মালদ্বীপে সরকারি সফর শেষে ফিরলেন সেনাপ্রধান
মালদ্বীপে সরকারি সফর শেষে সোমবার (৭ জুন) সকালে দেশে ফিরেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
মালদ্বীপের চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স মেজর জেনারেল আব্দুল্লাহ শামালের আমন্ত্রণে গত ২ জুন তিনি মালদ্বীপে পৌঁছান। সফরকালে তিনি মালদ্বীপের চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স ছাড়াও মালদ্বীপের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, দেশটির ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
জেনারেল আজিজ আহমেদ মালদ্বীপের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারিয়া আহমেদ দিদি’র সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির পক্ষ হতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। প্রত্যুত্তরে জেনারেল আজিজ আহমেদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সুসম্পর্ক আরও জোরদার করার ব্যাপারে আলোচনা হয়। মারিয়া আহমেদ দিদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে মালদ্বীপে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশটি কীভাবে উপকৃত হতে পারে সেই সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেন।
এছাড়াও মালদ্বীপের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারিয়া আহমেদ দিদি মালদ্বীপের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং উদ্ধার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তা কামনা করেন, যেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতিবাচক অবদান রাখতে সক্ষম।
পরবর্তীতে জেনারেল আজিজ আহমেদ মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দফতরে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স মেজর জেনারেল আব্দুল্লাহ শামাল এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সভায় যোগ দেন। জেনারেল আব্দুল্লাহ শামাল তার আমন্ত্রণ গ্রহণের জন্য সেনাপ্রধানকে ধন্যবাদ জানান।
একই সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদিসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি মেডিকেল দলকে মালদ্বীপে প্রেরণ করায় তিনি জেনারেল আজিজ আহমেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, বর্তমানে মালদ্বীপে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ জনের একটি সেনা মেডিকেল দল করোনার টিকাদান কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান করছে এবং মালদ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশিদের টিকাদান কার্যক্রমে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান এবং মালদ্বীপের চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স বক্তব্য রাখেন। জেনারেল আজিজ আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি অত্যন্ত চৌকস ও পেশাদার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে সেনাবাহিনী কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শুধু দেশ নয় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন ইউএন মিশন এলাকার দেশে এবং কুয়েতের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ দল মালদ্বীপের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে বলে জেনারেল আজিজ আহমেদ মত প্রকাশ করেন। সেনাবাহিনীর একটি বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার পরিদর্শক দলকে প্রয়োজনীয় পূর্ব-মূল্যায়ন সম্পন্নের উদ্দেশ্যে মালদ্বীপে প্রেরণ করতে প্রস্তুত বলেও তিনি জানান।
এছাড়াও সভায় দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন সামরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে মালদ্বীপ ডিফেন্স ফোর্সের সংগঠন ও কার্যক্রম সম্পর্কে জেনারেল আজিজ আহমেদকে একটি ব্রিফিং প্রদান করা হয়।
মালদ্বীপের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স উভয়ই বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ (এএফএমসি) এবং মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিসহ (এমআইএসটি) বিভিন্ন উচ্চতর সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মালদ্বীপের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণে প্রেরণ করার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইতিবাচক সাড়া দেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এর মাধ্যমে দু’দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে তিনি মনে করেন। সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ মালদ্বীপ ডিফেন্স ফোর্সের সঙ্গে কাউন্টার টেরোরিজম বিষয়ক যৌথ অনুশীলন পরিচালনার বিষয়ে আলোচনা করেন, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারতের সঙ্গে পরিচালনা করে আসছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন