ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ভারতীয় অবৈধ চিনি নিয়ে সংঘর্ষে, আহত -১৩ ও আটক- ১

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শ্যামগঞ্জ বাজারে বুধবার বিকালে ভারতীয় অবৈধ চিনি নিয়ে দুই গ্রামের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১৩জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় আটককৃত বিকাশ সরকারকে বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হয়। এর আগে পূর্বধলা থানার পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

জানা যায়, চোরাই পথে আসা ভারতীয় অবৈধ চিনি বিক্রি নিয়ে উপজেলার নওপাই গ্রামের শামীম ও বেলতলী গ্রামের ফরসালের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ বিরোধের জের ধরে বুধবার দুপুরে প্রথমে বেলতলী গ্রামের রহিমকে ধরে নিয়ে যায় শামীম গ্রুপের লোকজন, পরবর্তীতে নওপাই গ্রামের ইসলাম উদ্দিনের ছেলে বিল্লালকে শ্যামগঞ্জ পশ্চিম বাজার থেকে ধরে নিয়ে যায় বেলতলী গ্রামের ফয়সালের লোকজন। বিকালে উভয়কে ছেড়ে দিলেও চিনি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়।

একপর্যায়ে ফয়সাল গং দেশিয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় শামীম গ্রুপের উপর। এই হামলায় আহতদের মধ্যে হাফেজ জিয়াউর রহমান ডিগ্রী কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াদ (১৯), অটোরিকশা চালক রহমাতুল্লাহ (৩৫) ও পথচারী রুবেলের (২৭) অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এসময় সেনাবাহিনীর অভিযান চালিয়ে শ্যামগঞ্জ বাজারের বাবুল সরকারের দোকান থেকে ১,৮৫০ কেজি ভারতীয় অবৈধ চিনি উদ্ধার এবং ১জনকে আটক করেছে।
শামীম জানান, শ্যামগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী বিকাশ সরকার কাশিগঞ্জ বাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছে ৫০কেজির ১৪ বস্তা চিনি বিক্রি করে। উক্ত চিনি অটোরিকশা যোগে কাশিগঞ্জ যাওয়ার পথে বেলতলী গ্রামের ফয়সাল গং তা লুট করে নিয়ে যায়। পূর্ব পরিচয় সূত্রে বিকাশ সরকার বিষয়টি তাকে (শামীমকে) অবহিত করেন ও চিনি উদ্ধার করে দিতে অনুরোধ জানান। সে (শামীম) ফয়সাল ও তার লোকজনের সাথে এ দিয়ে নানা দেনদরবার করে, কিন্তু ফয়সাল তা ফেরত না দিয়ে উল্টো তাদের উপর হামলা করে।

চিনি লুটের ঘটনা অস্বীকার করে ফয়সাল সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি আমি শামীমের কাছেই প্রথম শুনেছি। উদ্ধারের ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছিলাম, কিন্তু পরে শুনলাম সে আমাকেই দোষারোপ করছে। রহিম নামে আমাদের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ লোককে সে বাজার থেকে ধরে নিয়ে যায়, যার জবাবে আমরা বিল্লালকে এনেছিলাম।

এদিকে খরব পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ শাকিল আহমেদ ও গৌরীপুর অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের মেজর ইশরাক। একপর্যায়ে তাঁরা জানতে পারেন, শ্যামগঞ্জ বাজারে বাবুল সরকার নামে এক ব্যবসায়ীর গোডাউনে এসব অবৈধ চিনি থাকতে পারে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে শ্যামগঞ্জ বাজারে বাবুল ব্রাদার্স এন্ড স্টোরে অভিযান চালান, ইউএনও মোঃ শাকিল আহমেদ ও মেজর ইশরাক।

অভিনব কৌশলে বাবুল স্টোরে ভারতীয় এসব অবৈধ চিনি মাছের খাদ্য সিপি কোম্পানির বস্তায় ভরে লুকিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ১,৮৫০ কেজি ভারতীয় অবৈধ চিনি। এসময় আটক করা হয় বাবুল সরকারের ভাই বিকাশ সরকারকে।

সেনাবাহিনীর অভিযানে শ্যামগঞ্জ বাজারের বাবুল সরকারের দোকান থেকে ১,৮৫০ কেজি ভারতীয় অবৈধ চিনি জব্দ করার বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাকিল আহমেদ বলেন, সুরিকল্পিতভাবে মোড়ক পাল্টে ভারতীয় এসব অবৈধ চিনি দেশের বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযানে একজনকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। দোকানটি সীল গালা করে দেয়া হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মির্জা মাযহারুল আনোয়ার জানান, চিনির গোডাউনটি পূর্বধলা থানার অংশে পড়ায় উদ্ধারকৃত চিনি ও আটককৃত ব্যক্তিকে পূর্বধলায় থানায় নেয়া হয়।

নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রিয়াদ মাহমুদ বলেন, চিনি আটকের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে পূর্বধলা থানার পুলিশ বাদী হয়ে মামলা হয়। বৃহস্পতিবার আটককৃত বিকাশ সরকারকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।