মাতারবাড়ী অঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার আহবান প্রধান উপদেষ্টার

উপকূলীয় অঞ্চলকে দেশের প্রধান উৎপাদন ও রফতানিমুখী মুক্তবাণিজ্য অঞ্চলে রূপান্তরের লক্ষ্যে মাতারবাড়ীর মূল অবকাঠামো দ্রুত উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মাতারবাড়িকে বন্দর, সরবরাহ, উৎপাদন এবং জ্বালানির জন্য দেশের বৃহত্তম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদও দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচি (এমআইডিআই)–এর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন।

মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদসহ সড়ক পরিবহন, নৌপরিবহণ, জ্বালানি, বিদ্যুৎ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। এমআইডিআই সেলের মহাপরিচালক সারোয়ার আলম চলমান প্রকল্পগুলোর একটি বিস্তৃত উপস্থাপনা দেন।

ইউনূস বলেন, আমরা মাতারবাড়ীকে বন্দর, লজিস্টিক, ম্যানুফ্যাকচারিং এবং জ্বালানির জন্য দেশের বৃহত্তম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছি। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যাপক বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে।

তিনি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কথা তুলে ধরে বলেন, বিনিয়োগ আকর্ষণে একটি সুসংহত মাস্টারপ্ল্যান থাকা প্রয়োজন।

প্রধান উপদেষ্টা সড়ক ও নৌপরিবহণ সচিবদের নির্দেশ দেন, যাতে এমআইডিআই অঞ্চলকে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করতে সড়ক নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করা যায় এবং বড় সমুদ্রগামী কন্টেইনার জাহাজ পরিবহণের জন্য সক্ষম টার্মিনাল গড়ে তোলা হয়।

তিনি বলেন, মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল ও সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোতে শ্রমিকদের জন্য কাঙ্ক্ষিত কর্মপরিবেশ গড়তে একটি পরিকল্পিত শহর নির্মাণ জরুরি।

অধ্যাপক ইউনূস আগামী ২৮ মে শুরু হতে যাওয়া জাপান সফরকালে মাতারবাড়ী অঞ্চলকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে তুলে ধরবেন বলে জানান। তিনি টোকিওতে অনুষ্ঠিতব্য ৩০তম ‘নিক্কেই ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং ৩০ মে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মূল প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন নিশ্চিত করার বিষয়টি আলোচনা করবেন।

বৈঠকে জানানো হয়, এমআইডিআই অঞ্চলে জাপানের দ্বিতীয় একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে প্রথম জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়, যা ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করেছে।

এছাড়া সৌদি আরবের পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি আরামকো, আবুধাবি পোর্টস, সৌদি বন্দর অপারেটর রেড সি গেটওয়ে, জাপানি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী জেইআরএ, এবং মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এ অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।

মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সম্প্রতি জাপানের পেন্টা-ওশান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এবং টোয়া করপোরেশন-এর সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। জাইকা-সমর্থিত এই প্রকল্প এমআইডিআই উদ্যোগের মূলভিত্তি হিসেবে বিবেচিত, যা এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাড়াবে।

এমআইডিআই উদ্যোগটি বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে মহেশখালী-মাতারবাড়ী অঞ্চলকে একটি কৌশলগত অর্থনৈতিক করিডরে রূপান্তরের যৌথ প্রচেষ্টা; যা লজিস্টিক, জ্বালানি ও শিল্প উন্নয়নের সমন্বিত পরিকল্পনার অংশ।