ময়মনসিংহে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে পুকুর, ভেসে গেছে ৭৩ লাখ টাকার মাছ

মাছ চাষে রাষ্ট্রীয় পদক পেয়ে প্রশংসায় ভাসছিলেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরের গ্রামের মাছচাষি যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ। পদক প্রাপ্তির পর থেকে স্থানীয় ভাবে সংবর্ধনা ও সম্মাননা পেয়ে দিনগুলো আনন্দেই কাটছিল এই মাছ চাষির। কিন্তু সেই আনন্দ মুহূর্তেই ম্লান হয়ে যায় আশ্বিনের বর্ষণে।

গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার টানা দুইদিন অতি বৃষ্টিপাতে মাছচাষি যতীন্দ্রের ১৫টি পুকুর পানিতে তলিয়ে যায়। পানিতে ভেসে যায় প্রায় ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির ৭৩ লাখ টাকার মাছ।

জানা গেছে, সংসারে অস্বচ্ছলতার কারণে একসময় খাল-বিলে মাছ ধরতেন যতীন্দ্র। কাঁধে ভার নিয়ে মাছের পোনা বিক্রির পাশাপাশি শ্রমিকের কাজ করেছেন অন্যের পুকুরে।

এভাবেই পাঁচশ টাকা জমিয়ে ১৯৯৫ সালে একটি পুকুর ভাড়া নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। মাছ চাষের আয়ে ২০০৫ সালে বাহাদুরপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন বর্মণ মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র।

মাছের রেণু পোনা উৎপাদনের স্বীকৃতিস্বরুপ গত ২৫ জুলাই জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন জাতীয় মৎস্য পদক ২০২৩।
বর্মণ মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ও হ্যাচারিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুইদিনের বৃষ্টিতে যতীন্দ্রের ১৫ টি পুকুর তলিয়ে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে হ্যাচারির বিভিন্ন প্রজাতির ৪০ লাখ টাকার ধানিপোনা (৮০ লাখ), ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার বড় পোনা(৫ টন), ২৬ লাখ টাকার ব্রুট মাছ (৩টন)।

এদিকে পানিতে পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন যতীন্দ্র। কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার বলছেন আমরা সব শেষ হয়ে গেল, বৃষ্টির পানি আমরা সব শেষ করে দিল।

হ্যাচারির শ্রমিক কালা মিয়া বলেন, বৃষ্টির পানি বাড়ার সাথে সাথে আমরা পুকুরের চারপাশে নেট দিয়ে মাছ আটকানো চেষ্টা করেছি। কিন্ত বৃষ্টির পানির চাপ এতই বেশি ছিলো যে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ বলেন, গত ৫২ বছরে আমরা এতো বৃষ্টির পানি দেখিনি। ব্যাংক লোন নিয়ে হ্যাচারির ব্যবসাটা করছিলাম। কিন্তু অতিবৃষ্টিপাতে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ৭৩ লাখ টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে উঠবো আর লোন কিভাবে পরিশোধ করবো বুঝতে পারছি না।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, অতিবৃষ্টিতে উপজেলার ৭০ ভাগ পুকুর পানিতে তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। আমরা যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ সহ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষিদের ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।