মাত্রাতিরিক্ত গরমে নাভিশ্বাস নেত্রকােনার সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষদের

নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলার তাপ প্রবাহে বিপর্যস্ত পাহাড়ি গ্রাামের জনজীবন। পাহাড় ও টিলা অধ্যুষিত এই উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে দুর্গাপুর সদর ইউনিয়ন ও কুল্লাগড়া ইউনিয়ন ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি অঞ্চল। সেখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালি মিলিয়ে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস।

এই পাহাড়ি গ্রামগুলোতে গত চারদিন ধরে বেড়েছে তীব্র গরম। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটও দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্তও হচ্ছে অনেক মানুষ।
এদিকে সেখানকার মানুষের দৈনন্দিন পানি সংগ্রহে যেতে হয় মাইল খানেক দূরে।

সেখানে পাহাড় থেকে নেমে আসা ছড়ার ময়লাযুক্ত ঘোলা পানি, কিংবা টিলার নিচে তিন চাকের (চাক্কি) তৈরি অগভীর কূপের ময়লা পানিই তাদের একমাত্র ভরসা। এমন চিত্রের দেখা মিলবে সীমান্তবর্তী ২০টিরও বেশী পাহাড়ি গ্রামগুলোতে।

শনিবার (১১ মে) সকালে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, সীমান্তবর্তী গ্রাম গুলোতে ধান কাটা চলছে। ধান ক্ষেতে নামতেই ঘেমে যাচ্ছে তাদের শরীর। এরই মধ্যে কিছুক্ষন পরপর গাছের নিচে এসে বিশ্রাম নিচ্ছেন তারা। কাজের ফাঁকে ফাঁকে খেতে হচ্ছে পানি কিন্তু সেই পানি বিশুদ্ধ না।

খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের গোপালপুর, ভবানীপুর, ফান্দা, বারমারী, ভরতপুর, গাজিকোনাসহ ২০-২৫টি পাহাড়ি গ্রামে শুকনো মৌসুমে সাধারণ নলকূপ দিয়ে পানি আসে না। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় ২০-৫০ ফুট নিচে পাথর থাকায় নলকূপ বা বৈদ্যুতিক পাম্প স্থাপন বেশ ব্যয়বহুল।স্থানীয়ভাবে রিং টিউবওয়েল বসানো হলেও শুকনো মৌসুমে আয়রনের কারণে তাও পানের অযোগ্য হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে পান করতে হচ্ছে সেই পানি। এতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে স্থানীয়রা।

ফান্দা গ্রামের মাইকেল সাংমা বলেন, সকাল সকাল বের হয়েছি ধান কাটবো এজন্য কিন্তু বেশি গরমের জন্য বেশিক্ষণ ধান ক্ষেতে থাকা যাচ্ছে না। চারদিন ধরে বেশি গরম পড়েছে। সারাদিন পানি খেয়ে থাকছি কারণ শরীর ক্লান্ত হয়ে যায় আবার যেই পানি খাচ্ছি সেটাও বিশুদ্ধ না। তারপরও খেতেই হবে। আর যে গরম পড়েছে এখুনি পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে এভাবে চলতে থাকলে তো রোগ-বালাই বাড়তেই থাকবে।

দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের বাদাম বাড়ি গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী লেমিতা তাজেল বলেন, এই গরমের মধ্যে পানি সংগ্রহের প্রতিদিন পাহাড়ের নিচে গর্ত থেকে দিনে কয়েকবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। বয়সের ভারে শরীর সায় না দিলেও দিনে কয়েকবার পাহাড় বেয়ে উঠানামা নামতে হয়।

বাংলাদেশ জাতীয় হাজংয়ের সংগঠন সভাপতি পল্টন হাজং বলেন, এই ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও কাজ হয়নি। ফলে অস্বাস্থ্যকর পানি ব্যবহার করার ফলে তারা বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. কাজী আমান উল্লাহ প্রতিবেদককে বলেন, ইতিমধ্যে ওই গ্রামগুলোর বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। পাহাড়ি এলাকায় পানিসংকট নিরসনে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।