‘মৃত্যুর’ ৯ বছর পর ফিরলেন তিনি
নয় বছর আগের ঘটনা। অপহরণের পর খুন ও লাশ গুমের অভিযোগে মামলা হয় পাঁচজনের বিরুদ্ধে। এঁদের দুজন মামলার পর থেকেই পলাতক। আর বাকি তিনজন বেশ কয়েকদিন পলাতক ছিলেন। পরে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আসেন ওই তিনজন।
তবে সেই নিখোঁজ ব্যক্তি ফিরে এলেন গতকাল সোমবার। এবার উল্টো ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন ওই মামলার আসামিরা। দাবি করেছেন সুষ্ঠু তদন্তের।
নয় বছর পর ফিরে আসা ওই ব্যক্তির নাম মো. জালাল উদ্দিন। তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার লাকুহাটি গ্রামে। গতকাল সোমবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হন।
এ সময় জালাল উদ্দিন তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে বিচারকের কাছে এক লিখিত আবেদন দেন। সেখানে তিনি জানান, আসামিদের হাতে আটক থাকার সময়ে তাঁকে নিয়মিত নেশাযুক্ত ওষুধ দেওয়া হতো। এ কারণে মানসিক ভারসাম্য ও স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। দীর্ঘদিন অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় ঘুরে বেড়ানোর পর কিছুটা স্মৃতিশক্তি ফিরে এলে বাসায় ফেরেন তিনি।
রাষ্ট্রপক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর এ কে এম আমিনুল হক চুন্নু জানান, জালাল উদ্দিন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার সাক্ষী হিসেবে বিবেচনার জন্য আবেদন করেন। তবে আদালতের বিচারক মো. আবদুর রহমান এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো আদেশ দেননি।
আমিনুল হক চুন্নু বলেন, আসামিদের অত্যাচারে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন জালাল উদ্দিন। তিনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। বর্তমানে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন।
এ ব্যাপারে আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটা মিথ্যা ও সাজানো মামলা। শুধু আসামিদের হয়রানি করার জন্য মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।’
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১০ জুলাই জালাল উদ্দিনকে অপহরণের পর খুনসহ লাশ গুমের অভিযোগে তাঁর স্ত্রী ললিতা বেগম ২০১০ সালের ৩১ মার্চ হোসেনপুর থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন। আসামিরা হচ্ছেন শংকর বাবু, আসাদ মল্লিক, রুহুল আমিন উরফে রঙ্গু, হিরা মিয়া ও আজহারুল ইসলাম। এঁদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার লাকুহাটি গ্রামে।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, শংকর বাবু ও আসাদ মল্লিককে আদম বেপারী এবং বাকি তিনজনকে তাদের সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করেন। চাকরিসহ সৌদি আরব পাঠানোর কথা বলে জালাল উদ্দিনের কাছ থেকে তাঁরা দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে তাঁকে বিদেশে না পাঠিয়ে বিভিন্ন টালবাহানায় ঘুরাতে থাকেন। একপর্যায়ে বিদেশ যাওয়ার কথা বলে জালাল উদ্দিনকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর মামলা করেন তাঁর স্ত্রী।
এদিকে, মামলার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন শংকর বাবু ও মো. আসাদ মল্লিক। আর রুহুল আমিন ও মো. হিরা মিয়া তিন বছর পলাতক ছিলেন। এরপর আদালতে আত্মসমর্পন করে তিন মাস জেল খাটেন ওই দুজন। অপর আসামি আজহারুল ইসলাম আড়াই বছর পলাতক ছিলেন। তিনি হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। তবে বাড়িতে ফেরার পর পুলিশ তাঁকে আটক করে। পরে তিনিও চার মাস জেল খাটেন।
গতকাল সোমবার আদালতে হাজির হন মামলার আসামি হিরা মিয়া, তাঁর ভাতিজা রুহুল আমিন ও ভাগ্নে আজহারুল ইসলাম। তাঁরা বলেন, তাঁরা কৃষিকাজসহ ছোটখাট ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাঁদের হয়রানি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকায় এবং মামলার খরচ জোগাতে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেই সঙ্গে সামাজিকভাবে হেয় ও অপমানিত হয়েছেন। তাঁরা এর সুষ্ঠু বিচার চান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন