মেগা প্রকল্প কি ঢাকার সড়কে বিড়ম্বনার অন্যতম কারণ?
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একসঙ্গে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। শহরের বিশাল অংশ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তাঘাট খুঁড়ে ফেলা হয়েছে।
সরু হয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক। কোন ধরনের আগাম বার্তা অথবা বিকল্প পথ সম্পর্কে পরামর্শ না দিয়েই বিভিন্ন সড়ক বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
যার জন্য ভুগতে হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের।
ঢাকার বনানী এলাকায় একটি বিপনিবিতানে কাজ করেন মিরপুরের বাসিন্দা সিনথিয়া খান।
যানজটের কারণে দিনের একটা বড় অংশ তার বাসে বসেই কেটে যায় বলে বলছিলেন।
তিনি বলছেন, “রাস্তা ব্লক থাকে। সড়কের যায়গা কমে গেছে। গাড়িগুলো ঠিকমতো যেতে পারে না। যার কারণে যানজট লেগেই থাকে। যেমন অফিসে আসতে আমার সময় লাগার কথা বড়জোর আধাঘণ্টা। কিন্তু আমাকে অন্তত বাড়তি আরও দেড় ঘণ্টা হাতে নিয়ে বের হতে হয়। এমনও সময় আছে, বাসেই দুই ঘণ্টা হয়ে যায়।”
এরকম ট্রাফিক জ্যাম ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের নিত্য দিনের সঙ্গী।
তবে ইদানিং ঢাকার চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর কারণে অনেক এলাকায় প্রায়শই হাঁটার গতি আর গাড়ির গতি এক হয়ে যায়।
চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচাইতে বেশি চোখে পড়ছে বিমানবন্দর থেকে আগারগাঁও, ফার্মগেট, শাহবাগ হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার লম্বা মেট্রোরেল।
এই প্রকল্প নির্মাণে পুরো ঢাকা শহরে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির মহাযজ্ঞ।
দূরপাল্লার গাড়িগুলোকে যাতে ঢাকা শহরে ঢুকতে না হয়, সেজন্যে তৈরি হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়ক। তৈরি হচ্ছে নতুন ফ্লাইওভার।
যানবাহন ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এস এম সালেহউদ্দিন বলছেন ঢাকার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর কাজ প্রায় একই সাথে চলমান, যা এখন সড়কে বিড়ম্বনার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করছেন মি. সালেহউদ্দিন।
তিনি বলছেন, “এই কাজগুলোতে রয়েছে সমন্বয়হীনতা আর বিলম্বে শুরু করা। অন্যদিকে আবার মানুষের চলাচলের ডিমান্ড বেড়ে গেছে। সেই পরিমাণ জায়গা শহরে নেই। যখন সরকার দেখল যে আর উপায় নাই তখন যেটা করলো সরকার বড় মেগা স্ট্রাকচারগুলোতে হাত দিলো। যদি সময়মত এগুলোকে পর্যায়ক্রমে করা হতো, সেটা করা হয়নি বিধায় আজ আমাদের এই দুরবস্থা।”
মি. সালেহউদ্দিন আরও বলছেন, এতগুলো প্রকল্প একসাথে শুরু করার কারণে একসঙ্গে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সরু হয়ে গেছে।
কিন্তু উল্টো গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিদিন। তিনি বলছেন, ঢাকা শহরে আর কোন জায়গা অবশিষ্ট নেই।
কিন্তু একই সাথে বিকল্প পথ সম্পর্কে পরামর্শ অথবা কোন ধরনের আগাম সতর্কবার্তা না দিয়ে রাস্তাঘাট-অলিগলি বন্ধ করে দেয়ার ফলে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ঢাকা শহরের বহু বাসিন্দাকে।
যেমনটা বলছেন ঢাকার বেসরকারি একটি ক্লিনিকের নার্স রেবেকা রায়।
তিনি নিজের একটি অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন, “যেমন ধরুন আমাদের অফিসের গাড়িটা হয়ত এক রাস্তায় ঢুকল তারপর দেখা গেলো রাস্তা কাটা। তখন অন্য অলি গলি ঘুরে তারপর হয়ত মেইন রোডে আসতে হয়। রাস্তায় নেমে আমাদের প্রায়ই এরকম বোকা হতে হয়।”
ঢাকা শহরকে যানজট মুক্ত রাখার পরিকল্পনা নিয়েই এসব প্রকল্পের শুরু। এর প্রতিটিই কারিগরি দিক থেকে খুবই জটিল।
যা তাড়াহুড়ো করে শেষ করা খু্ব বিপজ্জনক। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ চলাকালীন একই সঙ্গে নগরবাসীর দুর্ভোগ কি কিছুটা কমানো সম্ভব?
এ প্রসঙ্গে বুয়েটের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আফসানা হক পশ্চিমা বিশ্বে মেট্রো রেলের সংস্কার কাজের উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন।
“যেমন আমি ইউকে’র কথা জানি। (মেট্রো রেলে) কোন কনস্ট্রাকশনের বা সংস্কারের কারণে কাজ করতে হবে। তখন দেখা যায় যারা এই বাহনের ব্যবহারকারী তাদেরকে আগে থেকে নোটিফিকেশন পাঠায়। কাজ শুরুর সাত দিন বা দশ দিন আগে যে স্টেশনগুলো আছে সেখানে বড় বড় বিলবোর্ডের মাধ্যমে জানাতে চেষ্টা করে যে এখানে সার্ভিসটা কখন বন্ধ থাকবে এবং এই সময়টাতে বিকল্প ব্যবস্থা কী আছে সেটিও তারা বলে দিতে থাকেন।”
অধ্যাপক আফসানা হক বলছেন, মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে সরকারিভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নাগরিকদের ইতিমধ্যেই জানানো হয়। সেই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। কোন অ্যাপের মাধ্যমেও সেটি করা যেতে পারে।
সরকারি মালিকানাধীন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড ২২ হাজার কোটি টাকার মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে।
সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলছেন, একবার শহর পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাওয়ার পর এমন নির্মাণ কাজ খুব চ্যালেঞ্জিং।
“হুট করে কোন মেগা প্রজেক্টের কাজ করা হয় না। আমরা প্রধান সার্ভে করেছি ২০টা। তার একটা হল ট্রাফিক সার্ভে। তার ভিত্তিতে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট আমরা তৈরি করেছি। এবং কখন কি কাজ হবে সেটা আমরা স্টেক হোল্ডারদের, অর্থাৎ যারা এই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত চলাচল করে, এই রাস্তার পাশে যাদের অফিস আছে, দোকানপাট করে যারা ব্যবসা পরিচালনা করে তাদের যথেষ্ট আগেই জানিয়ে দেয়া হয়। আমরা কোন রাস্তা হুট করে বন্ধ করি না,” তিনি বলছেন।
বর্তমান সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শেষ করতে চায় অথবা এর দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায়।
উন্নয়নের জন্য কিছুটা ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে ঢাকার বাসিন্দাদের।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন