ভোলার গ্যাস মূল ভূখণ্ডে আনা হচ্ছে
দক্ষিণের দ্বীপজেলা ভোলায় রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাস দেশের মূল ভূখণ্ডে এনে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সারসংক্ষেপ পাঠানোর আগেই প্রকল্পের মৌলিক কাজ শুরু করা হয়েছে।
প্রকল্পের সারসংক্ষেপ অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে ভোলা থেকে বরিশাল পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে বরিশাল থেকে খুলনা পর্যন্ত আরও ১১০ কিলোমিটার লাইন বসানো হবে। রাষ্ট্রীয় খাতের গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) এই পাইপলাইন বসানোর কাজ করবে। এ জন্য একটি নকশাও প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভোলা থেকে খুলনা পর্যন্ত শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। ফলে জ্বালানি দারিদ্র্যের কারণে অনুন্নত দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ভোলার দুটি ক্ষেত্রে গ্যাসের আনুমানিক মজুত দুই টিসিএফের (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) মতো। এই সম্পদের ওপর ভিত্তি করে ভোলা থেকে খুলনা পর্যন্ত পাইপলাইনের মাধ্যমে কত বছর গ্যাস সরবরাহ করা যাবে, তা এক বিশেষ বিবেচ্য বিষয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, ভোলায় ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস পাওয়া গেছে। সেখানে আরও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই গ্যাস মূল ভূখণ্ডে এনে ব্যবহার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তাতে পিছিয়ে পড়া দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প ও ব্যাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। আবার এই গ্যাস ব্যবহার করে ভোলাতেই অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র (পাওয়ার হাব) তৈরি করে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ আনা যায়। তবে যা-ই করা হোক, দ্রুত এই গ্যাস ব্যবহারের পদক্ষেপ নেওয়া একটি ভালো উদ্যোগ।
বাপেক্সের সূত্র জানায়, বেঙ্গল বেসিনভুক্ত ভোলায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস পাওয়ায় দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে আরও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। শরীয়তপুর ও বরিশালের মুলাদীতে সম্ভাবনাময় দুটি কাঠামো (লিড) দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপে চিহ্নিত করা আছে। এখন সেখানে নিবিড় অনুসন্ধান চালানো হবে। এসব কাঠামোতে গ্যাস পাওয়া গেলে তাও ভোলা-বরিশাল-খুলনা পাইপলাইনে যুক্ত হবে।
ভোলায় গ্যাসের কাঠামো প্রথম চিহ্নিত করে পাকিস্তান শেল অয়েল কোম্পানি, ১৯৫২ সালে। বাপেক্স ১৯৮৬ সালে ভোলায় ২৬৬ লাইন কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের মাধ্যমে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার করে। তখনই ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা ছিল যে ভোলায় আরও গ্যাস আছে। আমেরিকান কোম্পানি ইউনোকল ২০০৩-০৪ সালে পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে ভোলায় অন্তত দুই টিসিএফ গ্যাস থাকার সম্ভাবনার কথা বলেছিল। তারা ভোলার গ্যাস তুলে খুলনা পর্যন্ত সরবরাহ করার ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অনেক দূর এগিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। এরপর বাপেক্স শাহবাজপুর ক্ষেত্রটি উন্নয়ন করে। ২০১৬ সালে তারা পুরো দ্বীপের ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালায়। তাতে যে চিত্র পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতেই মুলাইপতন এবং ভেদুরিয়ায় নতুন অনুসন্ধান কূপ খনন করে গ্যাস পাওয়া যায়। বাণিজ্যিক জ্বালানি ঘাটতিতে জর্জরিত দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই গ্যাসের ব্যবহার ওই অঞ্চলে তো বটেই, জাতীয় অর্থনীতিতেও নতুন ধারা সৃষ্টি করবে।
বিষয়টি সম্পর্কে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, প্রাথমিক প্রাক্কলনে ভোলার দুটি ক্ষেত্রে গ্যাসের যে মজুতের কথা বলা হচ্ছে, সেখানকার প্রকৃত মজুত তার চেয়ে অনেক বেশি। কাজেই পরবর্তী অনুসন্ধানে ভোলা ও সংলগ্ন দ্বীপাঞ্চলে আরও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে এলএনজি থেকেও দক্ষিণাঞ্চল গ্যাসের সরবরাহ পাবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন