মধ্যরাতে দেশ ছাড়লেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, সঙ্গে গেলেন যারা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের নয় মাস পর দেশ ছাড়লেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

বুধবার (৭ মে) দিনগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশ ছাড়েন।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল সোয়া ১০টায় বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্রটি জানায়, আবদুল হামিদ শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। নিরাপত্তার অভাবের অজুহাতে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেননি। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার রাত ১১টার দিকে সাধারণ যাত্রীবেশে শাহজালাল বিমানবন্দরে যান আবদুল হামিদ। এ সময় তার মুখে মাস্ক ও মাথায় ক্যাপ ছিল। পরে ইমিগ্রেশনের প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে তাকে দেশ ছাড়ার সবুজ সংকেত দেওয়া হয়।

সূত্রটি জানিয়েছে, গতকাল রাত ১১টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান আবদুল হামিদ। সেখানে যাওয়ার পর ইমিগ্রেশনে প্রয়োজনীয় যাচাইবাছাই শেষে দেশ ছাড়ার সবুজ সংকেত পান তিনি। পরে রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের টিজি ৩৪০ নম্বর ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন আবদুল হামিদ।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ইমিগ্রেশন বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বৃহষ্পতিবার সকালে কর্মস্থলে এসে আবদুল হামিদের দেশত্যাগের বিষয়টি জানতে পেরেছি। তিনি বিদেশ যাওয়ার কারণ হিসেবে চিকিৎসার অজুহাত দেখিয়েছেন।

গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের আরও অনেকে আসামি হয়েছেন।

কিন্তু তারপরও কেন আবদুল হামিদকে দেশ থেকে অনুমতি দেওয়া হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে ইমিগ্রেশন পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের মামলার বিষয়টি ইমিগ্রেশন বিভাগ অবগত ছিল। কিন্তু তার বিদেশ সফরের বিষয়ে আদালত বা দুদক থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তাই তার বিদেশযাত্রায় বাধা দেওয়া হয়নি। আর এমনিতেই আবদুল হামিদ শারীরিকভাবে অসুস্থ।

সঙ্গে গেলেন যারা
এদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে তার শ্যালক ডা. নওশাদ খান ও ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ দেশত্যাগ করেছেন। ইত্তেফাক অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ইমিগ্রেশন, এইসএসআইএ শিফট-১ এর বিশেষ পুলিশ সুপার। এ ছাড়া আবদুল হামিদের পারিবারিক সূত্রও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এইসএসআইএ শিফট-১ এর বিশেষ পুলিশ সুপার আরও জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ চিকিৎসার উদ্দেশে ব্যাংককে গিয়েছেন। আমারা তার ভিসা ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেছি।

উল্লেখ্য, আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় তার বিরুদ্ধে এই মামলাটি দায়ের হয়। মামলাটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ওবায়দুল কাদেরের নামও রয়েছে।

আবদুল হামিদ প্রথম মেয়াদে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি।

১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকার দায়িত্ব পালন করেন আবদুল হামিদ। নবম জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসাবে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

সূত্র: জাগো নিউজ, ইত্তেফাক, যুগান্তর