মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে তারকাদের শোক

নয় মাস লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টা ২৩ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। মৃত্যুকালে এই নগরকর্তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। আনিসুল হকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে তার পরিবার।

আনিসুল হক ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তরের মেয়র; পাশাপাশি তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী, মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকাবাসীসহ শোবিজের তারকাদের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেক তারকাই আনিসুল হকের বেহেশত কামনা করেছেন।

তারকাদের মধ্যে নির্মাতা মোস্তফা সরায়ার ফারুকী লিখেছেন, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় (লন্ডন) ৪টা ২৩ মিনিটে ইন্তেকাল করেন তিনি। এর আগে বেশ কয়েকবার অসুস্থ মেয়রের মৃত্যুর গুজব ওঠে। কিন্তু এবার সত্যি সত্যিই চলে গেলেন ঢাকার এই দাপুটে মেয়র।

প্রবীণ সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী লিখেছেন, তুমি মরোনি ভাই। আমরা প্রাণহীন হয়ে রইলাম। আল্লাহ তোমাকে বেহেশত দান করুক।

চিত্রনায়ক ওমর সানী ফেসবুকে আনিসুল হকের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, জানি না দেশে আনিসুল হকের মতো এমন একজন মানুষ আবার কবে পাওয়া যাবে। দোয়া করছি, আল্লাহ আপনার আত্মার শান্তি দান করুন।

চঞ্চল চৌধুরী শোক জানিয়েছেন বলেছেন, আনিস ভাই, মেনে নেয়া সত্যি কঠিন। এভাবে চলে যাওয়া? কিছু বলার ভাষা নেই। হে মানুষ, চিরশান্তিতে ঘুমান। শুধুই শ্রদ্ধা।

চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী লিখেছেন, তিলোত্তমা এই নগরী তার ক্যারিশমাটিক পিতাকে হারালো। আমরা আপনাকে হারিয়ে শোকাহত। নতুন ঠিকানায় ভালো থাকবেন আপনি। বিনম্র শ্রদ্ধা সুন্দর মানুষ আনিসুল হক।

রেনেসাঁ ব্যান্ডের নকীব খান লিখেছেন, পুরোপুরি শোকাহত। আমাদের সবার প্রিয় আনিসুল হক ভাই আর নেই। ইন্না.. রাজিউন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন, আমিন।

চিত্রনায়িকা পরীমনি তার ফেসবুকে শোক জানিয়ে লিখেছে, মেয়র আনিসুল হক, আপনাকে এত ভালোবাসতাম টের পাইনি আগে।

চিত্রনায়ক রোশান লিখেছেন, আনিসুল হক মারা গেছেন খবরটি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। তার অকালে চলে যাওয়া আমার হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। আল্লাহ ওনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।

অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া লিখেছেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন। ভালো থাকুন প্রিয় আনিসুল হক, ভালো থাকুন পরপারে।

লাক্সতারকা তাসনোভা এলভিন স্ট্যাটাসে বলেন, রেস্ট ইন পিস। ঢাকা উত্তর সি‌টি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

অভিনেত্রী নাবিলা ইসলাম লিখেছেন, না ফেরার দে‌শে চলে গেলেন ঢাকা উত্তর সি‌টি ক‌‌র্পোশ‌নের মেয়র আনিসুল হক। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

গীতিকার ও অভিনেতা মারজুক রাসেল শোক জানিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েন, ‘না ফেরার দেশে’র রাজধানীর নাম কী? উপস্থাপক ও অভিনেতা ইমতু রাতিশ লিখেছেন, প্রিয় আনিসুল হক, অবেলায় চলে গেলেন, খুব কষ্ট পেলাম।

কণ্ঠশিল্পী বেলাল খান শোক প্রকাশ ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, মানুষটার আরও অনেক দিন বেঁচে থাকার প্রয়োজন ছিল। সবদিক দিয়ে এমন পরিপূর্ণ মানুষের এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া মেনে নেয়া যায় না। জানি না, দেশে এমন একজন মানুষ আবার কবে পাওয়া যাবে। আনিসুল হক, দোয়া করছি, আল্লাহ আপনার আত্মার শান্তি দান করুন।

নির্মাতা রেদওয়ান রনি লিখেছেন, কী অদ্ভূত মানুষের জীবন! শ্রদ্ধেয় আনিসুল হক মেয়র আর নেই! ভাবতেই পারছি না।

সঙ্গীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী আনিসুল প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে পুরোনো স্মৃতি হাতড়ে লেখেন, ‘গত বছর কবির বকুল আইসিইউতে। তিনি এলেন মধ্যরাতে। ঢুকে পড়লেন কবির বকুলের কেবিনে। কাচের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে অপলকে তাকিয়ে রইলেন। ঝট করে দরজা খুলে প্রায় অচেতন কবির বকুলের সামনে গিয়ে বললেন- “তোমার কিচ্ছু হবে না- আমরা আছি”। আনিস ভাই- আসলে কি আপনি আজ কোথাও আছেন????’

অভিনেতা-নির্মাতা কচি খন্দকার লিখেছেন, ‘অনেক কথা বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না। প্রিয় আনিসুল হকের কথাটা যদি এমন হতো, মেয়র আনিসুল হক বেঁচে আছেন। প্রিয় আনিস ভাই ভালো থাকবেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন কীভাবে সফল হতে হয়। তাকে নিয়ে অনেক বিভ্রান্ত ছড়িয়েছে, অনেক গুজব ছড়িয়েছে। সবকিছুর অবসান ঘটলো। আমাদের মূল্যবোধের যে ক্ষয় তার অবসান হোক। মানবিক গুণাবলি জেগে উঠুক। তার পরিবারের প্রতি সহনাভূতি থাকলো

অভিনেতা আদনান ফারুক হিল্লোল লিখেন, ‌’আনিসুল হক চলে গিয়ে প্রমাণ করলেন, বাংলাদেশে তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন!’

এছাড়া গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আবদুন নূর তুষার, কণ্ঠশিল্পী তানজিনা রুমা, আখি আলমগির, ফাহমিদা নবী, জয় শাহরিয়ার, বাংলাদেশি মেয়ে মিস আয়ারল্যান্ড মাকসুদা প্রিয়তি, গীতিকার কবির বকুল, অভিনেত্রী মাসুমা নাবিলা ছাড়াও শোবিজের অনেক তারকা আনিসুল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। কেউ কেউ ফেসবুকে আনিসুল হকের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।

আগামী শনিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে লন্ডন থেকে আনিসুল হকের মরদেহ ঢাকায় আনা হবে। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ তার বাসায় নেয়া হবে। ওইদিন বাদ আসর তাকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে মেয়র আনিসুল হক চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবার যুক্তরাজ্যে যান মেয়র আনিসুল হক। অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৩ আগস্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার শরীরে মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত রোগ ‘সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’ শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা। এরপর তাকে দীর্ঘদিন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল।

একপর্যায়ে মেয়রের শারীরিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তার কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র খুলে নেয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার মেয়রের পরিবারের একজন সদস্য বলেন, রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে আবার আইসিইউতে নেয়া হয়। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাতে মেয়রকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।