‘মিথ্যা স্বীকারোক্তি নিয়ে গণ-মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সৌদি’

সৌদি আরব এই সপ্তাহে দেশটির ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ গণ-মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু তার অনেক আগে থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন নিজেদের নির্দোষ বলে দাবী করে আসছিল। এসব অভিযুক্ত আসামিকে নির্যাতন করেছিল যারা, তারাই তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী লিখেছে বলে দাবী করা হচ্ছে।

শুক্রবার মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, প্রাণ বাঁচাতে আদালতে আকুল আবেদনের সময় এসব ব্যক্তি বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে নিযুক্ত ব্যক্তিদের হাতে নির্যাতিত হওয়ার প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে।

তবে এসব আবেদন বিচারকদের মতের পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি এবং অভিযুক্তদের সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত অপরাধের দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

মঙ্গলবার রিয়াদ জানায় ৩৭ জন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার সময় তারা শিশু ছিল। একজন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পর তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়, যেন অন্যরা তাকে দেখে সতর্ক হয়।

২০১৬ সালে ওই বিচারকাজ চলার সময় তিনটি মামলা প্রক্রিয়ার কাগজ জোগাড় করেছে সিএনএন। এসব মামলায় যে ২৫ জনের বিচার করা হয়েছে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে এ সপ্তাহে। এদের মধ্যে ১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ইরানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে। অন্য ১৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় ২০১১ সালে শিয়াপ্রধান শহর আওয়ামিয়ায় সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় ‘টেরর সেল বা সন্ত্রাসবাদী দল’ গঠনের দায়ে। এদের বেশিরভাগই সৌদি আরবের সংখ্যালঘু শিয়া।

২০১৭ সালে জাতিসংঘ এই মামলায় স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। তখন সৌদি সরকার এক চিঠিতে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিল, অভিযুক্তরা আদালতেও তাদের স্বীকারোক্তিকে সমর্থন করেছে।

কিন্তু সিএনএনের হাতে থাকা নথিতে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামিয়ার কয়েক জন ব্যক্তি বার বার আদালতে জানিয়েছিলেন, তাদের কাছ থেকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে নির্যাতনের মাধ্যমে।

কয়েকটি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা বলেছেন, নির্যাতকদের লিখে দেয়া ওই সব স্বীকারোক্তিতে তাদের আঙ্গুলের ছাপ ছাড়া আর কিছুই তাদের দেয়া নয়।

‘এগুলো আমার কথা নয়… আমি কোনও চিঠি লিখিনি। এই মিথ্যা নির্যাতনকারী তার নিজ হাতে লিখেছে,’ বলেছিলেন মুনির আল-আদম নামের অভিযুক্ত।

সৌদি আরব এই বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য দেয়নি।

মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে অভিযুক্তদের পরিবারকে খবর দেয়া হয়নি।

সারা বিশ্বের মধ্যে সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার হার অত্যন্ত বেশি। আগে ২০১৬ সালে দেশটিতে ৪৭ জনের গণ-মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। এদের মধ্যে শিয়া ইসলামি চিন্তাবিদ নিমর আল নিমরও ছিলেন।