মঠবাড়িয়ায় ৪০ লাখ টাকার রাস্তার কাজের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নয়-ছয়
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের উত্তর সোনাখালী গ্রামের কার্পেটিং রাস্তা থেকে হারুন মেম্বারের বাড়ি অভিমুখী ৫০০ মিটার ইটসোলিং রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার স্টিমেট (প্রাক্কলন) অনুযায়ী বাস্তবে সঠিকভাবে কাজ না করলেও কাগজে কলমে কাজ সঠিক দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল ছাড় দিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন তালুকদার।
একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন বহাল থাকার সুবাদে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি।প্রায় ৫ বছর ধরে একই উপজেলায় চাকরি করলেও রহস্যজনক কারনে তার ক্ষেত্রে অনুপস্থিত বদলি ব্যবস্থার।প্রকল্প থেকে উৎকোচ পাওয়ায় কাজে অসঙ্গতি থাকলেও দেখেও না দেখার ভান করেন তিনি।
জানা গেছে, গ্রামীন মাটির রাস্তা টেকসইকরণ প্রকল্পের আওতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের হেরিং বোন বন্ড প্রকল্পের ৮০ লাখ টাকায় উত্তর সোনাখালী এলাকায় ৫০০ মিটার এবং কালির হাট এলাকায় ৫০০ মিটার মাটির রাস্তা ইটসোলিং করা হয়। এরমধ্যে উত্তর সোনাখালীর রাস্তাটির পাশে মাটি ভরাট না দেওয়ায় দুই পাশের ইট ধসে পড়েছে। এজিংসহ ১০ ফুট চওড়া করার কথা থাকলেও ৯ ফুট করে ৫০০ মিটারের মধ্যেই কাজ শেষ করা হয়েছে।৬ ইঞ্চি বালির পরবর্তী বালি দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩ ইঞ্চি। রোলার দিয়ে হ্যামারিং না করে তড়িঘড়ি করে দায়সারাভাবে কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ১ম লেয়ার ও ২য় লেয়ার ইটসোলিংয়ে পর্যাপ্ত বালি এবং পানি না দেওয়ায় ৬ মাসেই রাস্তার ইট আলগা হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই সময় স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও একটি বিশেষ মহলের হুমকিতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে তারা।ধান ক্ষেত থেকে মাটি না নিয়ে কৃষকরা ধান কাটার পর রাস্তার কাজ করার দাবি জানায়।কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালীন সময়ে রাস্তার পাশে পর্যাপ্ত মাটি না দিয়ে তড়িঘড়ি করে ঠিকাদার কাজ উঠিয়ে নেয়। পিআইও মিলন তালুকদারের গাফিলতির কারনেই ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দের এ রাস্তাটি এখন চলাচলের অনুপযোগী বলে দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হারুন জোমাদ্দার জানান,রাস্তার কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। হেরিং বোনের কাজ শুরুর আগেই এ রাস্তাটিতে এক লাছ ইটসোলিংয়ে ১০ হাজার ইট ছিল।সে পুরনো ইটও ঠিকাদার নতুন কাজে ব্যবহার করেছে।পিআইওকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি।
ইউপি চেয়ারম্যান শারমিন জাহান জানান,পুরনো ইট স্টিমেটে ধরা ছিল না।অথচও রাস্তায় থাকা ইউনিয়ন পরিষদের ইটগুলো আমরা এখন পর্যন্ত বুঝিয়া পাইনি। পিআইও মিলন তালুকদার কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেসমিন কিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান (মিজান কমিশনার) জানান,বিষয়টি নিয়ে আপনারা অফিসে কথা বলেন।তবে কোন অফিসে তা তিনি স্পষ্ট করেননি।
এ ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন তালুকদার জানান, স্টিমেট (প্রাক্কলন) অনুযায়ী কাজ হয়েছে।কাজ তদারকি করে ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল কাইয়ূম জানান, সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।আর পিআইও’র বদলির বিষয়ে তিনি বলেন,সরকারী কর্মকর্তাদের সাধারণত একই কর্মস্থলে ৩ বছর থাকার পরেই স্বাভাবিক নিয়মে বদলি হতে পারে।একই কর্মস্থলে কারো ৪/৫ বছর থাকার বিষয়টি ভিন্ন।
গ্রামিন মাটির রাস্তা সমূহ টেকসইকরণের লক্ষ্যে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস (যুগ্ম সচিব) জানান,খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন