মানুষের আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছে ফেসবুক গ্রুপ ‘ওয়াব’

যাত্রাবাড়ীতে একটি বাসায় গৃহকর্মীকে নির্যাতন করা হচ্ছে। গোপনে ওই ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করে তা ফেসবুক গ্রুপ পেইজে পোস্ট করা হয়। পোস্টটি গোচরে আসলে স্থানীয় থানা পুলিশ সাদিয়া নামের মেয়েটিকে উদ্ধার করে। আটক করা হয় নির্যাতনকারীদের।

উই আর বাংলাদেশ (ওয়াব)’ নামের ওই গ্রুপের এক সদস্য সাদিক-এ-নূর অসহায় ওই গৃহকর্র্মী শিশুকে হাসপাতালে দেখতে যান। শিশুটির শারীরিক অবস্থা তুলে ধরা হলে গ্রুপে যুক্ত চিকিৎসকরা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। শুরু হয় দেখভালের। এক পর্যায়ে মেয়েটি সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয় ওয়াবের সদস্যরা। তারা মেয়েটির দরিদ্র বাবার হাতে যোগাযোগ জন্য একটা মুঠোফোনও তুলে দেন।

নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অপরাধগুলো তুলে ধরে তৎক্ষণাত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০১৮ সালের মার্চে ‘উই আর বাংলাদেশ (ওয়াব)’ নামের ওই ফেসবুক গ্রুপ পেইজটি খুলেছিলেন আলী আকবর। তিনি খুলনা রেঞ্জের একজন পুলিশ সদস্য।

আলী আকবর তার ওই বিশেষ গ্রুপে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ পেশাজীবীদের যুক্ত করেছেন। কোনো অপরাধ ঘটলে তা সংশ্লিষ্টদের সামনে তুলে ধরলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, এমন চিন্তা থেকে আলী আকবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যতিক্রমী এই পেজইট খোলেন বলে জানা গেছে। পেইজটি খোলার পর এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর নজির স্থাপিত হয়েছে।

কাউসার আহমেদ। ওয়াবের একজন মডারেটর। গত ৮ মার্চ তিনি তার এক আত্মীয়র মাধ্যমে জানতে পারেন নারায়ণগঞ্জের চিটাগংরোড এলাকায় একজন ‘বাক প্রতিবন্ধী’ বৃদ্ধাকে পাওয়া গেছে। তিনি আট দিন ধরে একটি পরিবারের জিম্মায় ছিলেন। ওই বৃদ্ধ নারী কোনো কথা বলতে পারেন না। কিন্তু আশ্চর্যজনক হচ্ছে, ওই নারী অনেক চেষ্টা করে কেবল ‘মাতুয়াইল’ শব্দটি একবার উচ্চারণ করতে পারেন।

ওয়াব দল ওই ‘মাতুয়াইল’ শব্দটির সূত্র ধরে এগোতে থাকে। খুঁজতে থাকে ওই নারীর ঠিকানা।
প্রথমে ডেমরা থানায় এ ধরনের কোনো নারী নিখোঁজের জিডি হয়েছে কি-না খোঁজ নেওয়া হয়। কিন্তু কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। থেমে থাকে না ওয়াব। এবার তারা খোঁজ নেন যাত্রাবাড়ী থানায়। সেখানে কর্তব্যরত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, এ ধরনের একটা সাধারণ ডায়েরি ওই থানায় হয়েছে। বর্ণনার সঙ্গে খুঁজে পাওয়া ওই নারীর মিল খুঁজে পান তারা।

পরে যাত্রাবাড়ী জোনের এডিসি ইফতেখারুল ইসলাম এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী ওয়াজেদ আলীর পরামর্শে ওয়াবের একটি দল ওই নারীকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে তুলে দেন।

শুরুটা আলী আকবরের হাত ধরে হলেও গ্রুপের কার্মকা- আরো গতিশীল করে তুলতে বর্তমানে মোট ২৫ জন এডমিন গ্রুপটি পরিচালনা করছেন।

এ ব্যাপারে আলী আকবর বলেন, ‘সব পেশাজীবীদের নিয়ে কাজ করতে এবং সাধারণ মানুষকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতেই গ্রুপটা খোলা হয়েছে। ওয়াব দিনে দিনে মানুষের আস্থার জায়গা হয়ে উঠছে।

কেবল ফেসবুকে গ্রুপে নয়, এরই মধ্যে গ্রুপের কার্মকাণ্ড ছড়িয়ে পড়েছে গ্রুপের বাহিরেও। দেশের ত্রিশটি জেলায় গঠন করা হয়েছে ওয়াবের ৩০টি দল। প্রতিটি দলে ১০ থেকে ১২ জন করে সদস্য রাখা হয়েছে। দল পরিচালনার দায়িত্বে আছেন একজন দলপতি।
এরই মধ্যে ওয়াব সমাজের অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন উপলক্ষে। খুলনা জেলার বয়রা এলাকার ফারুকীয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা ১৬০ জন ছাত্র শিক্ষক ও এতিম শিক্ষার্থীদের ইফতারের আয়োজন করেছিল ওয়াবের খুলনা দল। ২৫ জন এতিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঈদ বস্ত্র বিতরণ করা হয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা ওয়াবের উদ্যোগে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের মাঝে ঈদ উপলক্ষে খাবার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। নারায়ণগঞ্জের বালাপুর মাদ্রাসা এতিমখানায় ৬২ জন ছাত্র শিক্ষক ও এতিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণসহ নানা মানবিক কাজে সক্রিয় আছে।-ঢাকা টাইমসের সৌজন্যে