ময়মনসিংহের সোয়াই নদীর অসমাপ্ত অংশ পুনঃখননের দাবিতে গণশুনানি


সোয়াই নদীর অসমাপ্ত অংশ পুনঃখননের দাবিতে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা মহাসড়কের পাশে হাফেজ জিয়াউর রহমান ডিগ্রী কলেজ মাঠে পাউবো নেত্রকোনার আয়োজনে ও সচেতন শ্যামগঞ্জবাসীর সহযোগিতায় এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনার নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাজ্জাদুল হাসান।
এ সময় তিনি বলেন, নদী যে চুরি হতে পারে সেটা এখানে এসে দেখেছি, সেটা কিভাবে হয়েছে সে দিকটাতে যাচ্ছি না। আদালতের সুস্পষ্ঠ নির্দেশনা রয়েছে যে, সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদীটা যাবে। যে কোনো প্রকল্প নিতে গেলে পিজিবিলিটি স্টাডি করতে হয়, এখানে এই পিজিবিলিটি স্টাডিটা কতটুকু হয়েছে?
আজকে যেভাবে একটা গণশুনানি হচ্ছে প্রকল্প গ্রহণের সময় এরকম একটা গণশুনানি হলে আজকের এই হ্যাসেলটা হতো না। আপনারা যারা আন্দোলন করছেন এবং এলাকাবাসী যারা আছেন তারাও আমাদেরকে বিভিন্ন কাগজপত্র দিয়ে এসেছেন। আমরা আসলে স্থানীয় কাস্টমস ও আইন এর বাইরে কিছু করতে পারি না।
নদীর দুই অংশের সংযোগটা সি.এস নকশাতে নেই, সেইটা ব্যক্তির নামে সিএস রেকর্ডভুক্ত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে নির্বাহী প্রকৌশলী বলছেন যে ফর্সাটাতে নাকি লেখা ছেঁড়া। নদীর সম্পূর্ণ অংশ খনন করতে জায়গা লাগে ২ একরের কম।
আপনারা বলেছেন যে সিএস নকশাতে নদীর জন্য ১.৮ একর জায়গা রয়েছে আমরা সেই জায়গাটা ডিমার্গেশন করতে পারি তাহলে নদীর গতিপথের জন্য কারও কাছে রিকুয়েস্ট করতে হয়না। কাগজপত্রের পরও এলাকাবাসীর দাবি ও আইনের মধ্য থেকে নদীর কাজটা করতে হবে। নদীর জায়গাটুকু ডিমার্গেশন ও নদী রক্ষা কমিশনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তাগিধ দেন তিনি।
সচেতন শ্যামগঞ্জবাসীর সদস্য সচিব অর্ক দত্তের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা, সচেতন শ্যামগঞ্জবাসীর আহবায়ক এসএম ঋজু, গোয়ালাকান্দা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সায়েদ আল মামুন শহীদ ফকির, বিএনপি ময়মনসিংহ উত্তর জেলা শাখার সদস্য আনোয়ার খান শুপ্লব, জাতীয়তাবাদী যুবদল পূর্বধলার যুগ্ম আহবায়ক আসাদুজ্জামান ডানো, এনায়েত কবীর, যুবনেতা রফিকুল ইসলাম রফিক।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পূর্বধলা উপজেলার আহবায়ক সালমান রহমান পল্লব, বিএনপি নেতা সোহেল আহমেদ, সচেতন শ্যামগঞ্জবাসীর প্রেস সচিব ইয়াছিন আরাফাত, সমাজসেবক নোমান খান, আনিসুর রহমান, শ্যামগঞ্জ বাজার কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. ইসমাঈল হোসেন প্রমুখ।
সচেতন শ্যামগঞ্জবাসীর আহবায়ক এসএম ঋজু বলেন, তারা যে মালিকানার কাগজপত্র দেখিয়েছে বেশির ভাগ কাগজপত্রেই সমস্যা রয়েছে।
পাউবো নেত্রকোনার নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আমরা যখন সোয়াই নদীর খনন কাজ শুরু করি তখন এই এলাকার একজন লোক নদীর জায়গার মালিকানা দাবি করছে তাকে আমরা একটি নোটিশ পাঠিয়েছিলাম যে, আপনি আপনার কাগজপত্র নিয়ে আমাদের অফিসে আসেন।
আমরা তাদের দেয়া সেই কাগজপত্র বিভিন্ন দপ্তরে যাচাই করতে শুরু করলেও বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানালাম। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা মোতাবেক তৎকালীন এমপি, ডিসি ও ইউএনও’র সাথে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে প্রকল্পটা জরুরীভাবে শেষ করার জন্য জমির মালিককে রাজি করিয়েছিলাম। আমরা এই লক্ষ্যে জায়গাটি পরিদর্শন করেছিলাম এবং একটা সিদ্ধান্ত হয় বৃষ্টির পরে কাজটি দ্রুত করা হবে।
গত বছরের ২০ জুন পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে একটি সার্কুলার জারি হয় যে, যে সব জায়গা ব্যক্তিগত জায়গা ও জমি সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে সেগুলো সমাধান না করে যেন পুনঃখনন না করা হয়। ৫ আগষ্টের পরে পরিস্থিতি ভিন্নদিকে প্রবাহিত হওয়ায় পরে উনার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তখন অন্য কথা বলেন যে আপাতত তিনি সে জায়গাটি দিতে চাচ্ছেন না।
সচেতন শ্যামগঞ্জবাসীর সদস্য সচিব গণশুনানি শেষে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সোয়াই নদীর অসমাপ্ত অংশ পুনঃখননের দাবিতে জনতার শক্তিশালী কণ্ঠস্বর প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। দীর্ঘদিনের অবহেলা ও অযৌক্তিক দেরির পর অবশেষে ঘোষনা এসেছে- আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যেই পুনঃখনন কাজ শুরু হবে।
এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে পাউবো নেত্রকোনার নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা ধরেননি।
উল্লেখ্য যে, সোয়াই নদীর ৪৬ কিলোমিটার পুনঃর্খননের মধ্যে শ্যামগঞ্জ অংশের ৪০০ মিটার নদীর খনন অসম্পন্ন রয়েছে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন