‘মানুষের আস্থা আর নির্ভরতার থানা’ বাস্তবায়নে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ওসি
বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সবুজের সমারোহ ও রাজা প্রতাপাদিত্যের আমলের নিদর্শন বিজড়িত প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার, পর্যটন এলাকা খ্যাত পূন্যভূমি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা। নানা কারণে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সাতক্ষীরার মধ্যে এই উপজেলার গুরুত্ব আলাদা। প্রাকৃতিক সম্পদ বিশ্বের সাদা সোনা খ্যাত বাগদা গলদা চিংড়ি ও বসন্তপুর রিভার ড্রাইভ ইকোপার্ক রয়েছে দেশ-বিদেশ খ্যাত পর্যটন কেন্দ্র।
এছাড়াও ভারতের সীমান্তবর্তী জনপদ সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার অবস্থান ভারতের সীমানা ঘেঁষা।
তাছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় দুই দেশের সীমানায় কোথাও নেই প্রাচীর। শুধু আছে ইছামতি ও কালিন্দী নদী। আবার কোথাও কোথাও কাটা তারের বেড়া থাকলেও উভয় দেশের চোরাকারবারিরা অত্যন্ত গোপনে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সাথে মাদক দ্রব্যসহ বিভিন্ন অবৈধ পন্য নিয়ে যাতায়াত করে, এতেই ঘটে বিপত্তি।
সামগ্রিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কালিগঞ্জ উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। সেই কালিগঞ্জ থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে চলতি বছরের ২ মে যোগদান করেন মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা।
ওসি গোলাম মোস্তফা যোগদানের পর থেকেই টনক নড়ে অপরাধীদের। সমাজের সকল ধরনের অপরাধ আর অপরাধীদের ফাগুনের আগুন ঝরানো মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠেন ওসি গোলাম মোস্তফা। বাঘের হিংস্র থাবায় নয়, প্রতিহিংসা ও লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে ভালোবাসা কোমলতা আর কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে পেশাদারিত্ব দায়িত্বের মধ্যে দিয়ে শুরু করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ নানা অনিয়ম অপরাধ নির্মূলের কাজ।
সাধারণ মানুষের আস্থা আর নির্ভরতার থানা বাস্তবায়নে তিনি কাজ করে চলেছেন।
সেটা যে নিজেকে কিছু দিনের জন্য পাবলিসিটি পাওয়ার বা হিরো হওয়ার জন্য তাও নয়। যার প্রমাণ আজ অবধি তাঁর পুলিশের পেশাদারীত্ব কার্যক্রম চলমান ও বিদ্যমান এ ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পাশাপাশি জনগণের প্রতি সুশীল আচরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। পুলিশ সদস্যদের দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছেন। অসহায় হতদরিদ্র নানা সমস্যায় জর্জরিত মানুষের প্রতি খোলা আকাশের নিচে প্রশস্ত হৃদয়ের এক পরশপাথর ওসি গোলাম মোস্তফা।
যেখানে কোন রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পরিচয়ে কোনও অনিয়ম, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। যে কোনও অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া মাত্রই নেওয়া হচ্ছে কঠোর আইনি ব্যবস্থা। অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ওসি গোলাম মোস্তফা স্বপ্রণোদিত হয়ে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন তা এখনও চলমান আছে, ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
রাজনৈতিক পরিচয়ে অপরাধ করার কোনও সুযোগ তার কাছে নেই, দলীয়ভাবে কখনও কোনও অপরাধীকে রক্ষা করার ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার বিন্দুমাত্র সুযোগ ওসি গোলাম মোস্তফা দেন নাই এবং দেবেন না। কারণ পুলিশের কাছে অপরাধীর পরিচয় অপরাধীই। গুটি কয়েক মানুষের অপরাধের জন্য কালিগঞ্জ থানা পুলিশের অনন্য অর্জনগুলো ম্লান হতে দিতে চান না।
থানার অধীনস্থ স্টাফদের প্রতিও তিনি অমায়িক এবং আন্তরিক। তাদেরকে তিনি তার অধীনস্থ ভাবেন না, ভাবেন একজন সহকর্মী, একজন ষ্টাফ, একজন বন্ধু। তাদের কাজে সহযোগিতা ও কাজ বন্টন করে দেওয়া এবং মামলায় জটিলতা সৃষ্টি হলে কৌশলী সুপরামর্শ দিয়ে প্রশংসিত স্টাফদের কাছেও।
আরো জানা যায়, তিনি এইভাবে ধর্ম-বর্ণ, জাত-গোত্র, উচু নিচু, ধনী গরীবের বিবেচনা না করে কেবল মানুষ মানুষের জন্য এমন চিন্তা চেতনায় সর্বসময় বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে ছায়া হয়ে দাড়ানোর পাশাপাশি নিজের সাধ্যর চেয়েও অধিক সহযোগিতা করে এখন ভালোবাসায় সর্বজন প্রিয় ও পরিচিত ওসি গোলাম মোস্তফা।
সরেজমিনে দেখা যায়, থানায় তাঁর কক্ষে অবস্থান নেওয়া মাত্র বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিই প্রমাণ করে উনি কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। সামনে বসা সংবাদকর্মীদের সাথে সাবলীলভাবে হাস্যোজ্জ্বল মুখে কথা বলছেন, বিভিন্ন দপ্তর, উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের এবং মিডিয়াকর্মীদের আশা ফোন অনায়াসে রিসিভ করে অত্যন্ত সুন্দর ভাবে তার জবাব দিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা বিভিন্ন সমস্যা সম্বলিত লোকজনের কথাও শুনছেন এবং স্টাফদের যার যার কাজ ভাগ করে দিয়ে তড়িৎ সমস্যা নিরসনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। উনার টিমওয়ার্ক আর কাজের দক্ষতায় সমস্যা নিয়ে আসা লোকজন হাসিমুখে থানা থেকে বাহির হচ্ছে।
পুরোদমে চলছে আপ্যায়নেরও ব্যবস্থা, চা নাস্তা এবং ছোট বাচ্চাদের চকলেট না খেয়ে বাইরে আসার কোন সুযোগ নেই। বসলে আপনাকে চা খেতেই হবে। এতসবের মধ্যে দিয়ে চলছে বিরামহীনভাবে সবার কাজ। চেহারার মাঝে নেই কোন অবসাদ আর ক্লান্তির চাপ।
কোভিড-১৯ করোনা মহামারীতে বিশ্ব যখন স্তব্ধ ও অসহায়, বাংলাদেশের সকল পুলিশ প্রশাসনের মত কালিগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি গোলাম মোস্তফার ভূমিকা আছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা কোনোভাবেই খাটো চোখে দেখার সুযোগ নেই। তিনি স্বাধীনতার মত, অর্জন ও রক্ষা দুটি ভূমিকাই পালন করেছেন।
করোনাকালীন সময় স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় উদীয়মান শিক্ষার্থীরা অনেকে জড়িয়ে পড়েছিল চোরাকারবারিসহ অসামাজিক কার্যকলাপে। তাদেরকে এই দূর্গম অনিশ্চিত পথ থেকে ফিরিয়ে এনে নতুন ভাবে যাতে এ ধরনের কার্যকলাপে কোন শিক্ষার্থী জড়াতে না পারে তার জন্য উপজেলার প্রতিটা ইউনিয়নে বিট পুলিশিং সভা-সেমিনার আনুষ্ঠানিকতায় যোগদান করে দিয়েছেন কঠিন হুশিয়ারী ও কোমল বাণী। ঘোষণা দিয়েছেন যার যে সমস্যা সরাসরি উনার সাথে যোগাযোগ করার।
এতে করে সামাজিক অবক্ষয়, অপরাধ প্রবনতা যেমন হ্রাস পেয়েছে তেমনি স্বাস্হ্য ঝুঁকি ও কমেছে।
উপজেলায় মাদক, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, জঙ্গি ও সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে বিট পুলিশিং সভা সহ বিভিন্ন কার্যক্রম নিরলসভাবে চালিয়ে যান কালিগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা। ওসি হিসেবে কালিগঞ্জ থানায় যোগদানের পর থেকে বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনার তথ্য উৎঘাটন, উপজেলা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে গুজব প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করেন।
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন জুড়ে গড়ে উঠা বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে টিম ওর্য়াক। এলাকার ছোটখাটো ঘটনা সমুহ থানায় কিংবা আদালতে গড়ানোর আগেই বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হচ্ছে বাদী বিবাদীর সম্মতিতে।
সম্প্রতি মাদক, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধকরণসহ চিহিৃত মাদক চোরাচালানী গ্রেফতার বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারসহ অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য জেলার শ্রেষ্ট অফিসার ইনচার্জ এর পুরুস্কারে ভুষিত হয়েছেন।
ওসি গোলাম মোস্তফা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশিত সেবাকে দ্রুত জনগণের দোঁরগোঁড়ায় পৌঁছে দেন অনন্য কৌশলে। পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশনায় অত্যন্ত সুনামের সাথে সাধারণ মানুষের কাছে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আলোকে সাড়াশি অভিযানের নির্দেশে উপজেলার মাদক ব্যবসা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দমন করা সম্ভব হয়েছে।
ফলে শুরু হয় অপরাধীচক্রের নানা হিসাব-নিকাশ। নানাভাবে চেষ্টা করা হলো উনাকে পথে আনার জন্য, কিন্তু কোন প্রচেষ্টাই কাজে এলো না। একের পর এক ধরাশায়ী হতে থাকলো স্থানীয় মাদক সরবরাহকারীদের অনেকেই। আইনী পদক্ষেপের পাশাপাশি তিনি গড়ে তুলেন সামাজিক জনসচেতনতা। গ্রামের নিরীহ মানুষকে হয়রানি, চাঁদাবাজি দায়িত্ব অবহেলা বন্ধেও কাজ করেন ওসি গোলাম মোস্তফা।
পুলিশের প্রতি অনেকের যে বিরূপ ধারণা ছিল তা বদলে দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। দুষ্টের দমন, শিষ্টের লালন নীতিতে কাজ করে তিনি এখন জনগণের কাছে প্রশংসিত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ওসি গোলাম মোস্তফার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি অভিভূত কিন্তু বিচলিত নই। খারাপ মানুষের কাজই হচ্ছে সমাজকে খারাপের দিকে ধাবিত করা, এরা ভালো মানুষের ও সমাজের ভালো দেখতে পারে না বলেই মিথ্যা মামলার আশ্রয় নেয়। যখন কেউ সমাজের জন্য ভালো কিছু করতে চাইবে, অবশ্যই সে নানা বাধা প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা ও নির্যাতনের শিকার হবে, আমিও তার ব্যতিক্রম নয়। ইতোপূর্বেও আমি সমাজের অপরাধীদের কালো মুখোশ উম্মোচন করতে অনেক বাধা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, শেষমেষ সত্যেরই জয় হয়েছে এবং হবে। তাই বলে আমার কাজ থেমে থাকবে না, আমার কাজই হচ্ছে সমাজের অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনা ও সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখনো সমাজে একটি জিনিস বেঁচে আছে আর সেটা হচ্ছে মানবতা আর এই মানবতা আছে বলেই এখনো আমাদের মত পুলিশ কর্মকর্তারা নির্দ্বিধায় সমাজের জন্য ভালো কিছু করতে পারছে। শুকুনি মামার দলেরা মীরজাফর এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও আমি না হয় পরাজিত সিরাজউদ্দৌলা।’
তিনি বলেন, ‘কে, কী করলো বা বললো পিছনে তাকানোর সময় আমার নেই, তাদেরকে নিয়ে চিন্তা করতে গেলে আমি আমার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো না। আমার প্রত্যাশা কালিগঞ্জ থানাকে বৃহত্তর সাতক্ষীরার মধ্যে একটা উদাহরণ দেওয়ার মতো থানায় পরিণত করতে চাই।’
ওসি গোলাম মোস্তফা আরও বলেন, ‘কালিগঞ্জ উপজেলা বাসির সকল শ্রেণী পেশার মানুষের ভালোবাসার কাছে আমি পরাজিত আমি ঋণী আমি কৃতজ্ঞ। যে ভালবাসায় কোন খাঁদ নেই, নেই কোনো চাওয়া পাওয়া।’
আর এই করোনাভাইরাস এর দ্বিতীয় ধাপ ও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট মোকাবেলায় উপজেলাবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনাদের নিরাপত্তায় আমরা বাইরে আছি, আপনারা ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন