ভোমরায় চাঁদাবাজির বিরূপ প্রভাব পড়েছে স্থল বন্দরের আমদানি বানিজ্যে।

ওপারে সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজির বিরূপ প্রভাব পড়েছে ভোমরা স্থল বন্দরের আমদানি বানিজ্যে। চাঁদাবাজির কারনে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই ভোমরা বন্দর ত্যাগ করতে শুরু করেছে।

ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় চাঁদাবাজির একটি অংশ চলে আসছে এপারে। চাাঁদাবাজির সেই টাকা সাতক্ষীরা ও ভোমরার সিএন্ডএফ এর দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ, দুই-একজন রাজনৈতিক নেতা ও কোনো কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে বন্টন করার অভিযোগ রয়েছে। ফলে এই চক্রটি দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ঘোজাডাঙ্গার চাাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের সাথে গোপনে হাত মিলিয়েছে। ভোমরার কয়েকজন সিএন্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারক সূত্র থেকে এখবর পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে ভোমরা বন্দরের বিপরীতে ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় শুরু হয় সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি। আর এই চাঁদাবাজির টাকা আমদানিকারকদের হুন্ডির মাধ্যমে ভারতের ঘোজাডাঙ্গার সিন্ডিকেটের কাছে পাঠাতে হয়। নির্ধারিত হারে চাঁদা দিলেই আমদানিজাত পন্যবাহী ট্রাকগুলো এক থেকে দুদিনের মধ্যে ভোমরা বন্দরে প্রবেশের সুযোগ পায়। যেসব আমদানিকারক চাঁদা দিতে ব্যর্থ হয় তাদের পন্যবাহি ট্রাকগুলো ওপারে ৬০ দিন থেকে ৭৫ দিন পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। আমদানিজাত পন্যের প্রকারভেদে ভারতীয় রূপির ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত সিরিয়ালের নামে ট্রাক প্রতি চাঁদা আদায় করা হয়। ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে চিঠি চালাচালি করেও চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে ওপারে সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবীতে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের আহ্বানে তিন দিন ব্যাপী মানববন্ধন ও কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনকালে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। সিরিয়ালের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে তৎকালীন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রামকৃষ্ণ চক্রবর্তীকে আহ্বায়ক করে দশ (১০) সদস্য বিশিষ্ট একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। যার কারনে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে পুনরায় সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি শুরু হলে ব্যবসায়ীদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। যার কারনে বিগত আহ্বায়ক কমিটির চার জন (০৪) সদস্যের যুক্ত সাক্ষরে গত ৩১ মার্চ ঘোজাডাঙ্গা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি-সম্পাদক বরাবর সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য চিঠি পাঠানো হয়। বিগত আহ্বায়ক কমিটি চাঁদাবাজি ঠেকাতে সিরিয়াল বর্হিভূত পন্যবাহি ট্রাক চেকিংয়ের উদ্যোগ নিলে সাতক্ষীরার এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার বাঁধার সম্মুখীন হন। ফলে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি বহুলাংশে বন্ধ করা সম্ভব হলেও পরবর্তীতে আর সম্ভব হয়নি।

এদিকে মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে পাতানো নির্বাচনে দলীয়করনের আশ্বাস দিয়ে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের নয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। ঐ কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের পদ দখল করেন বিএনপিপন্থী দুই (যারা জীবনে নৌকায় ভোট দেয়নি) সিএন্ডএফ এজেন্ট। অবৈধ্য পন্থায় গঠিত বর্তমান ঐ কমিটি ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির রহস্যজনক ভূমিকার কারনে ঘোজাডাঙ্গায় সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। যার কারনে এই কমিটির অভ্যন্তরে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের দুই শীর্ষ নেতা কলকাতায় গিয়ে দুই দফায় বারি বিশ্বাসের সাথে বৈঠক করেছেন। কি উদ্দেশ্যে বারি বিশ্বাসের সাথে তারা বৈঠক করেছেন তা এখনও রহস্যাবৃত। একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রতিদিন বাংলাদেশী আমদানিকারকদের কাছ থেকে ৭০ লাখ থেকে ৮০ লাখ রূপি পর্যন্ত সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। ভারতীয় চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের এদেশীয় এজেন্টের মাধ্যমে দৈনিক মাত্র ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের মাঝে বন্টন করা হয়। যার কারনে এই সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না ।

এব্যাপারে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক হুমায়ন কবির জানিয়েছেন, ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।