ব্রেস্ট পাম্প কি কেন কিভাবে ব্যবহার করা হয়
কর্মজীবী মায়েরা যখন মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দেন, তখন তাদের প্রধান আশঙ্কার বিষয় বাচ্চার খাবার। কর্মস্থলে থাকার কারণে বাচ্চা দীর্ঘ সময় ধরে মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত হয়। আবার অনেক মায়েরা বুকে দুধ থাকা সত্ত্বেও ফ্ল্যাট নিপলের কারনে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারেন না। ফলে তারা বাধ্য হয়ে বাচ্চাকে ফর্মুলা বা কৌটার দুধ দিয়ে থাকেন।
কিন্তু এসব বিকল্প খাবার কখনই বুকের দুধের সমকক্ষ হতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে বুকের দুধ ছাড়া অন্য দুধ দিলে বাচ্চাদের পেটে গ্যাস, বদহজম, ঘনঘন পায়খানা, পেট ব্যাথাসহ নানা অসুবিধা দেখা দেয়। কর্মজীবী মা হিসেবে আপনি যদি অনাকাঙ্খিত এসব সমস্যা থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখতে চান, তাহলে আপনার জন্য ভাল উপায় হলো বুকের দুধ হাত দিয়ে বা ব্রেস্ট পাম্প দিয়ে বের করে বাচ্চার জন্য রেখে যাওয়া।
আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে ব্রেস্ট পাম্প (স্তন পাম্প) খুবই আলোচিত এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মায়েদের কর্মস্থলে ব্যস্থতা বেড়ে যাওয়ার কারণে এর প্রয়োজনীয়তা দিনদিন বেড়ে চলেছে। প্রাশ্চাত্যে আবার কোনো কোনো দেশে মানুষ অভাবের তাড়নায় কিংবা ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে নিজের বুকের দুধ বিক্রি করে থাকেন, যা প্রায়ই খবরের শিরোনামে আসে।
ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহারের নিয়ম
ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহারের সঠিক নিয়ম না জানার কারণে অনেকের কাছে বিষয়টা অসুবিধাজনক মনে হয়। আবার অনেকে মনে করে বুকে পর্যাপ্ত দুধ নেই তাই পাম্প করলে দুধ আসে না। কেউ কেউ ভাবেন, এভাবে দুধ বের করতে গেলে স্তন ব্যথা হয়ে যায়। আসলে সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করলেই খুব সহজেই ব্রেস্ট পাম্প করে বুকের দুধ সংরক্ষণ করা যায়।
প্রথমত, মা-কে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে। স্তন্যদানকারি মায়েদের নিয়মিত দুধ খাওয়া উচিৎ। পাশাপাশি শাকসবজি , ফলমূল, মাছ, গোশত নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। আর পানি খেতে হবে প্রচুর পরিমানে। প্রতিদিনকার খাবারে কালোজিরা রাখা যেতে পারে। এতে দুধের সরবরাহ ভালো হবে।
দ্বিতীয়ত, সাধারনত বাচ্চাদের দুই-স্তন থেকে অদল বদল করে দুধ খাওয়ানো হয়। যখন ব্রেস্ট পাম্প করতে হবে তার ছয়/আট ঘন্টা আগে থেকে শুধু একটি স্তন থেকে বাচ্চাকে খাওয়ানো হলে অন্য স্তনে দুধ জমে থাকবে। এমতাবস্থায় পাম্প করা হলে দুধ সহজেই আসবে।
তৃতীয়ত, প্রতিদিন একই সময়ে পাম্প করা হলে দুধের ফ্লো সেই সময়ে বেড়ে যাবে। যেমন সময়টা যদি সকাল ৭/৮ টা হয়, তখন সারারাত একটি স্তন থেকে না খাওয়ানোর ফলে সেখানে দুধ জমা হতে থাকে। এমন সময় পাম্প করা হলে দুধ বের হবে। আবার অফিস থেকে ফিরে রাত ৮/৯ টার দিকে আরেকবার পাম্প করা যায়। তখন সারাদিনের দুধ জমে থাকে। এভাবে দু’বারে অনেখানি দুধ বাচ্চার জন্য রেখে যাওয়া সম্ভব হবে।
এছাড়াও ব্রেস্ট পাম্প করার সময় প্রশান্ত মন বেশ দরকারি, কারণ অনেক সময় মানসিক অস্থিরতার কারণে দুধের প্রবাহ কমে যেতে পারে।
দুধ পাম্প করার পদ্ধতি
বাজারে ম্যানুয়াল, অটোমেটিক সহ কয়েকধরণের ব্রেস্ট পাম্প পাওয়া যায়। সাধারণত ভাল মানের ব্রেস্ট পাম্প পছন্দ করা উচিত, কারণ কমদামি পাম্প কাঙ্খিত ফল নাও দিতে পারে।
দুধ সংরক্ষণের পুরো প্রক্রিয়াটিতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিন। হাতের মাধ্যমে দুধ বের করার ক্ষেত্রে দুই হাত উষ্ণ গরম পানিতে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। পাম্প ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফুটন্ত গরম পানিতে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ জীবানুমুক্ত করে নিন। দুধ ফ্রিজিং করার পাত্র বা বোতলটিও একইভাবে জীবানুমুক্ত করুন। মনে রাখুন, প্রতিদিন এই পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আপনি প্রকারান্তরে বাচ্চাকেই সুস্থ রাখার চেষ্টা করছেন।
প্রথমে পাম্পের ফানেলটি আপনার স্তনের সাথে লাগান, যাতে সেটা বায়ুরোধী হয়। এরপর হাতল/লিভারে ধরে চাপ দিয়ে ধরে রাখুন। এভাবে কয়েকবার হাতলে ধরে রেখে ছেড়ে দিন। খুব শীঘ্রই পাম্পের সাথে লাগানো ফিডারে দুধ জমা হওয়া শুরু হবে।
যাদের দুধ আসতে সময় লাগে বা আসে না, তারা পাম্প করার আগে স্তন ম্যাসাজ করে নিন। এরপর পাম্প শুরু করুন, আশা করা যায় দুধ আসা শুরু হবে।
মনে রাখতে হবে, সব মায়ের দুধের সরবরাহ সমান হবে না। মায়ের বুকে দুধের পরিমাণ শারীরিক ফিটনেস, সুস্থতা, খাদ্য, বাচ্চার দুধের চাহিদাসহ অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। তাই ব্রেস্ট পাম্প করার আগে বুঝতে হবে বুকে পর্যাপ্ত দুধ আছে কি না। যাদের বুকে দুধের পরিমাণ কম থাকার কারণে পাম্পে দুধ আসে না, তারা হাতে চেপে দুধ বের করার চেষ্টা করতে পারেন।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাচ্চা দুধ টেনে খেতে পারছে না বা একটি স্তন থেকেই দুধ খাচ্ছে। এরকমটা হলে মায়ের উচিত নিজের স্তনবৃন্তের প্রতি খেয়াল করা। সাধারণত যাদের স্তনবৃন্ত সমতল (Flat Nipple) থাকে, তাদের ক্ষেত্রে বাচ্চারা দুধ খেতে সমস্যায় পড়ে। এরকম সমস্যায় ডাক্তার বা নার্সের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। ডাক্তার/নার্স সিরিঞ্জের মাধ্যমে টেনে স্তনবৃন্ত বের করে আনতে পারে। অনেক সময় বরফ খন্ড চেপে ধরলেও ভাল ফল পাওয়া যায়।
সর্বোপরি ব্রেস্ট পাম্প বা হাতে চেপে দুধ বের করার সময় স্তনে ব্যথা পেলে দুধ বের করা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে আপনি স্তনের সংবেদনশীল টিস্যুর ক্ষতি করে ফেলতে পারেন। এক্ষেত্রে ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন