ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেননি সালমান এফ রহমান!
চীনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হুরুন গ্লোবাল এর তালিকা অনুযায়ী পৃথিবীর ধনী ব্যক্তিদের একজন হলেও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমানের নিজস্ব কোনো বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট নেই, নেই কোনো আসবাবপত্র ও বৈদেশিক মুদ্রা। এমনকি তিনি ঋণ খেলাপী তো দূরের কথা ব্যাংক থেকে কোনো ঋণই গ্রহণ করেননি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশ নেয়ার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় হলফনামায় এসব উল্লেখ করেছেন তিনি। অথচ হুরুন গ্লোবাল এর তথ্য অনুযায়ী, ২ হাজার ২৫৭ ধনী ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের এই ব্যক্তির অবস্থান ১ হাজার ৬৮৫তম। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা নামেই তিনি বেশি পরিচিত। তার নাম সালমান ফজলুর রহমান হলে সালমান এফ রহমান নামে পরিচিত। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে ঢাকা-১ আসনে নির্বাচন করতে গত ২৭ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
হলফনামা অনুযায়ী, ৩৪ লাখ টাকা মূল্যের যানবাহন রয়েছে তার। তিনি ও তার স্ত্রী কোনো রকম সুদ ছাড়াই আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন কোম্পানিকে ঋণ দিয়েছেন ৩৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা। অতীতে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়নি বলে উল্লেখ করেন সালমান এফ রহমান। যদিও ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে জিএমজি এয়ারলাইন্সে ঋণখেলাপির অভিযোগ থাকলেও সালমান এফ রহমান হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, ‘আমি একক বা যৌথভাবে আমার ওপর নির্ভরশীল কোনো সদস্য অথবা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা ডিরেক্টর হওয়ার সুবাদে আমি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করি নাই।’
হুরুন গ্লোবালের তথ্য অনুযায়ী, সালমান এফ রহমানের সম্পদের পরিমাণ ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৮৯৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। যদিও তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তার নিজ নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৭৮ কোটি ৬০ লাখ ৫ হাজার ৫৬৪ টাকা। তার স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪২ কোটি ৩৭ লাখ ২১ হাজার ৯২৭ টাকা।
হলফনামা অনুযায়ী, আলোচিত ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের বার্ষিক মোট আয় ৯ কোটি ৩৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬২৮ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে আয় দেখানো হয় ৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। যদিও নিজ বা স্ত্রীর নামে কোনো বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট নেই বলে উল্লেখ করেন সালমান এফ রহমান।
ঢাকা-১ আসনে লড়তে মনোনয়ন জমা দেয়া সালমান এফ রহমানের ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখানো হয় ৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া শেয়ার/সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত ডিভিডেন্ট থেকে ৪ কোটি ২৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭৮ টাকা, চাকরি (সম্মানী ভাতা) থেকে ৪১ লাখ ৯২ হাজার ২০০ টাকা, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানির বোনাস শেয়ার ও আইএফআইসি ব্যাংকের বোনাস শেয়ার বাবদ ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫০ টাকা আয় দেখানো হয়। তার ওপর নির্ভরশীলদের কোনো আয় নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন।
হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সালমান এফ রহমানের স্থাবর সম্পদ রয়েছে ২৭৬ কোটি ৪৮ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৪ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে নগদ অর্থ ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার ১২৮ টাকা।
বন্ড/ঋণপত্র/স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার ৭৫ হাজার ও ২৫০ কোটি ৮৪ লাখ ৭৪ হাজার ১৩৬ টাকা। বাস/ট্রাক/মোটরগাড়ি/লঞ্চ/স্টিমার/বিমান ও মোটরসাইকেল ইত্যাদির মূল্য ৩৪ লাখ টাকা, স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলঙ্কারাদি ১৫ লাখ ৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন কোম্পানিকে দেয়া সুদমুক্ত ঋণের পরিমাণ দেখানো হয় ২০ কোটি ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৯৩০ টাকা।
হলফনামা অনুযায়ী, সালমানের স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ রয়েছে ১৩ কোটি ৪৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭০ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে নগদ অর্থ ৬০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থের পরিমাণ ৪৫ লাখ ৫১ হাজার ১০৯ টাকা। স্বর্ণ, অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলঙ্কারাদি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা; আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন কোম্পানিকে দেয়া সুদমুক্ত ঋণের পরিমাণ ১২ কোটি ৯৬ লাখ ৫৫ হাজার ২৬১ টাকা।
মনোনয়নপত্র জমা দেয়া এই প্রার্থীর অস্থাবর সম্পদ ২ কোটি ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৬৬ টাকার। এর মধ্যে রয়েছে অকৃষি জমি ২ কোটি ৩ লাখ ১২ হাজার ৬৮৭ টাকার। এ ছাড়া ৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৭৯ টাকা মূল্যের দালান, আবাসিক/বাণিজ্যিক সম্পদ।
হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সালমান এফ রহমানের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৮ কোটি ৯২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫৭ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৩ হাজার ৭০৮ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি ও বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন বাবদ ২৫ কোটি ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৮৪৯ টাকা।
চলতি বছরের ৩০ জুলাই পর্যন্ত সালমান এফ রহমানের দায়-দেনার মধ্যে রয়েছে ৬৮ কোটি ৫১ লাখ ৫৭ হাজার ২৭০ টাকা ও ১৫ কোটি ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ১৪০ টাকা।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে হলফনামায় কোনো প্রার্থী তথ্য প্রদান না করলে অথবা কোনো অসত্য তথ্য প্রদান করলে বা হলফনামায় উল্লিখিত কোনো তথ্যের সমর্থনে যথাযথ সার্টিফিকেট, দলিল ইত্যাদি দাখিল না করা অপরাধ। এ ক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসার নিজ উদ্যোগে অথবা আদেশের ১৪ অনুচ্ছেদে উল্লিখিত কোনো ব্যক্তির আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে সংক্ষিপ্ত তদন্ত করে মনোনয়নপত্র বাতিল করতে পারবেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন