ব্যাংকের কর নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে সমালোচনার মুখে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকে লেনদেনের বেলায় যে কর হার নির্ধারণ করা হয়েছে সে বিষয়টি যথার্থ উল্লেখ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। শুক্রবার ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রতিমন্ত্রী লেখেন, এর আগে সবধরনের আমানতেই (এমনকি ১০০,০০০ টাকার নিচে আপনার ২০,০০০ হলেও) ৫০০ টাকা শুল্ক ছিল। নতুন প্রস্তাবে ১০০,০০০ টাকার নিচের আমানতে এটা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতকারীর শতকরা ৮০% ভাগের আমানত ১০০,০০০ টাকার নিচে। এটা করাই হয়েছে নিম্নআয়ের এবং মধ্যবিত্তের কথা চিন্তা করে। আর যাদের লক্ষাধিক টাকা সঞ্চয় আছে তাদের ৫০০ টাকার জায়গায় ১০০০ টাকা না দিতে চাওয়ার মানসিকতা পরিহার করা উচিৎ।

প্রতিমন্ত্রীর এই স্ট্যাটাসের পরপরই সমালোচনা করেছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।

প্রতিমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে জামিউল কায়সার সৌমিক নামে একজন লিখেছেন, ‘আপনি ৫০০ টাকার মর্ম বোঝেন? বুঝে সেই ব্যক্তি যে তার মেয়ের বিবাহ দেবে বলে ১ লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমা রেখেছে, ছেলেকে চাকরি নিয়ে দেবে বলে ২ লক্ষ টাকা ব্যাংকে রেখেছে! এমন আধ্যাত্মিক কথা বলবেন না। আপনি ঘুরেন গাড়িতে, আর আমরা ঘুরি পায়ে হেঁটে। ৫০০ টাকা আপনার হাতের ময়লা হলেও আমাদের কাছে বিশাল! ৫০০ টাকা দিয়ে ১৬ কেজি চাল কেনা যায়। কাজেই এ বক্তব্যটা উইড্র করা উচিৎ।

আরিফুল ইসলাম লিখেছেন, এমপি সাহেব! জাতিকে কি দিচ্ছেন এটি একবার মন্ত্রিসভায় আলোচনা করবেন!!! সরকার চাইলে দিতে হবে এ মানসিকতা আমাদের ছিল এবং আছে, কিন্তু জনগণকে দেখার দায়িত্বটাও কি নেবেন না??

তারেকুর রহমান চৌধুরী তারেক বলেন, ‘নতুন করে ব্যাংকে টাকা রাখার ওপর কর বাড়ানো হলো, এটা ব্যতিক্রমধর্মী পশ্চাৎপদসরণ। সার্বিকভাবেই তো আমানতের ওপর সুদ কমছে। ফলে আমানতকারীরা দুভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুদ কমছে, করও বাড়ছে। আমানতকারীরা এখন শঙ্কিত, তারা কোথায় যাবে? এ সিদ্ধান্তটাই আত্মঘাতী?’

ফয়সাল আহমেদ লিখেছেন, আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিগুলো এখন তাদের এফডিয়ার এর টাকাগুলো উঠিয়ে নিয়ে ব্যাংক এ বিনিয়োগ না করে এখন গ্রামের মহাজনদের কাছে বিনিয়োগ করবে এবং মানুষ ব্যাংকে লেনদেন কম করবে তাতে উল্টো সরকারের লস হবে। এটা আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত।

সৌরভ চৌধুরী লিখেছেন, সুনাগরিক হিসেবে আমরা সহনীয় মাত্রায় কর দিতেই চাই। দেইও। কিন্তু হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে যে অল্প ক’জন (ব্যাংক থেকে ঋণ ফেরত না দিয়ে ও বিদেশে পাচার করে), সেই লুটপাটকে ম্যানেজ করতে গিয়ে তার চাপ কেন আমাদের ওপর দেয়া হবে? আমরা আমাদের কর দিতে চাই, কিন্তু ভ্যাট, আবগরি শুল্ক ইত্যাদির নামে, কয়েকজনের লুটপাটের যোগান, করপ্রথার মাধ্যমে, আমরা কেন দেব?

যারা পে-স্কেলের বাইরে তাদের অবস্থা আরও খারাপ। যাদের উপার্জন সামান্য, তাদের অবস্থা খারাপতম।

ব্যাংক হিসাবে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা থাকলে আবগারি শুল্ক বাড়ছে। বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কথা বলেন। এত দিন বছরের যে কোনো সময় ব্যাংক হিসাবে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত থাকলে আবগারি শুল্ক আরোপ করা হতো না। এখন ১ লাখ টাকার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে।

ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত থাকলে আবগারি শুল্ক (এক্সাইজ ডিউটি) দিতে হবে ৮০০ টাকা, যা বর্তমানে রয়েছে ৫০০ টাকা। আর ১০ লাখের ওপর থেকে এক কোটি টাকায় বর্তমানে দেড় হাজার টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। এখন তা বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা করা হয়েছে। এক কোটির ওপর থেকে পাঁচ কোটি রাখার ক্ষেত্রে বর্তমানে আবগারি শুল্ক দিতে হয় বছরে সাড়ে সাত হাজার টাকা। শুল্কহার বাড়ানোয় দিতে হবে ১২ হাজার টাকা। আর পাঁচ কোটি টাকার ওপরে থাকলে এক বছরে আবগারি শুল্ক ১৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে। বছরে একবার এই হার কাটা হবে।