মায়ের কারণে প্রতিবন্ধী ছেলে এখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে
জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী এক চীনা তরুণ সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বনামধন্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন । এই অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি পুরো চীন জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
ডিং ডিং নামের ২৯ বছর বয়সী এই তরুণ তার শারীরিক অক্ষমতাকে জয় করে এই একাডেমিক সাফল্যের কারণ হিসেবে তার মা এর দৃঢ়তা এবং অবিরাম নিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেছেন।
১৯৮৮ সালে তার মা এর গর্ভাবস্থাতেই ডিং এর এই জন্মগত জটিলতাটি ধরা পড়ে। তখন হুবেই প্রদেশের চিকিৎসকরা তার মা জৌ হংইয়ারকে পরামর্শ দিয়েছিল শিশুটিকে গর্ভাবস্থাতেই নষ্ট করে ফেলতে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছিল যে, শিশুটি জন্ম নিলেও তা সারা জীবন শারীরিক প্রতিবন্ধী বা কম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বেড়ে উঠবে।
এমনকি ছেলেটির বাবাও ডাক্তারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জৌ কে শিশুটিকে গর্ভাবস্থাতেই নষ্ট করে ফেলতে বলেছিলেন। কারণ তার ধারণা ছিল যে, এই সন্তান সারা জীবন তাদের পরিবারের জন্য একটি বোঝা হয়ে থাকবে। কিন্তু জৌ তাতে রাজি হননি। সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতে তিনি এমনকি তালাকপ্রাপ্ত পর্যন্ত হন।
এরপর পরিবার চালাতে এবং তার পুত্রের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে জৌ একই সঙ্গে একাধিক কাজ করা শুরু করেন। একটি কলেজে একটি পূর্ণকালীন চাকরির পাশাপাশি প্রোটোকল ট্রেডার হিসেবে এবং বীমা বিক্রয়কারীর খন্ডকালীন কাজ শুরু করেন।
এর বাইরে তিনি যখনই সময় পেতেন, ডিং কে নিয়মিত পুনর্বাসন কর্মশালাগুলোতে নিয়ে যেতেন। তিনি নিজেও শিখতে থাকেন কিভাবে ডিং এর শক্ত পেশীকে ম্যাসাজ করতে হবে। জৌ, ডিং এর সঙ্গে বিভিন্ন বুদ্ধিদীপ্ত গেম এবং পাজল খেলতেন।
জৌ শুরু থেকেই জোর দিয়েছিলেন যে, তার ছেলে যেন যতদূর সম্ভব তার প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ডিং এর হাত নাড়া চাড়া করতে সমস্যা হতো এবং তার জন্য চপস্টিক্স ব্যবহার করা কঠিন ছিল। এটা দেখে অনেক আত্মীয় বলতেন যে, খাওয়ার সময় ডিং চপস্টিক্স ব্যবহার করতে অক্ষম। কিন্তু জৌ তাতে দমে যাননি। বরঞ্চ ডিং কে চপস্টিক্স ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর জোর দেন।
জৌ বলেন, আমি কখনোই চাইতাম না এই শারীরিক সমস্যা নিয়ে সে লজ্জিত অনুভব করুক। যেহেতু তার অনেক বিষয়েই দুর্বলতা ছিল তাই সেই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে আমি তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে কড়া শাসনে রাখতাম।
ডিং, পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল ল স্কুল থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেছে এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের আইভি লীগ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত।
ডিং বলেন, তিনি প্রায়ই তার মাকে মিস করেন, তার মা জৌ হুবেই প্রদেশের জিংজুয়ায় বসবাস করছেন। তিনি তার মাকে আধ্যাত্মিক পরামর্শদাতা হিসেবে বর্ণনা করেন।-রাইজিংবিডি
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন