাটাগরির তথ্য সহজলভ্য হতে হয়। আর এ উপাদানগুলো বিশে্লষণে ফোর্বস ব্যবহার করে বিশ্বের খ্যাতনামা কিছু গবেষণার তথ্য। টানা ১২ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসা পরিবেশ তুলে ধরছে ফোর্বস। প্রতি বছরের ডিসেম্বরে পরবর্তী বছরের জন্য এ সূচক প্রকাশ করে আসছে সাময়িকীটি।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ব্যবসার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিনিয়োগ সুরক্ষা, রাজনৈতিক পরিবেশের স্থিতিশীলতা ও ব্যবসাবান্ধব কর কাঠামো। এছাড়া ঋণের সহজপ্রাপ্তি, সম্পত্তির মালিকানা লাভের প্রক্রিয়া, আধুনিক প্রযুক্তি, নতুন উদ্ভাবন, আমলাতানি্ত্রক জটিলতার অনুপস্থিতি, দুর্নীতি ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এসব মানদণ্ডের কোনোটিতেই ভালো অবস্থানে নেই বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে সাত দশমিক ২ শতাংশ আর মাথাপিছু আয় এক হাজার ৪০০ ডলার। এছাড়া বাণিজ্য ভারসাম্য জিডিপির দশমিক ছয় শতাংশ, সরকারি ঋণ জিডিপির ২৭ শতাংশ, বেকারত্বের হার চার দশমিক ১০ শতাংশ ও মূল্যস্ফীতির হার পঁাচ দশমিক ৭০ শতাংশ।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে ব্যবহূত দুটি মানদণ্ড বাণিজ্য স্বাধীনতা ও আর্থিক স্বাধীনতা পরিমাপে ব্যবহার করা হয়েছে হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের ইনডেক্স অব ইকোনমিক ফ্রিডমের তথ্য। এটি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। দুই মানদণ্ডেই বাংলাদেশের অবস্থান বেশ দুর্বল। বাণিজ্য স্বাধীনতায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯ ও আর্থিক স্বাধীনতায় ১৩৫।
দুই সূচকেই বাংলাদেশ গতবারের চেয়ে পিছিয়েছে। মানদণ্ড দুটির আওতায় আইনের শাসন, সীমাবদ্ধ সরকারি কার্যক্রম, নিয়ন্ত্রণমূলক দক্ষতা ও উন্মুক্ত বাজার বিবেচনা করা হয়েছে। এগুলোর কোনো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ খুব বেশি শক্তিশালী অবস্থানে নেই।
বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস ২০১৮’র তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে করের বোঝা, বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা ও আমলাতানি্ত্রক জটিলতা পরিমাপে। এ তিন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে ১২৩, ৭৪ ও ১১০। এক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়েছে ব্যবসার শুরু, অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি, বিদু্যত্ প্রাপ্যতা, সম্পত্তি নিবন্ধন, ঋণ প্রাপ্যতা, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর পরিশোধ, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তির বাস্তবায়ন ও অসচ্ছলতা দূরীকরণ। এ তিন সূচকেও বাংলাদেশ গতবারের চেয়ে পিছিয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নিয়ে গবেষণাকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ফ্রিডম হাউসের তথ্যের ভিত্তিতে পরিমাপ করা হয়েছে ব্যক্তিস্বাধীনতা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯ দেশের মধ্যে ৯২। এজন্য বিবেচিত রাজনৈতিক অধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতা উভয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিক আংশিক স্বাধীনতা ভোগ করে বলে মনে করে ফ্রিডম হাউস।
উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অবস্থান পরিমাপে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের Èবৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদন’। এ দুই মানদণ্ডে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে ১১৩ ও ১১৯। এক্ষেত্রে উদ্ভাবনী ক্ষমতা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মান, গবেষণা ও উন্নয়নে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ, গবেষণা ও উন্নয়নে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সংযোগ, আধুনিক প্রযুক্তিপণ্য ক্রয়ে সরকারি ব্যয়, বিজ্ঞানী ও প্রকেৌশলী প্রাপ্যতা এবং মেধাস্বত্ব নিবন্ধনের হার বিবেচনা করা হয়েছে। এ দুই সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে।
দুর্নীতির মাত্রা পরিমাপে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ‘দুর্নীতি ধারণা সূচক’ ও সম্পদ অর্জনের অধিকার পরিমাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রোপার্টি রাইটস অ্যালায়েন্সের ‘দ্য প্রোপার্টি রাইটস ইনডেক্স’-এর তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। এ দুই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে ১৩১ ও ১২৪। এর মধ্যে দুর্নীতিতে পেছালেও সম্পদ অর্জনের অধিকারে কিছুটা উন্নতি করেছে বাংলাদেশ।
ফোর্বসের তথ্যমতে, আগামী বছরের জন্য বিশ্বে ব্যবসা করার জন্য উত্কৃষ্ট যুক্তরাজ্য। ব্রেক্সিটের প্রভাবে দেশটি এ বছর তালিকায় শীর্ষস্থানে চলে এসেছে।
শীর্ষ পাঁচে এরপর রয়েছে যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন ও কানাডা। এছাড়া ছয় থেকে ১০ম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে হংকং, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ড।
আর ব্যবসার পরিবেশে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা দেশ হলো চাদ। তালিকার তলানিতে এর পরের দেশগুলো হলো জাম্বিয়া, হাইতি, আফগানিস্তান ও লিবিয়া।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন