কার্গো বাল্কহেডে চাঁদাবাজি!
ভোলায় অদক্ষ লাইনম্যানের জন্য ১সপ্তাহে ৭টি জাহাজ ডুবি
সিলেটের ছাতক বা সুনামগঞ্জ থেকে বালু, পাথর বা অন্যান্য মালামাল নিয়ে হাতিয়া হয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে ভোলার ইলিশা এলাকার মেঘনা নদীতে অদক্ষ লাইনম্যান দেয়ার নামে নীরব চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। অদক্ষ লইনম্যান জোর জবরদস্তি করে দেয়ার কারনে গত একসপ্তাহে হাতিয়ার মোহনায় ৭টি জাহাজ ডুবে গেছে বলে দাবি করা হয়।
ভোলার তুলাতলি মাছঘাটে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন বাংলাদেশ কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের তুলাতলি শাখার সাধারণ সম্পাদক আসলাম গোলদারসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্ধ।
এসময় তারা তাদেরকে এসব জাহাজে লাইনম্যান দেয়ার জন্য একমাত্র ভোলার বৈধ সংগঠন বলে জানান।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, মালামাল নিয়ে কার্গোগুলে ভোলার ইলিশা রাজাপুর এলাকার মেঘনা নদীতে প্রবেশ করলেই ওই এলাকার একটি গ্রæপ ভূইফোর কিছু সংগঠনের নামে লাঠিসোঠা নিয়ে কার্গোতে গিয়ে উঠে এবং নদীপথ চিনিয়ে দেয়ার জন্য লাইনম্যান লোক নিয়োগ দেয়ার জন্য কার্গো স্টাফদেরকে চাপ প্রয়োগ করে। অনভিজ্ঞ এসব লোক হাতিয়া বা চট্টগ্রাম গিয়ে কার্গো থেকে নেমে যাবে এবং ১০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিতে হবে। কোন কার্গোর স্টাফরা এধরণের লোক নিতে না চাইলে মারধর করার অভিযোগও রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা দক্ষ লাইনম্যান দিতে গেলে বা জাহাজ মালিকরা আমাদের কাছে থেকে দক্ষ লাইনম্যান নিতে গেলে তাদেরকে বিভিন্ন জায়গা থেকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। আমরা এবিষয়ে ভোলা পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করে কথা বলেছি। তিনি আমাদেরকে এর একটা সুরাহ করবেন বলে দু-দিনের সময় নিয়েছেন। তবে এসব চাদাবাজদের পক্ষ হয়ে ভোলা সদর থানায় এসআই ইমাম নামে একজন পুলিশ তুলাতুলি এসে আমাকে গালিগালাজ করেন।
ইলিশার লোকজন এসব জাহাজে লাইনম্যান দিবে যতদিন যাবত পুলিশ সুপার সিদ্বান্ত না দেন তা জানিয়ে গেছেন বলেন এমন অভিযোগ করেন তিনি।
সংগঠনের সভাপতি লাল মিয়া মাঝি অভিযোগ করেন, কার্গোগুলোকে নিরাপদে রুট চিনিয়ে দেয়ার নাম করে মূলত নীরব চাদবাজি করা হচ্ছে। গত ৩রা জুলাই এদের দেয়া লোকেরা ভুল পথে নেয়ায় ৪ টি কাল্কহেড ডুবির ঘটনা ঘটেছে। তিনি জানান, এমভি ফাহাদ নামের বাল্কহেডটিতে বুদ্ধি মাঝি, সৈয়দ মিয়ান শাহতে রুবেল মাঝি, এমভি এমরান জোনায়েদ নামের বাল্কহেডটিতে সিরাজ মাঝিকে দেয়া হয়েছিল।
অনভিজ্ঞ এসব লোক ভুলপথে নেয়ার বাক্লহেডগুলো দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ডুবে যায়। এসব কার্গো ডুবির ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও জানান, এসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ৪ঠা জুলাই বাল্কহেড মালিকদের পক্ষে অভিযোগ করা হলে ভোলা সদরের ইলিশা নৌপুলিশ দুজনকে আটক করে। পরে তারা আর জাহাজে গিয়ে চাদাবাজি করবে না বলে মুচলেকা আসে। প্রশাসনের কাছে অনতিবিলম্বে এই চাদাবাজি বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো: হাবিবুর রহমান জানান, আমরা যারা সিলেট থেকে পাথর বা অন্যান্য মালামাল নিয়ে ভোলার মেঘনা হয়ে চট্টগ্রাম যেতে চাই তারা একজন দক্ষ লাইনম্যান নিয়ে চট্টগ্রাম যেতে চাই। কারন আমরা ভোলার এ পথগুলো চিনি না। সেজন্য আমরা জাহাজের পক্ষে একটা টাকা দিতে হয়। ভোলার ইলিশা এলাকায় আসলে আমরা যাদেরকে নিতে চাই না বা যা অদক্ষ এমন কিছু ভূইফোর বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন সংগঠনের পক্ষে আমাদেরকে জোর করে লইনম্যান প্রদান করে। তারা নদীপথ চিনেন না। গত তিনদিনে এমন জবরদস্তির জন্য ৭টি জাহাজ মেঘনা ও হাতিয়া এলাকায় ডুবে যায়। এক ধরনের চাদাবজি চলছে ইলিশায়। কারো কাছে কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা বাংলাদেশ কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের ভোলার তুলাতুলি এলাকার দক্ষ লোক নিতে চাইলে আমাদেরকে বাধা দেয়া হচ্ছে।
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার এর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভয় হয়নি।
এদিকে অপরপক্ষ বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের ভোলা জেলা শাখার উপপরিষদের সভাপতি মো: রোমান পাটোয়ারী সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, আমরা সকল নিয়ম মেনেই লাইনম্যান দিয়ে থাকি। আমাদের কোনো অদক্ষ লইনম্যানের কারনে কোনো জাহাজ ডুবি হয়নি।
উল্লেখ্য, সিলেট থেকে ভোলা হয়ে চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য লাইনম্যান দেয়ার জন্য শ্রমিক সংগঠনের পক্ষে একমাত্র বৈধ সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়ন। তাদের ভোলা জেলা ও ধনিয়া তুলাতুলি কমিটি থাকলেও তাদেরকে লাইনম্যান দেয়ার জন্য বাধা দিচ্ছে এবং ইলিশা এলাকায় লাটিসোটা নিয়ে জাহাজে জোর করে টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের নামে একটি সংগঠন এর বিরুদ্ধে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন