ভোট দিতে ঢাকা ছাড়ছেন রাজধানীবাসী
রাজধানীসহ সারাদেশের অলিগলি, পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে সর্বত্রই এখন মূল আলোচনা আসন্ন জাতীয় একাদশ নির্বাচন। চারদিকে ভোটের উৎসবমুখর প্রচারণা। সব দলের প্রার্থীরাই ভোটের মাঠে পার করছেন ব্যস্ত সময়। চলছে প্রার্থীদের পক্ষে গণসংযোগ, মিছিল, মাইকিং, শোডাউনসহ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নিজেকে তুলে ধরা চেষ্টা।
তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর থেকে প্রার্থী ও তার সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ ঢাকামুখী হন কর্মসংস্থান কিংবা নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়। প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাসের এই ঢাকার এক হিসাব মতে, রাজধানীতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ ভাড়াবাসায় অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তাদের সিংহভাগই ভোটার নিজ এলাকায়। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীর অস্থায়ী বাসিন্দারা ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন নিজ এলাকায়। উদ্দেশ্য পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়া।
বুধবার সকালে রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, অন্য স্বাভাবিক দিনের চেয়ে আজ যাত্রীর উপস্থিতি বেশি। চলতি টিকিট কাউন্টারে মানুষের দীর্ঘলাইন। পাশাপাশি অগ্রিম টিকিট দেয়ার স্থলেও মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে অনেকেই অপেক্ষা করছেন কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের জন্য। ট্রেন প্ল্যাটফর্মে পৌঁছানো মাত্রই শুরু হচ্ছে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি।
বিমানবন্দর রেলস্টেশনের অগ্রিম টিকিট কাউন্টারে কর্মরত আলাউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ভোট দেয়ার জন্য মানুষ ট্রেনযোগে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। তবে আগামীকাল ও পরশুদিনের অগ্রিম টিকিটের জন্য মানুষ বেশি ভিড় করছেন।
কাউন্টারের সামনে অগ্রিম টিকিট পাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন মোজাম্মেল হক নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল রাতে রাজশাহীগামী ট্রেনের টিকিট কিনতে এসেছি। পরিবারের আরও দুই সদস্যসহ আমরা রাজশাহী নিজ এলাকায় যাব ভোট দিতে। আসন্ন জাতীয় একাদশ নির্বাচনে আমার ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্যই এতদূর থেকে এত কষ্ট করে বাড়ি যাচ্ছি। একজন নাগরিক হিসেবে ভোট প্রদান করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করা আমার নৈতিক দায়িত্ব।’
প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভোট দেয়ার জন্য বেশিরভাগ মানুষ ঢাকা ছেড়ে নিজ এলাকায় যাচ্ছেন। একই কারণে আজ দিনাজপুর যাওয়ার জন্য অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করলাম। কাল থেকে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। তাই তিনদিন আগেই পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।’
নির্বাচন উপলক্ষে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
ভোটের আগের দিন মধ্যরাত থেকে ভোটের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় সব ধরনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
প্রজ্ঞাপন অনুসারে, ২৯ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ১০ ধরনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। যানবাহনগুলোর মধ্যে রয়েছে বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন যন্ত্রচালিত যানবাহন। এ ছাড়া ২৮ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ১ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
রেলওয়ের বাড়তি নিরাপত্তা
নির্বাচনকালীন যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে ট্রেন চলাচলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বিগত বিভিন্ন সময়ে সহিংসতার কারণে রেলওয়ের ওপর নাশকতা হয়েছিল। বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিহির কান্তি গুহ বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জোনাল-ডিভিশনাল কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে কর্মকর্তারা ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করছেন। যেকোনো বিষয় যেন তারা তাৎক্ষণিক জানিয়ে দিতে পারেন, সে জন্যই কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া পেট্রোলিং ডিউটি থাকছে। পাশাপাশি রাতের প্রতিটি ট্রেনে নিরাপত্তায় ট্রেন ইন্সপেক্টর দায়িত্বে থাকবেন।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন