ভালোবেসে রোহিঙ্গা তরুণীকে বিয়ে করে আত্মগোপনে
ভালোবাসার কাছে দেশ, জাত বা ধর্ম এমনকি রাষ্ট্রিয় বাধা ও কিছুই না এটাই সত্য। যার অসংখ্য নজির রয়েছে পৃথিবীতে। আবারো তেমনি একটি নজির স্থাপন করলেন মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার তরুণ শোয়েব হোসেন জুয়েল।
সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে হাজারও মাইল পাড়ি দিয়ে মানিকগঞ্জের সিংগাইরের চারিগ্রাম এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন রোহিঙ্গা তরুণী রাফিজা বিবি। সেখানে তাকে এক নজর দেখেই ভালো লেগে যায় চারিগ্রাম দাসেরহাটি মালিপাড়া গ্রামের জুয়েলের।
পরে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাফিজা বিবিকে পরিবারসহ টেকনাফের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে যেতে হলেও তাকে ভুলতে পারেননি জুয়েল।
তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে লাখো রোহিঙ্গার মাঝখান থেকেও তিনি খুঁজে বের করেন রাফিজাকে। পরে তার বাবা-মায়ের সম্মতিতে বিয়েও হয় তাদের। কিন্তু সরকারিভাবে রোহিঙ্গা নারীদের বিয়ে করার অনুমতি না থাকায় এখন তাদের বেছে নিতে হয়েছে আত্মগোপনের পথ।
জানা গেছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল রোহিঙ্গা ফয়েজুল ইসলাম ও হাফসা বিবির পরিবার। তাদেরই মেয়ে রাফিজা বিবি (১৮)। মানিকগঞ্জের সিংগাইরের চারিগ্রাম এলাকার স্থানীয় মাওলানা তাজুল ইসলামের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। ওই দিন স্থানীয় অনেকের সঙ্গেই রোহিঙ্গাদের দেখতে তাজুল ইসলামের বাড়িতে এসেছিলেন দাসেরহাটি মালিপাড়া গ্রামের মো. বাবুল হোসেনের ছেলে শোয়েব হোসেন জুয়েল (২৫)। প্রথম দেখাতেই রাফিজা বিবিকে ভালো লেগে যায় ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার মাদ্রাসাশিক্ষক জুয়েলের।
পরদিন প্রশাসনের সহায়তায় রাফিজা বিবির পরিবারকে নিয়ে যাওয়া হয় কুতুপালং ক্যাম্পে। কিন্তু রাফিজা বিবির কথা ভুলতে পারেননি জুয়েল। তাই তিনি ছুটে যান টেকনাফের কুতুপালংয়ে, খুঁজে বের করেন রাফিজাকে। পরে রাফিজার বাবা ফয়েজুল ইসলাম ও মা হাফসা বিবির সম্মতি নিয়ে জুয়েল বিয়ে করেন রাফিজাকে।
জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে যায় সিংগাইর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। ওই দলে ছিলেন জুয়েলের পরিচিত এক শিক্ষক। ২৩ সেপ্টেম্বর যখন ওই দলটি ফিরে আসে, তাদের সঙ্গেই পরিচয় গোপন করে বোরকা পরিয়ে রাফিজাকে নিয়ে রওনা হন জুয়েল। কিন্তু রোহিঙ্গা নারীদের বিয়ে করায় সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আইনি জটিলতার আশঙ্কায় জুয়েল-রাফিজা আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হন।
বুধবার (৪ অক্টোবর) জুয়েলের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বাবা বাবুল হোসেন স্বীকার করেন রোহিঙ্গা তরুণীর সঙ্গে ছেলের বিয়ের কথা।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে অনেক মেধাবী। মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে কয়েক মাস হলো ঢাকার একটি মাদ্রাসায় চাকরি করছে। সেই ছেলে পছন্দ করে বিয়ে করেছে, এতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। বরং আমরা খুশি হয়েছি।’ রাষ্ট্রীয়ভাবে রোহিঙ্গাদের বিয়ের বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার হলে ছেলের বউকে বাড়িতে তুলতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
বাবুল হোসেন আরো বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই আইনি জটিলতার ভয়ে জুয়েল-রাফিজা আত্মগোপনে আছে। ওরা কোথায় আছে, আমি নিজেও জানি না। এর মধ্যে আজ (বুধবার) বাড়িতে পুলিশ এসেছিল জুয়েল-রাফিজার সন্ধানে। তাদেরও জানিয়ে দিয়েছি, বিয়ের পর থেকেই ছেলের সঙ্গে আমার কোরো যোগাযোগ হয়নি।’
এ বিষয়ে সিংগাইর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। তাদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। তবে তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন