‘ভ্যাকসিন নিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে সরকার’

সরকারের অদুরদর্শিতা ও লুটপাটনীতির কারণেই ভ্যাকসিন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কভিড-১৯ সংক্রান্ত কমিটির আহবায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বিনাভোটের সরকার ক্ষমতায় থাকায় জনগণের প্রতি তাদের ন্যূনতম দায়বদ্ধতা নেই। বিশ্বব্যাপী করোনার প্রার্দুভাবের শুরু থেকেই বাংলাদেশের সরকার চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে।’

বুধবার (৬ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি কর্তৃক গঠিত ‘কভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংক্রান্ত’ কমিটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দাবি করে ড. মোশাররফ বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত রোগীদের শনাক্ত করতে, চিকিৎসা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। মাস্ক কেলেঙ্কারি, পিপিই কেলেঙ্কারি, হাসপাতাল কেলেঙ্কারি, শনাক্তকরণ পরীক্ষা নিয়ে কেলেঙ্কারি, করোনা শনাক্তকরণ জালিয়াতিসহ অসংখ্য জালিয়াতি ও দুর্নীতি উপহার দিয়েছে।

সরকারকে অনতিবিলম্বে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, মূল্য ও সংরক্ষণ এবং বিতরণ ব্যবস্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য জনগণের সামনে উপস্থাপনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিনাভোটের সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বাস্থ্যখাত। তার ওপর দেশে করোনা মহামারির সময়ে তাদের দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে গেছে। এখন করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেছে। সরকার করোনা ভ্যাকসিন পেতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করায় জনগণের দোরগোড়ায় ভ্যাকসিন পৌঁছানো এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’

ড. মোশাররফ বলেন, ‘করোনা ঝুঁকিতে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও এখন পর্যন্ত করোনার ভ্যাকসিন পেতে বাংলাদেশ সরকার ন্যূনতম ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বিশ্বের অনেক দেশে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়ে গেছে বা পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েক প্রকার ভ্যাকসিন যেমন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিন, বায়োটেক/ ফাইজারের ভ্যাকসিন, মর্ডানার ভ্যাকসিন, স্পোটনিক-৫ ভ্যাকসিন, সিনোফার্মা বিবিআইবিপি ভ্যাকসিন ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। অথচ বাংলাদেশে ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে দোলাচল তৈরি হয়েছে।’

সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন ক্রয় করতে গিয়ে সরাসরি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি না করে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে চুক্তি করায় আর্থিকভাবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মাধ্যমে ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের দাম প্রায় দ্বিগুণ পড়বে। যদি কয়েক কোটি ভ্যাকসিন আমদানিও হয় তা সাধারণ মানুষ আদৌ পাবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। করোনা ভ্যাকসিন বিতরণের জন্যও সরকারের প্রস্তাবিত জেলা, উপজেলা কমিটির মাধ্যমে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হলে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের কাছে এই ভ্যাকসিন যথাযথভাবে পৌঁছাবে না।

তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাওয়া জনগণের অধিকার। এই অধিকার থেকে জনগণ যাতে বঞ্চিত না হয় সেজন্য বিএনপি প্রথম থেকেই বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। এই ভ্যাকসিন যাতে জনগণ সঠিকভাবে পায় সেটা অবশ্যই সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ডা. হারুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুস সালাম।